প্রথম বাবা হল সমলিঙ্গের প্রাণী! সমকামী পেঙ্গুইন যেভাবে সাড়া ফেলেছে বিশ্বে...
Homosexual Penguin Father:
সমকামী পেঙ্গুইনের ছানা! নিউইয়র্কের রোজামন্ড গিফোর্ড চিড়িয়াখানায় একটি ছোট্ট পেঙ্গুইন ছানার জন্ম ঘিরে ব্যাপক হইচই পড়েছে। একে মিষ্টিমতো প্রাণী, তার উপর আবার পেঙ্গুইনের ছানা- স্বাভাবিকভাবেই হইহল্লা হওয়ারই কথা। কিন্তু এই আনন্দের উপলক্ষ্য একেবারে ভিন্ন। এই ডিমটিকে যত্নে লালন করেছিল একজোড়া প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাম্বোল্ট সমলিঙ্গের পেঙ্গুইন!
২০২১ সালের প্রজনন মরশুমে দুই পুরুষ পেঙ্গুইন এলমার এবং লিমা মিলিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই দুই পুরুষের কোনও ডিম পাড়া সম্ভবই না। কিন্তু দেখা যায় প্রজননের মরশুমে তারা আর পাঁচটা বিষমকামী পেঙ্গুইন জোড়ার মতোই আচরণ করতে থাকে। তারা একটি বাসাও তৈরি করে। এমনকী ওই মরশুমে এলমার আর লিমা নিজেদের এলাকাও রক্ষা করছিল। দু'জনের অনাগত সন্তানের জন্য এই যত্ন দেখে চিড়িয়াখানার কর্মীদের বিশ্বাস জন্মায় এই সমকামী পেঙ্গুইন দম্পতি পালক পিতা হিসাবে দুর্দান্ত সফল হবে।
এলমার এবং লিমা দু'জনেরই জন্ম চিড়িয়াখানায়। এলমার জন্মায় ২০১৬ সালে এবং লিমা ২০১৯ সালে। এলমারের জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি দুর্ঘটনা। যে ডিম থেকে তার জন্ম সেটি তার বাবা-মা দুর্ঘটনাবশত ভেঙে ফেলেছিল এবং পরে পশুচিকিৎসকরা এলমার আঠা ব্যবহার করে তা জোড়া দেয়। এই জন্যই ছানাটির নাম দেওয়া হয়েছিল এলমার। এই ধরনের অনিচ্ছাকৃত ক্ষতি এড়াতে, কখনও কখনও ছানার জৈবিক পিতামাতার কাছ থেকে একটি ডিম পালক পিতামাতার কাছে স্থানান্তর করা হয়, যারা পরে এটির যত্ন নেয়। চিড়িয়াখানার পরিচালক টেড ফক্স জানিয়েছেন, পেঙ্গুইনরা কার সঙ্গে সময় কাটাতে চায় সেই বিষয়ে এবং একে অপরকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন।
নিউইয়র্ক চিড়িয়াখানায় পেঙ্গুইন জন্মের ইতিহাস বেশ সমস্যাজনক। এর আগে অন্তত দুই জোড়া পেঙ্গুইন ঘটনাচক্রে নিজেদের নিষিক্ত ডিম ভেঙে ফেলে। তাই, চিড়িয়াখানার কর্মীরা প্রায়ই আসল ডিমের পরিবর্তে ডামি ব্যবহার করতেন এবং যাতে মা ও বাবা পেঙ্গুইন ডিমগুলিকে আরও যত্ন করতে শেখে তারও একটা প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। তবে এই প্রথমবার রোজামন্ড গিফোর্ড চিড়িয়াখানার কর্মীরা এক সমকামী পেঙ্গুইন দম্পতিকে ডিম আর ছানা পরিচর্যার দায়িত্ব দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ধূমধাম করে প্রথম সমকামী পুরুষের বিয়ে, কলকাতা সাবালক হল?
চিড়িয়াখানার কর্মীরা দেখেন, বিষমকামী দম্পতি পোকিটা এবং ভেন্তের একটি ডিম নিষিক্ত হয়ে ভ্রূণ গঠন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা এই ডিমটিকে প্রথম দুই বাবা, এলমার এবং লিমার কাছে স্থানান্তরিত করেন। চিড়িয়াখানার পরিচালক টেড ফক্স জানিয়েছেন, সব বাবা আর মা পেঙ্গুইনই যে ডিম ফোটাতে পারদর্শী এমন নয়। অনেকেই সঠিক ইনকিউবেশন পিরিয়ডের আগেই ডিম ভেঙে ফেলত। অনেক পেঙ্গুইন আবার কে কোন সময়ে তা দেবে সেই নিয়েও লড়াই করে। চিড়িয়াখানার কর্মীরা দিনের পর দিন এলমার আর লিমাকে দেখে বোঝেন এর চেয়ে ভালো সন্তান পালন আর কেই বা করতে পারে! এলমার এবং লিমা ডিমের যেভাবে যত্ন নিয়েছে তা দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
পেঙ্গুইন দম্পতিরা ডিম ফোটানো, বাচ্চা দেওয়া এবং ছানাকে খাওয়ানোর মতো অভিভাবকত্বের দায়িত্বগুলি সমানভাগে ভাগ করে নেয়। একজন অভিভাবক বাইরে থাকাকালীন বা সাঁতার কাটানোর সময় বাচ্চাটিকে উষ্ণ রাখতে এবং রক্ষা করার জন্য তার সঙ্গে একজন সবসময় থাকে৷ সাধারণত কয়েক ঘণ্টা পরপর দায়িত্ব পরিবর্তন হয় যদিও রাতে বাবা-মা দু'জনেই ছানার কাছাকাছি থাকে।
পেঙ্গুইন ছানার যখন মাত্র পাঁচদিন বয়স, চিড়িয়াখানার কর্মীরা তার প্রথম স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। দেখা যায় ছানাটির ওজন ছিল ২২৬ গ্রাম (৮ আউন্স)। এলমার এবং লিমা দু'জনে মিলে তুমুল যত্নে বড় করে তুলছে শিশুটিকে। ওই চিড়িয়াখানার তরফেই জানানো হয়েছে সারা বিশ্বে আরও বেশ কিছু জায়গাতেই সমলিঙ্গের পেঙ্গুইনরা ডিম পালনে সফল হয়েছে।
ইলেক্ট্রা এবং ভায়োলা, স্পেনের ওশেনোগ্রাফিক ভ্যালেন্সিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে দুই সমকামী মহিলা পেঙ্গুইন; স্কিপার এবং পিং, বার্লিন চিড়িয়াখানায় সমকামী পুরুষ পেঙ্গুইন এবং এডুয়ার্ডো ও রিও, সান ফ্রান্সিসকো চিড়িয়াখানায় একজোড়া সমকামী পুরুষ পেঙ্গুইনও একইভাবে সন্তানদের লালন পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ সমলিঙ্গের পেঙ্গুইনদের এই যত্নআত্তি প্রমাণ করে 'পরিবার' ধারণাটি প্রজাতি-নির্দিষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, গতে বাঁধা ধারণার বাইরে গিয়েই শিশু-পালনের চমৎকার কাজ করছে সমকামী জুটি।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) অনুযায়ী, হামবোল্টস পেঙ্গুইন এখন অরক্ষিত প্রজাতি। বাসস্থানের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হ্রাস পাচ্ছে তাদের বন্য জনসংখ্যা। রোজামন্ড গিফোর্ড চিড়িয়াখানায় বর্তমান ২৮ টি হাম্বোল্ট পেঙ্গুইন রয়েছে৷