ডাইনোসরদের চেয়ে ভয়াবহ? এককালে পৃথিবী দাপাত এই ৯০০ কেজির নরকের শুয়োর

Hell Pigs Prehistoric Animals : নরকের শূকর ছিল ভয়ঙ্কর বিশালাকার। অনুমান করা হয়, ডেডনের ওজন ছিল ৯০০ কিলোগ্রাম। দেখতে খানিক বাদামী ভালুকের মতোই।

প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের মধ্যে কি ডাইনোসরই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর? এমন বিশালদেহী, ভয়ানকদর্শন প্রাণী ডাইনোসর ছাড়া সেই যুগে কি আর ছিল? ছিল। প্রকৃতি আরও ভয়ঙ্কর সব প্রাণী সৃষ্টি করেছে। কিছু প্রাণী ভিন্নরূপে বিবর্তিত হয়ে আজও রয়েছে। এমনই এক প্রাণী হেল পিগ! বাংলা করলে দাঁড়ায় নরকের শুয়োর। নামের ভয়াবহতা আক্ষরিক অর্থেই লুকিয়েছিল এই প্রাণীর চেহারায়।

নরকের শূকর আসলে কী?

'হেল পিগ' আসলে কেবল একটি প্রজাতি নয়। এন্টেলোডোন্টাইডে (Entelodontidae)-পরিবারের অন্তর্গত বেশ কয়েকটি প্রজাতিকেই ডাকা হয় হেল পিগ নামে। নামে শুয়োর হলেও তারা আসলে ঠিক ততটা শুয়োর নয়। সত্যিকারের শূকর সুইডে নামে পরিচিত একটি পৃথক পরিবারের অন্তর্গত। নরকের শূকর দেখতেও ঠিক শূকরের মতো না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, নরকের শূকরের সঙ্গে সত্যিকারের শূকরের মিল কম। বরং এই হেল পিগদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে হিপ্পো এবং সিটাসিয়ানদের।

বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় এন্টেলডোন্টরা ৩৮ মিলিয়ন বছর থেকে ১৯ মিলিয়ন বছর আগে বসবাস করত বলে মনে করা হয়। জীবাশ্ম প্রমাণ বলছে মূলত উত্তর গোলার্ধ জুড়েই পাওয়া যেতে এদের। বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একটি আন্দাজে পৌঁছেছেন এই হেল পিগসরা কবে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে, কেন বিলুপ্তি ঘটেছিল তা আজও অজানাই।

আরও পড়ুন- হাতির থেকে আকারে বহুগুণ বড়! ম্যামথ ছানার দেহ নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব

নরকের শূকররা দেখতে কেমন ছিল?

নামের সঙ্গে চেহারার আশ্চর্য মিল! নরকের শূকরদের চেহারা মোটেই সুখকর ছিল না। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এরা সম্ভবত শূকরের মতো দেখতেও ছিল না। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি ছিল, লম্বা মুখ আর মাথার খুলিটিও বেশ বড়। ডেডন প্রজাতির মাথার খুলি ছিল প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার (৩৫ ইঞ্চি) লম্বা। এন্টেলডন্টদেরও নীচের চোয়াল থেকে হাড়ের বৃদ্ধি দেখে যেত এবং মুখের ভিতরে বড় ইনসাইজর এবং ক্যানাইন ছিল - অনেকটা আধুনিক মাংসাশী প্রাণীদের মতোই।

কিছু নরকের শূকর ছিল ভয়ঙ্কর বিশালাকার। অনুমান করা হয়, ডেডনের ওজন ছিল ৯০০ কিলোগ্রাম। দেখতে খানিক বাদামী ভালুকের মতোই। অথচ ভালুক এন্টেলডোন্টের তুলনায় অনেক বেশি বন্ধু প্রকৃতির ও স্বাভাবিক আকৃতির। তবে এই হেল পিগ গোষ্ঠীর কিছু সদস্য খানিক ছোটও ছিল। সবচেয়ে ছোট নরকের শূকরের ওজন ছিল প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম।

আরও পড়ুন- চাইলেও মৃত্যু হয় না কখনও, পৃথিবী হোক বা মহাকাশ, সর্বত্র কার্যত অমর এই আণুবীক্ষণিক জীব

কতটা 'নারকীয়' ছিল এই প্রাণী?

চেহারায় যতটা বিশাল, আগ্রাসনেও ততটাই উগ্র। গবেষণা বলছে, এন্টেলডোন্টরা বিশাল তৃণভোজী প্রাণীদের শিকার করত। হায়েনাদের মতোই ছিল ধারালো দাঁত যাতে এই বিশাল প্রাণীদের শক্ত হাড়গুলিও সহজে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়।

গবেষণায় এন্টেলোডন ম্যাগনাসের দাঁতের মাইক্রোওয়্যার প্যাটার্ন পরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিকভাবে এই প্রজাতিটি ইউরোপে পাওয়া যেত। খানিক বন্য শুয়োরের মতোই এরা, সর্বভুক। শিকড় এবং ফল খেতেও পারে তবে মাংসের ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার নেই। এন্টেলোডন্টের মাথার খুলির বিশ্লেষণে কামড়ের চিহ্নের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্ভবত অন্যান্য এন্টেলডোন্টরাই কামড়ে ফেলত একে অন্যকে। এলাকা দখল বা খাবারের মতো বিষয় নিয়ে একে অপরের সঙ্গে মারামারি করত এই হেল পিগরা। তবে হ্যাঁ, এই মারামারি, হিংসা অন্য প্রাণীদের মতোই স্বাভাবিক। নামের মতো ততখানি নারকীয় নাও হতে পারে হেল পিগসরা।

More Articles