চাঁদে জেটগতির ইন্টারনেট? কবে শুরু হচ্ছে?
এবার চাঁদেও পাওয়া যাবে ইন্টারনেট পরিষেবা। আর সেই জন্যেই এগিয়ে এলো স্পেস স্টার্ট-আপ কম্পানি অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেস (Aquarian Space)। এই স্টার্ট-আপ কম্পানির আপাতত উদ্দ্যেশ্য একটি লুনার স্যাটেলাইট (Lunar Satellite) লঞ্চ করা ২০২৪ সালের মধ্যেই। লুনার স্যাটেলাইট - নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে চাঁদের আশেপাশে প্রদক্ষিণ করবে এই স্যাটেলাইট, ঠিক যেমন পৃথিবীর চারপাশে স্যাটেলাইটগুলি ঘোরে। ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করার উদ্দ্যেশ্যে পঁয়ষট্টি লাখ মার্কিন ডলার প্রাথমিক ভাবে খরচ করতে চলেছে সংস্থাটি। তবে তার পুরো টাকাই দিচ্ছে ড্রেপার অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি সংস্থা।
পরিকল্পনা মাফিক চাঁদে ইন্টারনেট গতি দ্রুত হতে চলেছে -প্রতি সেকেন্ডে একশো মেগাবাইট (100 mbps) ডেটা সরবরাহ সম্ভব এর মাধ্যমে। শুধু তাই নয় এই ইন্টারনেটের এই গতিতে একটি ৪কে ভিডিও দেখা যাবে চাঁদে বসে।
অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কেলি লার্সনের (Kelly Larson) মতে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে প্রায় দুশোর কাছাকাছি স্যাটেলাইট এবং তার ফলে কয়েক কোটি ডলারের অর্থনীতি গড়ে উঠবে চাঁদকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু চাঁদ এবংপৃথিবীর মাঝে দৃঢ় সংযোগ স্থাপন ছাড়া সে কাজ সম্ভব নয়। আর চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝে সেই সংযোগ স্থাপনের উদ্দ্যেশ্যে একাধিক সংস্থার সাথে কথাবার্তা চালাচ্ছে অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেস। এই সংস্থাগুলির প্রত্যেকটি-ই নাসার কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিস (CLPS) প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত।
অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেস ছাড়াও একাধিক বানিজ্যিক সংস্থা অংশ গ্রহণ করতে পারবে নাসার নতুন প্রকল্পে
বিগত পঞ্চাশ বছরে মানুষ চাঁদে পাড়ি দেয়নি। নাসার আর্টেমিস প্রজেক্ট আবার মানুষকে চাঁদে পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু করেছে। নাসা ২৩ শে মার্চ ঘোষণা করেছে বিভিন্ন বানিজ্যিক সংস্থা মুন ল্যান্ডার (Moon Lander) তৈরি করার চুক্তি পেতে পারে। আর সেই জন্যেই নাসাকে এই মূহুর্তে একাধিক মার্কিন বানিজ্যিক সংস্থা মুন ল্যান্ডারের একটি যথাযথ নকশার প্রস্তাব দিতে পারবে, যাতে চাঁদের কক্ষ থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে মহাকাশচারীদের নিয়ে যাওয়া যায়।
চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে একটি স্পেস স্টেশন, নাসার তরফ থেকে এর নাম রাখা হয়েছে গেটওয়ে (Gateway)। চাঁদের কক্ষ থেকে,চাঁদে পা রাখার জন্য তৈরি এই প্রবেশ দ্বার বা ফেরি চলাচলের পোতাশ্রয় যেন। । আর সেই জন্যেই লুনার ল্যান্ডারের যেন পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকে গেটওয়ে স্পেসস্টেশনের সাথেও যেন নিজেকে রোপন (Dock) করার।
ইতিমধ্যেই ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ইলন মাস্কের (Elon Musk) সংস্থা স্পেসএক্সকে (SpaceX) নাসা নির্বাচন করেছে মার্কিন মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর জন্যে। কিন্তু কোনোভাবেই ২০২৫ সালের আগে তা হচ্ছে না। তবে খুব সম্প্রতি মহাকাশচারী ও অন্যান্যদের জন্যে নাসার প্রস্তাবিত ল্যান্ডিং সিস্টেমকে, একটি মহাকাশযানে পরিণত করার জন্যে স্পেসএক্সকে আর্জি জানিয়েছে নাসা।
আগামী কয়েক সপ্তাহেই স্পেসএক্সের পাশাপাশি আর কোন মার্কিন বাণিজ্যিক সংস্থা লুনার ল্যান্ডার বানাবে, তা জানা যাবে। তবে যে সংস্থাই হাত মেলাক না কেন, নাসা কিন্তু একটু লম্বা সময় টিকে থাকার যোগ্য লুনার ল্যান্ডার খুঁজছে, যার কর্মক্ষমতা অন্তত ২০২৭ সাল অবধি থাকবে।
এগিয়ে আসছে কানাডাও -
গেটওয়ে স্পেসস্টেশন, যা কিনা চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে, সেই স্পেসস্টেশনের জন্যেও তৈরি হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র রোবোটীয় সিস্টেম কানাডার্ম৩ (Candarm3)। আর তা তৈরি করছে কানাডিয়ান সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (Canadian Science and Technioogy)। শুধু তাই নয়, নাসার তরফ থেকে মানুষকে চাঁদে পাঠানোর প্রকল্প আর্টেমিসে (Artemis) অংশ গ্রহণ করতে চলেছে কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির (Canadian Space Agency) মহাকাশচারীও।
কানাডার্ম৩- এ থাকছে একটি নেক্সট জেনারেশন রোবোটিক আর্ম (Next generation robotic arm) এবং বেশ কিছু বিশেষ যন্ত্রাংশ। পুরো বিষয়টিকে চালনা করবে উচ্চমানের সফ্টওয়্যার এবং অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
কানাডার্ম৩ গেটওয়ে স্পেসস্টেশনকে রক্ষণাবেক্ষণ করবে, তার পরিদর্শন এবং প্রয়োজনে মেরামতও করবে। গেটওয়েতে আসাযাওয়া করা বিভিন্ন মহাকাশযানের ছবি তোলা ছাড়াও, মহাকাশচারীদেরকে স্পেসওয়াকে সাহায্য করবে এই অত্যাধুনিক রোবোটিক সিস্টেম।
মানুষ আবার কবে চাঁদে পৌঁছচ্ছে?
চাঁদে পাকাপাকি ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করারও আগে প্রয়োজন, সেখানে মহাকাশচারীদের আবার পাঠানো। নাসার কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিস প্রোগ্রাম চাঁদে মানুষকে আবার পাঠানোর আগে একাধিক বিষয়ে নজর দিচ্ছে, তার আগেও নজর দিচ্ছে পৃথিবী আর চাঁদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের। আর তার জন্যেই একাধিক পেলোড, ল্যান্ডার, এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি পাঠানোর জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে নাসা। উদ্দ্যেশ্য ২০৩০ সালের আগেই প্রয়োজনীয় সব জিনিস চাঁদে পাঠানো। অন্যদিকে নাসার থেকে সাহায্য নিয়েই অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেস আশা করছে ২০২৪ এর মধ্যেই চাঁদে এন্ড-টু-এন্ড ডেটা কমিউনিকেশন সার্ভিস চালু করতে পারবে তারা।
এ সব ছাড়াও অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেসের উদ্দ্যেশ্য মানুষের মধ্যে মহাজগতের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা - তার মধ্যে অন্যতম মহাকাশে জমা আবর্জনা, মহাকাশ দূষণ, মহাকাশের আবহাওয়া নজরে রাখা এবং চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহ থেকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা।
তবে অ্যাকোয়ারিয়ান স্পেস শেষমেশ স্পেসএক্সের সাথে অংশ নেবে নাকি কানাডিয়ান সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সাথে, নাকি সবাই একসাথে কাজ করবে, তার উত্তর খুব শিঘ্রই পাবো আশা করা যায়।