দরিদ্র দেশের উপর দূষণের অভিশাপ চাপিয়ে দিচ্ছে ধনী দেশ
Climate Change Conference: বিশ্বের উন্নত ধনী দেশগুলি তাদের তৈরি করা পরিবেশ দূষণের ধ্বংসাত্মক প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল গরিব দেশগুলিকে ৩০ হাজার কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে।
দরিদ্র মানুষের সঙ্কট মোচনে, আর্থিক সহায়তা করার ক্ষেত্রে বিত্তশালীদের সবসময় একটা পিছুটান থাকে। বৃহত্তর পরিসরে, অর্থাৎ বৈশ্বিক স্তরে রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রেও একই পিছুটান কাজ করে। এটা যে কতখানি কঠিন বাস্তব, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো মধ্য এশিয়ার দেশ আজারবাইজানের রাজধানী শহর বাকু-তে। রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু সম্মেলন 'কপ ২৯'-এ ১৪ দিন ধরে দর কষাকষির পর, বিশ্বের উন্নত ধনী দেশগুলি তাদের তৈরি করা পরিবেশ দূষণের ধ্বংসাত্মক প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল গরিব দেশগুলিকে ৩০ হাজার কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে।এই সম্মতি আদায় করতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।বর্তমানে এই তহবিলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জমা দিচ্ছে ধনী দেশগুলো। দাবি ছিল ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু বিশ্বের পরিবেশ দূষণকারী উন্নত ধনী দেশগুলো এত টাকা দিতে রাজি নয়।
সম্মেলন ১১ নভেম্বর শুরু হয়ে ২২ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তৈরি সঙ্কট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত না করে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা সম্ভব ছিল না। তাই সম্মেলন ১২ দিন থেকে ১৪ দিনে পৌঁছে যায়। গত ১৪ দিন ধরে দফায় দফায় আলোচনা, বাক-বিতণ্ডা, বাদ-প্রতিবাদ শেষে পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো রাজি হয় জলবায়ু সঙ্কটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) ডলার দিতে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এই অর্থ দেওয়া হবে।জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে ভেস্তে যেতে বসেছিল। এমনকী ধনী দেশগুলোর বিরুদ্ধে জলবায়ু তহবিলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা করেছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেবার প্রস্তাবেও অসন্তোষ ছিল দরিদ্র দেশগুলোর। তাদের অভিযোগ, এই বরাদ্দও অপ্রতুল। কপ২৯-এর পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের অর্থ অঙ্গীকার করতে রাজি হচ্ছে না উন্নত দেশগুলো। তবে এই জলবায়ু চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন সম্মেলনে ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ওপকে হোয়েকস্ট্রা। তিনি বলছেন, জলবায়ু অর্থায়নের নতুন যুগের সূচনা হিসেবে কপ২৯ সম্মেলনকে বিশ্ব স্মরণে রাখবে।
অন্যদিকে, এই চুক্তির সমালোচনা করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান 'পাওয়ার শিফট আফ্রিকা'-র পরিচালক মহম্মদ আদোউ বলেছেন, "উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এই 'কপ' একটি বিপর্যয়। ধনী দেশগুলো— যারা জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করে, তারাই পৃথিবী ও এর বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।" বরাদ্দের বিষয়টি দেখে সবার আগে প্রতিবাদ জানায় আফ্রিকান গ্রুপ অব নেগোশিয়েটর। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে কাজ করা আফ্রিকার দেশগুলোর এই সংগঠনের চেয়ারম্যান আলি মহম্মদ বলেছেন, "এই বরাদ্দ অপ্রতুল ও একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এই পরিমাণ বরাদ্দে আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে না, যা অগ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে এই ঘটনা।"
আরও পড়ুন- গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জিয়নকাঠি! যেভাবে পরিবেশের সর্বনাশ করছে কার্বন ডাই অক্সাইড
কপ ২৯-এ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি গৃহীত হয়েছে বিশ্বব্যাপী কার্বন বাজার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত। কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমানো সংক্রান্ত এই চুক্তিতে ঐক্যমত্য এসেছে। চুক্তিটি কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে একটি বৈশ্বিক বাজার তৈরি ও এর নিয়মনীতি নিয়ে। ওই বাজারে ‘কার্বন ক্রেডিট’ কেনাবেচা করতে পারবে দেশগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, বৃক্ষরোপণ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো নানা প্রকল্প হাতে নেবে দরিদ্র দেশগুলো। এভাবে প্রতি এক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড বা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর বিনিময়ে একটি ‘কার্বন ক্রেডিট’ পাবে তারা। বৈশ্বিক একটি বাজার থেকে অর্থের বিনিময়ে ওই ‘ক্রেডিট’ কিনতে পারবে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি ‘ক্রেডিট’ কিনলে তারা এক টন কার্বন নিঃসরণের অনুমতি পাবে। প্রায় এক দশক আগে ‘কার্বন ক্রেডিটের’ বাজার গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এই বাজার কতটা কার্বন নিঃসরণ কমাবে এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কতটা কাজে আসবে, তা নিশ্চিত করতে এতদিন আলোচনা চলছিল। চুক্তিটির সমর্থকরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়তে নতুন নতুন প্রকল্পে শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ হবে। নিয়মনীতি চূড়ান্ত হবার পর আগামী বছরেই রাষ্ট্রসংঘের সহায়তায় এই সংক্রান্ত বাণিজ্য শুরু হতে পারে। তবে এরই মধ্যে কিন্তু ‘কার্বন ক্রেডিটের’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শুরু হয়েছে। গত জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডের কাছ থেকে ‘কার্বন ক্রেডিট’ কিনেছিল সুইজারল্যান্ড। এছাড়া এই ক্রেডিটের লেনদেন করতে চুক্তি করেছে আরও কয়েক ডজন দেশ। তবে ওই চুক্তিগুলোয় কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশ্বে ‘কার্বন ক্রেডিট’ বেচাকেনার সমর্থন দিয়ে আসা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইন্টারন্যাশনাল এমিশনস ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইইটিএ) ভাষ্যমতে, ২০৩০ সাল নাগাদ রাষ্ট্রসঙ্ঘ সমর্থিত এই বাজারমূল্য ২৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। আর এই বাজারের মাধ্যমে ‘ক্রেডিট’ বেচাকেনার ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমতে পারে।
তবে কার্বন চুক্তি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে উচ্চাকাঙ্খা এবং পদক্ষেপের মধ্যে এক উদ্বেগজনক ফাঁকও প্রকাশ করে। এই চুক্তি কার্বন নির্গমন মোকাবিলার ইচ্ছা প্রদর্শন করলেও এর বাস্তবায়নযোগ্য ব্যব্যস্থাপনার অভাব এবং স্বেচ্ছানুযায়ী প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভরতা, চুক্তিকে সামগ্রিক পদক্ষেপের চেয়ে অনেক বেশি প্রতীকী করে তোলে। চুক্তিটি বড় নির্গমনকারী, যারা ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে, সেই শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে যথেষ্ট জবাবদিহি চায় না। পরিবর্তে, এই চুক্তি যাদের যথেষ্ট আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া গভীর কার্বন নিঃসরণ হ্রাস বাস্তবায়ন করার জন্য যথেষ্ট সম্পদ নেই, সেই উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর অসম্পূর্ণ চাপ সৃষ্টি করে। এই অমিতব্যয়িতা জলবায়ু ন্যায়বিচারের নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া, স্পষ্ট সময়সীমা এবং অসম্পূর্ণতার জন্য শাস্তির অভাব চুক্তিটিকে প্রকৃত পরিবর্তনশীল চুক্তির পরিবর্তে আরেকটি রাজনৈতিক নাটক বানানোর ঝুঁকি তৈরি করে। বর্তমান আকারে, কার্বন চুক্তিটি বৈশ্বিক পদক্ষেপকে জলবায়ু সংকটের জরুরি প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার একটি হারানো সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগণ ও বাস্তুতন্ত্রকেও অব্যাহত বিপদে ফেলছে।
কপ ২৯-এর সামগ্রিক ফলাফল পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতি প্রদর্শন করলেও, জলবায়ু সংকটের তীব্রতা এবং পরিসরের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার এক স্থায়ী ব্যর্থতাও প্রকাশ করে। ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৩০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন দেওয়ার চুক্তি একটি অগ্রগতির পদক্ষেপ হলেও, এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কম, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপ্রতিরোধ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থনীতিবিদরা রাষ্ট্রসংঘের আলোচনায় বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দশকের (২০৩০) শেষ নাগাদ উন্নয়নশীল দেশগুলোর বার্ষিক কমপক্ষে ১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তবে এই লক্ষ্যমাত্রাটাও কম। কপ ২৯-এ প্রকাশিত রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের স্ট্যান্ডিং কমিটির আর্থিক প্রতিবেদনের "উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রয়োজন নির্ধারণের দ্বিতীয় প্রতিবেদন" অংশে একটি বিশদ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের-র অধীনে জলবায়ু কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো, যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও রয়েছে, সম্মিলিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ কৌশল বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি থেকে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি ডলারের আর্থিক প্রয়োজন চিহ্নিত করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু রক্ষার স্বার্থে এশিয়ার ২০টি দেশের মোট ৩৭৪টি অবশ্য প্রয়োজনের জন্য খরচ ধার্য হয়েছে ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। এই অর্থের মধ্যে উষ্ণায়ন প্রশমন বা ‘মিটিগেশন’–এর জন্য প্রয়োজন ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার এবং অভিযোজন বা ‘অ্যাডাপটেশন’–এর জন্য দরকার ৩২৫ থেকে ৪৩১ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থ দাবির মধ্যে সিংহভাগ ভারতের। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ১২ বিলিয়ন ডলারও এর মধ্যে ধরা হয়েছে। এই চাহিদায় ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই।
আরও পড়ুন- গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জিয়নকাঠি! যেভাবে পরিবেশের সর্বনাশ করছে কার্বন ডাই অক্সাইড
এই রিপোর্ট এশিয়া সংক্রান্ত হলেও এর মধ্যে চিনের চাহিদার কোনও উল্লেখ করা হয়নি। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন প্রশমন ও অভিযোজনে রাষ্ট্রীয় নির্ধারিত অবদানের (এনডিসি) নিরিখে সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রয়োজন এশিয়ার। তারপর আফ্রিকার। চাহিদার ভিত্তিতে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান। আয়তন, জনসংখ্যা ও দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের নিরিখে বাংলাদেশও রয়েছে প্রথম দিকে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪২টি দেশের মোট ৫ হাজার ৭৬০টি প্রয়োজনের মধ্যে ২ হাজার ৭৫৩টির খরচ হিসাব করা হয়েছে। এটি মোট প্রয়োজনের ৪৮ শতাংশ। এর জন্য খরচের দাবি মোটামুটিভাবে ৫ থেকে সাড়ে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। দূষণমুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই অর্থ উন্নত বিশ্বকে খরচ করতে হবে। দীর্ঘ আলোচনাগুলো ধনী এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে গভীর বিভাজনকে তুলে ধরেছে, যেখানে ধনী দেশগুলো প্যারিস চুক্তির অধীনে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের দাবির প্রতি অবিচ্ছিন্ন অনাগ্রহ তাদের ন্যায্য জলবায়ু কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করছে। তদুপরি, দেরিতে কার্যকরী পরিকল্পনা এবং তহবিলের প্রবাহের অস্বচ্ছতা চুক্তির প্রভাবশীলতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। সমালোচকরা সঠিকভাবে দাবি করেছেন যে, কপ-২৯ আবারও রাজনৈতিক সমঝোতাকে রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বৃদ্ধি পাওয়া জলবায়ু ক্ষতির মোকাবিলা করতে পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এই ফলাফল, যদিও একটি প্রতীকী পদক্ষেপ, অবশেষে গ্লোবাল নর্থ এবং সাউথের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি বাড়িয়ে তোলে এবং অর্থপূর্ণ জলবায়ু ন্যায়বিচার অর্জনে আস্থা তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু প্রভাবের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে, এই অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া প্যারিস চুক্তির ১.৫°সেলসিয়াস লক্ষ্যপূরণের সক্ষমতা নিয়ে গভীর সন্দেহ তৈরি করে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য চাঁদনী রায়না কপ ২৯-এ গৃহীত আর্থিক চুক্তি সম্পর্কে বলেছেন,
“ভারত এর বর্তমান আকারে প্রস্তাবিত লক্ষ্যকে (৩০০ বিলিয়ন ডলার) গ্রহণ করে না। প্রস্তাবিত তহবিলের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। এটি একটি নগণ্য অঙ্ক যা আমাদের দেশের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল জলবায়ু পদক্ষেপকে সহায়তা করবে না।”
ভারত এই প্রক্রিয়াকে 'পরিকল্পিত মঞ্চায়ন' বলে উল্লেখ করে। পানামা প্রতিনিধি দলের নেতা জুয়ান কার্লোস মন্টেরি গোমেজ কপ ২৯-এর ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করে একে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত বলে সমালোচনা করেন। তিনি উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ও কার্যকর আর্থিক প্রতিশ্রুতির অভাবকে উল্লেখ করে এটিকে অর্থবহ জলবায়ু পদক্ষেপের জন্য একটি হারানো সুযোগ বলে অভিহিত করেন। মন্টেরি গোমেজ উল্লেখ করেন, তহবিল ঘাটতি পূরণে ব্যর্থতা আস্থা নষ্ট করে এবং জলবায়ু সঙ্কটের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখে থাকা সম্প্রদায়গুলোর জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে। সুইডেনের জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বাকু সম্মেলনের ঘোষণাকে বিশ্বের জন্য ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।