কলকাতার মেধাবী, হার্ভার্ডের কৃতী! কীভাবে নিজের ৪ বছরের সন্তানকে খুন করলেন সূচনা শেঠ?

CEO Kills Son in Goa : বাচ্চাটিকে হাত দিয়ে গলা টিপে খুন করা হয়নি। কোনও কাপড় বা বালিশ ব্যবহার করা হয়েছিল। শ্বাসরোধেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির রাইগর মর্টিস ছিল না।

নিজের সন্তানকে হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই হোটেলের ঘরেই ৪ বছরের পুত্রকে হত্যা করে ট্যাক্সি নিয়ে পালাতে চেয়েছিলেন মা। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেছেন। ধরা পড়ার পরে এই মর্মান্তিক খুন সংক্রান্ত যা যা তথ্য উঠে আসছে তা রীতিমতো শিউরে তুলছে। মা নিজের সন্তানকে হত্যা করে ব্যাগে ভরে ট্যাক্সি ভাড়া করে পালাচ্ছিলেন! ঠিক কী করতেন ওই দেহ নিয়ে? কোথায় ফেলতেন? কেনই বা খুন? এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই স্টার্ট-আপের সিইও সূচনা শেঠ নিজের চার বছরের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করার কয়েক দিন পর চিকিৎসকরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছেন কীভাবে হত্যাটি করা হয়।

ওই হোটেলের কামরায় কীভাবে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছিল তার বিবরণে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটিকে তার মা অর্থাৎ সূচনা শেঠই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। শিশুটির শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সূচনা শেঠকে আটক করা হয়েছিল চিত্রদুর্গে। স্যুটকেসে নিজের বাচ্চার মৃতদেহ ভরে ট্যাক্সি ভাড়া করে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন তিনি। পরে গোয়া পুলিশের নির্দেশে সূচনাকে গ্রেফতার করা হয়। হিরিউর তালুক হাসপাতালের প্রশাসনিক আধিকারিক ডাঃ কুমার নায়েক জানাচ্ছেন, বাচ্চাটিকে যেভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে স্মদারিং। বাচ্চাটিকে হাত দিয়ে গলা টিপে খুন করা হয়নি। কোনও কাপড় বা বালিশ ব্যবহার করা হয়েছিল। শ্বাসরোধেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির রাইগর মর্টিস ছিল না।

সাধারণত ভারতে মৃত্যুর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রাইগর মর্টিস হয় কিন্তু এই শিশুর ক্ষেত্রে কোনও রাইগর মর্টিস ছিল না। তাই, বোঝা যাচ্ছে বাচ্চাটির মৃত্যুর পর ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে। শিশুটির শরীরে কোনও রক্তক্ষরণ বা মারামারির চিহ্নও ছিল না। মৃত্যুর সঠিক সময় বলা যাচ্ছে না কিন্তু মৃত্যুর পর ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, জানান চিকিৎসক।

আরও পড়ুন- ৪ বছরের সন্তানকে খুন মায়ের! ব্যাগে লাশ ভরে পালাতে গিয়ে যেভাবে ধরা পড়লেন কলকাতার মেধাবী

সূচনা শেঠ তাঁর চার বছরের শিশুকে নিয়ে গত শনিবার উত্তর গোয়ার ক্যান্ডোলিমের সোল ব্যানিয়ান গ্র্যান্ডে হোটেলে ওঠেন। সোমবার সূচনা একাই রুম থেকে চেক আউট করেন এবং হোটেল কর্মীদের বেঙ্গালুরু অবধি যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি বুক করতে বলেন। গোয়া থেকে বেঙ্গালুরু ট্যাক্সিতে কেন? এতটা পথ সাধারণত মানুষ বিমানেই যাতায়াত করেন, নিদেনপক্ষে ট্রেনে! হোটেলের কর্মীরাও বিমানে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও সূচনা বারেবারেই জোর দেন ট্যাক্সি করে যাওয়ার জন্য। হোটেলের কর্মীরা লক্ষ্য করেন, সূচনা একা। তাঁর ছেলেকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সূচনা ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাওয়ার পর, হাউজকিপিং কর্মী ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন সেখানে রক্তের দাগ!

হোটেল থেকে পুলিশকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ সেই ট্যাক্সি চালককে ফোন করে নির্দেশ দেয় সূচনা শেঠের সঙ্গে কথা বলতে। চালক কথায় কথায় সূচনাকে ছেলের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। সূচনা জানান, ছেলে একজন বন্ধুর সঙ্গে রয়েছে। তিনি সেই সময় ছেলের একটি ঠিকানাও দেন, যদিও পরে দেখা যায় সেই ঠিকানাটি ভুল। এরপর পুলিশ আবার চালককে ফোন করে। সূচনা শেঠ যাতে বুঝতে না পারেন তাই চালকের সঙ্গে কোঙ্কনি ভাষায় কথা বলে গোয়া পুলিশ। পুলিশ ট্যাক্সি চালককে নির্দেশ দেয় গাড়িটিকে বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে চিত্রদুর্গর সবচেয়ে কাছের থানায় যেতে। চালক পুলিশের কথা মতো চিত্রদুর্গ থানায় গেলে পুলিশ সূচনা শেঠকে আটক করে। যে ব্যাগটি তাঁর সঙ্গে ছিল সেই ব্যাগ থেকেই তাঁর সন্তানের দেহ পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে, সন্তানকে হত্যার পরে নাকি সূচনা নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর স্বামী ভেঙ্কট রমনের সঙ্গে চলা বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন সূচনা।

সূচনা শেঠ কে?

সূচনার লিঙ্কডিন প্রোফাইলের তথ্য বলছে, সূচনা হচ্ছেন 'দ্য মাইন্ডফুল এআই ল্যাব'-এর সিইও, এবং একজন এআই এথিক্স বিশেষজ্ঞ এবং ডেটা সায়েন্টিস্ট। ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বিষয়েই কাজ করছেন। AI এথিক্স তালিকায় ১০০ জন সেরা মহিলার তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। সূচনা পড়াশোনা করেছেন কলকাতা শহরেই। 'এআই এথিক্স অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড অডিটস' এবং 'রেস্পন্সিবল এআই স্ট্র্যাটেজি'-র একজন বিশেষজ্ঞ সূচনা শেঠ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (RRI) একজন রিসার্চ ফেলো তিনি। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটিতেও দু বছর কাজ করেছেন তিনি।

২০১০ সালে বিয়ে করেন সূচনা ও ভেঙ্কট রমন। ২০১৯ সালে তাদের ছেলের জন্ম হয়। সাংসারিক বিবাদের কারণে তাঁরা ২০২০ সালে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। স্বামীর সঙ্গে থাকতেন না সূচনা। এই খুনের সময় তাঁর স্বামী ছিলেন জাকার্তায়। ফিরেছেন তিনিও।

More Articles