হাইকোর্টে মঞ্জুর জামিন! জমি-দুর্নীতি মামলায় তার পরেও জেলমুক্ত হতে পারবেন হেমন্ত?

Hemant Soren Case: তার প্রায় ৫ মাস বাদে সেই মামলায় জামিন মিলল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা হেমন্ত সোরেনের। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম হাইকোর্টে মঞ্জুর হয়েছে তাঁর জামিনের আবেদন।

ভোটের আগে বহু চেষ্টাচরিত্র করেও অন্তর্বর্তী জামিনে বাইরে আসতে পারেননি ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। গত জানুয়ারি মাসে জমি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন হেমন্ত। তার প্রায় ৫ মাস বাদে সেই মামলায় জামিন মিলল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা হেমন্ত সোরেনের। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম হাইকোর্টে মঞ্জুর হয়েছে তাঁর জামিনের আবেদন।

হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে হেমন্তের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি জামিনের ফলে আবেদনকারীর মামলায় প্রভাব বিস্তার করার কোনও সম্ভবনা নেই। এই মুহূর্তে হেমন্তের বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা নেই। যার জেরেই তাঁকে জামিন বলে জানিয়েছে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট। ৫০ হাজার টাকার দুটি বন্ডে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সব ঠিক থাকলে শিগগিরই জেলখানার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে চলেছেন হেমন্ত সোরেন।

আরও পড়ুন: পরিবারেই লুকিয়ে বিপদ! হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনার মুখ্যমন্ত্রিত্বের পথের কাঁটা কে?

জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় বেআইনি আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় প্রায় ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গত ৩১ জানুয়ারি হেমন্তকে হেফাজতে নেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট। গ্রেফতারির খবর টের পেয়েই রাতারাতি পদত্যাগ করে চম্পাই সোরেনকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করে যান হেমন্ত। এরপর ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন’ (পিএমএলএ) সংক্রান্ত রাঁচীর বিশেষ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তিনি। তবে গত ১৩ মে খারিজ হয়ে যায় তাঁর সেই আবেদন। তার পরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হেমন্ত।

ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ৮.৮৬ একর জমি বেআইনিভাবে অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পরই জমি কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি আর্থিক তছরূপের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯১ পাতার চার্জশিটে হেমন্ত সোরেন-সহ আরও বেশ কয়েক জনকে অভিযুক্ত করেছে ইডি। ৩০ মার্চ ওই জমির মূল্য ৩১.০৭ কোটি টাকারও বেশি বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। 

এর আগেও অবশ্য ইডির গ্রেফতারিকে বেআইনি বলে অভিযোগ করে শীর্ষ কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হেমন্ত। কিন্তু সেই মামলা গত ২২ মে প্রত্যাহার করে নেন তাঁর আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টে গ্রেফতারি বিষয়ক দু’টি পৃথক মামলা করেছিলেন সোরেন। একটি ছিল গ্রেফতারির বিরুদ্ধে। অন্যটি ছিল জামিনের আবেদন জানিয়ে করা মামলা। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চে মামলাগুলি শুনানির জন্য ওঠে। বিচারপতিরা জানান, আদালতের কাছে তথ্য গোপন করেছেন সোরেনের আইনজীবীরা। তাই সোরেনের আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত। এর পরেই মামলা প্রত্যাহার করে নেন তাঁর আইনজীবীরা।

গত পাঁচ মাস ধরে রাঁচির বিরসা মুন্ডা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে রয়েছেন হেমন্ত সোরেন। জামিনের আবেদনের শুনানি সময় হেমন্ত সোরেনের পক্ষে সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং মীনাক্ষী অরোরা। তাঁরা দাবি করেন, ছোটনাগপুরের যে জমিটি সোরেনের বিরুদ্ধে দখল করার অভিযোগ করেছে ইডি, তা কোনওভাবেই কাউকে বেচা বা হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ইডির পর এবার সিবিআই! কোন কোন অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে নতুন করে গ্রেফতার কেজরি?

তবে জামিন পেলেই যে জেলের বাইরে আসতে পারবেন হেমন্ত, এমন নিশ্চয়তা নেই বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যে ভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিন আটকানো হয়েছিল, সেই একই পদ্ধতিতে হেমন্তের জামিনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে ইডি, তেমনটাই শোনা যাচ্ছে। সেই আবেদনে সুপ্রিম কোর্ট সাড়া দিলে ফের জেলেই ফিরতে হতে পারে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। ইন্ডিয়া জোটের শরিক জেএমএমের নেতা হেমন্ত সোরেনের জামিন নিয়ে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মমতা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘আমি খুবই খুশি এবং নিশ্চিত যে তিনি অবিলম্বে মানুষের জন্য কাজ শুরু করবেন।’’

More Articles