‘আড়িয়াদহের ঘটনা পুরনো!’ শাসকদলের নাম জড়াতেই তড়িঘড়ি সাফাই প্রশাসনের?

Alapan on Jayanta Singh: আড়িয়াদহের ঘটনা নিয়েই এবার সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা।

রাজ্য জুড়ে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনায় বারবার মুখ পুড়েছে রাজ্যের শাসকদলের। চোপড়ার পরে আড়িয়াদহ। আড়িয়াদহের গণপিটুনির ঘটনায় অভিযুক্তের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তাতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের। জানা গিয়েছে, আড়িয়াদহের ঘটনায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতী জয়ন্ত সিং নাকি তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের খাস লোক। এর আগেও একাধিক মামলায় পুলিশের খাতায় নাম থাকা জয়ন্তের সঙ্গে মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে তৃণমূল। সেই ঘটনা নিয়েই এবার সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা।

সেই সাংবাদিক বৈঠকে মনোজ ভার্মাকে পাশে নিয়ে আলাপন জানান, বেলঘড়িয়া থানার অন্তর্গত আড়িয়াদহের তালতলা ক্লাবের যে মারধর করার ভিডিও সামনে এসেছে, যা নিয়ে সমস্ত মহলে চর্চা হচ্ছে, তাই নিয়ে সরকারের তরফে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। আলাপন বাবুর দাবি, 'প্রথমত ঘটনাটি ২০২১ সালের মার্চে অর্থাৎ তিন বছর আগে ঘটেছে। দ্বিতীয়ত, ভিডিওয় যাঁকে মার খেতে দেখা যাচ্ছে, তিনি কোনও মহিলা নন, তিনি একজন পুরুষ। তৃতীয়ত, 'এই ঘটনায় যিনি মূল অভিযুক্ত, সেই জয়ন্ত সিং এর আগে অন্তত ৫ বার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন সেই ২০১৬ সাল থেকে। তিনি একজন পরিচিত গুন্ডা, বারংবার বিভিন্ন কেসে গ্রেফতার হয়েছেন।'

আরও পড়ুন: দুর্নীতি, গণপিটুনি! মমতা বিরোধী হলে কী করতেন? বিজেপি-সিপিএম সব কোথায় গেল?

এই সাংবাদিক বৈঠকের আগেই আড়িয়াদহ কাণ্ডে মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা ঘটনায় বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংকে তোপ দাগেন। বলেন, “২০২১ সালের ঘটনা নিয়ে ভোট ড্যামেজের জন্য গত ৭২ ঘণ্টা ধরে একই খবর দেখানো হচ্ছে।। সেই সময় অর্জুন সিং সেখানকার সাংসদ ছিলেন। যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এখন জেলে। ২৯ জন গ্রেপ্তার। চোখ নেই, কান নেই। দেখতে পান না? পুলিশের কাছ থেকে তথ্য জানুন। এখন আবেদন জানাচ্ছি। কাজ না হলে আইনি ব্যবস্থা নেব।” যদিও মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। বলেন, “কামারহাটি বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে না। মিথ্যা দোষারোপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই সামনে এল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনোজ ভর্মার সাংবাদিক বৈঠক। সেখানে তাঁরা আরও দাবি করেন, 'সাম্প্রতিক উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন আইনকানুন রক্ষার জন্য রাজ্য সরকার ও প্রশাসনকে সতর্ক করেছে। সেই সময়েই তিন বছরের পুরনো একটি ঘটনা নিয়ে, ঘটনায় নিগহীতের লিঙ্গ পরিচয় বিকৃত করে, যেভাবে অশান্তি করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে রাজ্য সরকার উদ্বিগ্ন। আলাপনের কথার সূত্র ধরে মনোজ ভার্মা জানান, আড়িয়াদহের এই মারধরের ভিডিও একবার নয়, বারবার এসেছে সামনে। তেমনি পুলিশও বারবারই পদক্ষেপ করেছে। এটাই প্রথম নয়। এলাকায় যাঁরা যখনই ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা করেছে, পুলিশ জানার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ করেছে। এই ঘটনায় প্রথম যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাঁদের মধ্যে ৬ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।'

Alapan Bandyopadhyay and West Bengal police ADG law and order talks about Ariadaha case and Jayanta Singh

গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য জুড়েই একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা সামনে এসেছে। জেলা থেকে শুরু করে খাস কলকাতাতেও। কোথাও ছেলেধরা সন্দেহে তো কোথাও মোবাইল চোর সন্দেহে। কোথাও আবার সালিশি সভায় গণপিটুনির ঘটনা। একের পর এক গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্য় সরকার। এদিন আড়িয়াদহ নিয়ে কথা বলতে এসে বাঁকুড়ার সাম্প্রতিক গণপিটুনি নিয়েও মুখ খোলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনোজ ভর্মা। বাঁকুড়ার খাতরায় বিজেপির বুথ সেক্রেটারি বঙ্কুবিহারী মাহাতোকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। সেই অভিযোগের টুইটটি রিটুইট করে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, 'খাতরায় একটি ঘটনা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় খাতরা থানায় এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই একই গ্রামের তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, যে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং নিহত ব্যক্তি মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন সেই জমিতে একটি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি হয়, যা খুন অবধি গড়ায়।'

আরও পড়ুন:শেখ শাহজাহান, জেসিবি, জয়ন্ত: পাড়ায় পাড়ায় বাহুবলী এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি?

এদিন সে ঘটনা নিয়ে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, 'একটি জমি বিতর্কের গায়ে অকারণে রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে। রাজ্য সরকার সেটাও পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করতে চায়।' তাঁর কথার সূত্র ধরে এডিজি বলেন, 'এটা ৯ তারিখের ঘটনা। জমি নিয়ে দুই পড়শির ঝামেলা ছিল। গাছ কাটা নিয়ে ঝামেলা হয়, এক জন মারা যান। সেদিনই অভিযোগ নিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।' এছাড়া চোপড়া কাণ্ডেও স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।

More Articles