আবারও গেরুয়া ঝড় দেখা যাবে রাজ্যে? প্রথম দফার পর অপেক্ষায় গুজরাতবাসী

Gujarat Election 2022 : আজ ছিল প্রথম দফার ভোট গ্রহণ। মোদি ক্যারিশ্মা কি কাজ করবে এবার, প্রশ্ন রাজ্যবাসীর...

টিভির চ্যানেল ঘোরালেই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। পাশাপাশি ২০২২-এর শেষ মাসটিও চলে এল। এতকিছুর মধ্যেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো গণতন্ত্রের দেশে উৎসবের কমতি নেই। এই ভারতে ভোট মানে নানাবিধ ঘটনার ঘনঘটা। নেতাদের হুংকার, শাসক-বিরোধী তরজা, হিংসা, সাধারণ মানুষের দিনযাপন সমস্ত কিছুই উঠে আসে সামনে। আজ, ১ ডিসেম্বর থেকে গুজরাতে সেরকমই উৎসব শুরু হল। শুরু হল গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। বৃহস্পতিবার ছিল তারই প্রথম পর্যায়। মোট ৮৯ টি আসনে ৭৮৮ জন প্রার্থী লড়াইয়ে মুখোমুখি। আগামী ৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ও শেষ পর্যায়ের ভোটগ্রহণ পর্ব হবে।

গুজরাত ভোটের দিকে গোটা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংবাদমাধ্যমের চোখ থাকে। প্রায় দুই দশক ধরে এই রাজ্যের ক্ষমতার আসনে রয়েছে কেন্দ্রীয় শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্যে কেমন ফল করবে বিজেপি, সেদিকে বাড়তি নজর তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে নজর রয়েছে কংগ্রেস ও আপের বিরোধী শিবিরে। নির্বাচনে জিতে কি ফের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন গেরুয়া শিবিরের ভুপেন্দ্র প্যাটেল? নাকি কংগ্রেসের জগদীশ ঠাকুর অথবা আম আদমি পার্টির ইসুদান গাধভি কালো ঘোড়া হয়ে এগিয়ে যাবেন? ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই শক্তি পরীক্ষার দিকেই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল।

 

ভোটের দামামা অবশ্য বেশ কয়েকমাস আগেই বেজে গিয়েছিল। নিজেদের ইস্তেহার প্রচার করতে গুজরাতের রাস্তায় রোবট নামিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে শাসকের ভুলত্রুটি ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে নিজেদের অস্ত্রে শান দিচ্ছিল বিরোধীরা। কেবল মাঠে ময়দানে প্রচার নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আইটি সেলগুলিও ক্রমশ নিজেদের ‘থাবা’ বিস্তার করছিল। এমনিতেই ২০০২-এর স্মৃতি এখনও তাজা দেশবাসীর মনে। তার ওপর ভোটের আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে হিংসার বিচ্ছিন্ন ঘটনা সামনে আসতে থাকে। পাঠকদের হয়তো মনে পড়বে গত শুক্রবার, অর্থাৎ ২৫ নভেম্বরের কথা। গুজরাতে নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হয়ে ফের ২০০২-এর প্রসঙ্গ তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য ছিল, ২০০২ সালে ‘ওরা’ শিক্ষা পেয়েছিল। তারপর থেকেই গুজরাতে শান্তি বজায় আছে। তারপরই রাজনীতির ময়দানে তোলপাড় শুরু হয়। ‘ওরা’ মানে কারা? ২০০২ কি আজও গেরুয়া শিবিরের নির্বাচনী ‘প্রোপাগান্ডা’? বিরোধীদের তরফ থেকে এমন প্রশ্নই বারবার করা হয়েছিল। রাজ্যে সম্ভাব্য হিংসা আটকাতে রীতিমতো আসরে নামে নির্বাচন কমিশন। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্ট, ছবি, ভিডিওর ওপরও শুরু হয়েছে নজরদারি।

এতকিছুর মধ্যেই শুরু হয়েছে গুজরাত নির্বাচন। তবে নির্বাচনের প্রাক্কালে অন্য মাত্রা যোগ করেছেন জাতীয় কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। গুজরাটে ভোট প্রচারের শেষ লগ্নে তিনি নরেন্দ্র মোদিকে ‘রাবণ’ বলে বিতর্কের নয়া রাস্তা তৈরি করে দেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “আপনি সব জায়গায় বলেন আপনাকে দেখেই ভোট দিতে। মানুষ কতবার আপনার মুখ দেখবে? রাবণের মতো মাথা নাকি?” আক্রমণের রশি টেনে ধরতে এতটুকুও দেরি করেনি বিজেপি। বৃহস্পতিবার যখন ভাবনগর, জামনগর, মোরবি, দ্বারকা, কচ্ছ, সৌরাষ্ট্র ইত্যাদি জায়গায় ভোটগ্রহণ চলছে, তখন কালোলে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের জন্য জনসভা করছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে কংগ্রেসকে আক্রমণ করার মূল রাস্তাই ছিল মল্লিকার্জুন খাড়্গের মন্তব্য। মোদি নিজের স্বভাবজাত ভঙ্গিতেই বলেন, “আমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে কংগ্রেস নেতারা। পদ্মে ছাপ দিয়ে আপনারাই এর জবাব দিয়ে দিন।”

আরও পড়ুন : আবারও নির্বাচনের দামামা, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেমন লড়ছে বিজেপি থেকে বিরোধীরা

এছাড়াও মনে রাখতে হবে মোরবি সেতুর ঘটনা। মাচ্ছু নদীর ওপর থাকা এই ব্রিজটি চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর ভেঙে পড়ে। সেই সময় ব্রিজের ওপর অনেকেই ছিলেন। এই ঘটনায় অন্তত ১৩৫ জন মারা গিয়েছিলেন। আহতের সংখ্যা আরও অনেক। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় মুখ পুড়েছিল গুজরাট প্রশাসনের। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এলেও সেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। তাই বিজেপি বিরোধী একটা হাওয়াও গুজরাতের অন্দরে খেলা করছে। কাজেই ফের ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবে বিজেপিও।

এতকিছুর মধ্যেই ঘটনার ঘনঘটায় এগিয়ে যাচ্ছে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি আর আপের লড়াইয়ের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন অনেকে। দিল্লির পর পাঞ্জাব বিধানসভায় জায়গা করে নেওয়ার পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের পালে হাওয়া লেগেছে। উপরন্তু, বিজেপির মতোই কংগ্রেসমুক্ত ভারতের অঙ্গীকার নিয়েই নিজের যাত্রা শুরু করেছিল আপ। গুজরাত ভোটে সেই বিজেপি আর আপের লড়াই অন্যতম বিষয় হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অবশ্য হিংসার রেশ প্রথম পর্বের ভোটে দেখা গিয়েছে। ভনসদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পীযূষ প্যাটেলের ওপর হামলার অভিযোগ সামনে আসে। তাঁর গাড়ির ওপর কয়েকজন আক্রমণ চালায়। গাড়ির কাচ ভাঙার পাশাপাশি পীযূষ প্যাটেলের মাথাও ফেটে যায় বলে অভিযোগ। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই কাজ করেছে। এদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট হওয়ার পর ইভিএমের সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন গুজরাত পুলিসের হোমগার্ডরা। বিরোধীদের দাবি, এসব আইনবিরুদ্ধ। অথচ কিছুই করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন : হোয়াটসঅ্যাপে হম্বিতম্বি বিধানসভায় দিশেহারা, কেন নেতৃত্বহীন বঙ্গ বিজেপি?

এর পাশাপাশি আপের বিরুদ্ধেও নতুন অভিযোগ এনেছে বিজেপি। গুজরাত নির্বাচন ইতিমধ্যেই এই দু’টি দলের সম্মুখ সমরের জেরে উত্তপ্ত। তারইমধ্যে অভিযোগ, গ্রামে গঞ্জে মানুষদের মধ্যে মদ বিলি করছে আপ। বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও ক্লিপিং শেয়ার করেছেন। সেখানে আপ বিধায়ক ও নেতা সৌরভ ভরদ্বাজকে দেখা যাচ্ছে। তিনিই গ্রামবাসীদের ‘মদ বিলির’ কথা বলছেন। এও বলছেন, এই সম্পর্কে পুলিস ও নির্বাচন কমিশনকে কিছু জানানো হবে না। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। শেহজাদ পুনাওয়ালার দাবি, আপ নেতা গুজরাতের গ্রামবাসীদের মদ্যপ বলে মনে করছেন। সেটা গুজরাতের অপমান। 

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই চলছে গুজরাতের ভোটগ্রহণ পর্ব। বিকেল ৫টার হিসেব অনুযায়ী, প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৬.৮৮ শতাংশ। অন্যদিকে চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রচারপর্ব। গুজরাতের রঙ আবার গেরুয়া হবে, নাকি পরিবর্তন ঝড় তুলবে মোদির রাজ্যে, তা তো সময়ই বলবে। আগামী ৮ ডিসেম্বর ভোট গণনার দিন। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে আম জনতা।

More Articles