শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছ! নিঃশব্দে হানা দিচ্ছে গ্লুকোমা, জানুন এই রোগের খুঁটিনাটি

উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ছোট শিশু, মাঝবয়সিরা এমনকী বৃদ্ধদের মধ্যেও গ্লুকোমার প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। গ্লুকোমা আদতে একটি চোখের রোগ। ভারতেও গ্লুকোমায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা আমাদের দেশে ৩,৩০০ জন শিশুর মধ্যে একজন প্রাইমারি কনজেনিটাল গ্লুকোমায় আক্রান্ত।অথচ সঠিক সময়ে ধরা পড়লে সহজেই সেরে ওঠেন রোগী। কিন্তু আক্রান্তদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগীর অনেক দেরিতে ধরা পড়ে গ্লুকোমা। যার ফল হয় মারাত্মক। নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে এই রোগে। চলুন জেনে নিই এই রোগের খুঁটিনাটি তথ্য-

গ্লুকোমা কী?

অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্তের মতে,' আমাদের চোখে এক ধরনের তরল পদার্থ বা অ্যাকুয়াস হিউমর তৈরি হয়। এই তরলের প্রধান কাজ হল চোখের কর্ণিয়া এবং ভিতরকার একাধিক কোষের পুষ্টিসাধন। এটি যে হারে উৎপন্ন হয় সেই হারেই চোখের বাইরেও নির্গত হয়। যদি কোনো কারণে এই তরলের নির্গমণ পথে বাধা সৃষ্টি হয় তবে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে চোখের ভিতর একটি বদ্ধ জায়গায় সেই তরল জমতে শুর করে এবং প্রেশার বা চাপ বাড়াতে শুরু করে। এই অবস্থাকেই গ্লুকোমা বলে'। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চোখের অভ্যন্তরীণ স্বাভাবিক চাপ ১০ মি.মি. মার্কারি থেকে ২১ মি.মি. মার্কারি পর্যন্ত।
এই চাপ বৃদ্ধির কারণে চোখের পিছনদিকে অবস্থিত অপটিক স্নায়ুতেও চাপ পড়ে।ফলে সেটি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে। এ কারণেই দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়ে যায় রোগীর।তবে এমন ঘটনা কখনই একদিনে ঘটা সম্ভব নয়।

কারা আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে?

সাধারণত বয়স্কদের গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী,এই মূহুর্তে ভারতে ১১ মিলিয়নেরও বেশি ৪০ ঊর্ধ্ব মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত। তবে বাচ্চাদেরও গ্লুকোমা হতে পারে। এমনকি জন্মের সময় থেকেই কোনো শিশুর গ্লুকোমা দেখা দিতে পারে। তবে ভারতের জনসংখ্যার ৪.২% শিশুর জন্মগত অন্ধত্বের জন্য দায়ী প্রাথমিক জন্মগত গ্লুকোমা।
এছাড়াও করোনা অতিমারীতে বাচ্চাদের মধ্যে গ্লুকোমার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। অনলাইনে পড়াশুনো, মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা, বাইরে সবুজ মাঠে খেলার সুযোগে কমে যাওয়া — সব মিলিয়ে শিশুদের চোখের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এই দুঃসময়ে।

গ্লুকোমার রকমফের

রোগের উৎপত্তি ও কারণ হিসেবে গ্লুকোমা মূলত দু'রকমের।
• প্রাথমিক গ্লুকোমা
•সেকেন্ডারি গ্লুকোমা

প্রাথমিক গ্লুকোমা: এই ধরনের গ্লুকোমা চোখের মধ্যেকার অংশের বিকাশগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে।এক্ষেত্রে সাধারণত দুটি চোখই গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়।৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলা এবং পুরুষ উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হন।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই রোগ বংশানুক্রমিকভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে। প্রাথমিক গ্লুকোমা মূলত তিন ধরনের।
প্রাথমিক জন্মগত গ্লুকোমা,প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল-খোলা গ্লুকোমা এবং প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল-বন্ধ গ্লুকোমা। এক্ষেত্রে প্রাথমিক জন্মগত গ্লুকোমা জন্মগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে।

সেকেন্ডারি গ্লুকোমা: চোখের বা শরীরের অন্য কোনো রোগে কিছুক্ষেত্রে চোখর চাপ বৃদ্ধি পায়, সেই অবস্থাকেই সেকেন্ডারি গ্লুকোমা বলা হয়। এ ধরনের গ্লুকোমা সাধারণত এক চোখে হয়ে থাকে।

গ্লুকোমার লক্ষণ

চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্তের মতে গ্লুকোমার প্রধান লক্ষণগুলি-

১. দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
২. চোখ থেকে অত্যধিক মাত্রায় জল পড়ে
৩. আলোর দিকে তাকালে চোখে ব্যথা অনুভব করতে পারে শিশু।
৪. চোখের পাতা আটকে যাওয়া, চোখ খুলতে অসুবিধা।
৫. দীর্ঘদিন  যাবৎ কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে বা চোখে কোনও আঘাত পেয়ে থাকলে শিশু গ্লুকোমায় আক্রান্ত হতে পারে।আবার ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হলেও গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
৬.গ্লুকোমা মারাত্মক আকার ধারণ করলে অনেক সময় কর্ণিয়া সাদাও হয়ে যায়।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে চোখের প্রাথমিক সমস্যা ভেবে মানুষ এড়িয়ে যায়। ফলে গ্লুকোমা ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে।

চিকিৎসা

চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্তের কথায়,গ্লুকোমার চিকিৎসা বলতে একমাত্র অপারেশন।অপারেশনের মাধ্যমে তরল নির্গমনের পথে যে বাধা তৈরি হয়েছে তা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

More Articles