হাথরাসে বিষাক্ত জিনিস ছড়িয়েছিল কেউ! ভোলেবাবার দাবি সত্য না মিথ্যে?

Hathras case: ভোলেবাবার আইনজীবী সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ওই অনুষ্ঠানে নাকি কয়েক জন ব্যক্তি বিষাক্ত পদার্থর ক্যান খুলে ছড়িয়ে দেয় ভিড়ের উপরে।

এক সপ্তাহ আগেই হাথরাসে ঘটে গিয়েছিল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। স্বঘোষিত ধর্মগুরুর সৎসঙ্গে যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রায় আড়াই লক্ষ ভক্ত। সৎসঙ্গ শেষ হতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, আর তাতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১২৩ জনের। জখম বহু। সেই ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা সেই স্বঘোষীত ধর্মগুরু ভোলে বাবা। ২ জুলাইয়ের সেই ভয়াবহ ঘটনার তদন্তে তৈরি করা হয়েছিল বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। তারা ইতিমধ্যেই তাদের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রায় ৩০০ পাতার নথিতে রয়েছে দুর্ঘটনার আসল কারণ। তবে সে সব কারণ উড়িয়ে ভোলেবাবার আইনজীবী বলছেন অন্য কথা। তাঁর দাবি, হাথরাসের ভিড় বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়েছিল কেউ। আর তাতেই নাকি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ভক্তদের। তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আইনজীবী এপি সিং।

সিট কিন্তু তাদের তদন্তরিপোর্টে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পিছনে অতিরিক্ত ভিড়কেই দুষেছে। জানা যায়, ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানের জন্য ৮০ হাজার লোকের অনুমতি ছিল। কিন্তু সেদিনের ওই সৎসঙ্গে জড়ো হন প্রায় আড়াই লক্ষ ভক্ত। সিটের রিপোর্টে মোট ১১৯ জনের বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হাথরাস জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আশিস কুমার, পুলিশ সুপার নিপুন আগরওয়াল, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট-সহ অনেকেই। ২ জুলাই তারিখে কর্তব্যরত পুলিশকর্তাদেরও বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের বক্তব্যও। শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে রয়েছে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানও।

আরও পড়ুন: হাথরাসের ছায়া ওড়িশাতেও! ভক্তদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে দিল পুরীর রথযাত্রা

তবে হাথরাসের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে বের করেছেন ভোলে বাবার আইনজীবী এপি সিং। এই ভোলেবাবার সৎসঙ্গে এসেই পদপিষ্ট হয়েছেন এত বিরাট সংখ্যক মানুষ। এত এত ভক্ত যখন পদপিষ্ট হচ্ছিলেন, তখন অবশ্য সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পগারপার হয়ে গিয়েছিলেন এই বাবা। তাঁর আইনজীবী সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ওই অনুষ্ঠানে নাকি কয়েক জন ব্যক্তি বিষাক্ত পদার্থর ক্যান খুলে ছড়িয়ে দেয় ভিড়ের উপরে। তাঁর দাবি, কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছেন ১৫-১৬ জনের একটি দল ওই বিষাক্ত পদার্থের ক্যান নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন। যা তারা ভিড়ের মধ্যে খুলে দেয়। আইনজীবীর আরও দাবি, তিনি নিহতদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছেন। সেখান থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, নিহতেরা শ্বাসকষ্টের কারণে নয়, বরং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। তবে সাক্ষীদের নামপ্রকাশ করতে চাননি সেই আইনজীবী। ভোলে বাবার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় ছেদ ফেলতেই এই চক্রান্ত বলে দাবি তাঁর। এখানেই শেষ নয়, তাঁর দাবি, সেই সব দুষ্কৃতীদের পালাতে সাহায্য করার জন্য ঘটনাস্থলে গাড়ি পার্ক করা পর্যন্ত ছিল। এপি সিং জানান, তাঁদের কাছে এ সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। যথাসময়ে তা তারা পুলিশের কাছে জমা দেবেন।

গত ৬ জুলাই হাথরাসের দুর্ঘটনায় স্বঘোষীত ধর্মগুরু নারায়ন সাকার ভোলে বাবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। যার আসল নাম আদতে সূরজপাল সিং। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা যায়, একসময় নাকি পুলিশে কাজ করত সূরজ। সেখানে নাকি একটি ধর্ষণের মামলায় জড়িয়ে চাকরি যায় তার। তার পরেই বাবাজি সেজে বসেন এই সূরজকুমার। এর আগে মৃত শরীরে প্রাণ ফেরানোর দাবি জানিয়ে শ্মশান থেকে এক কিশোরীর মৃতদেহ ছিনতাই করার চেষ্টা করে সূরজপাল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। সেই ঘটনায় গ্রেফতারও হয় সপরিবার সূরজকুমার। হাথরাসের ওই মৃত্যুমিছিলের পর সেই ভোলে বাবাকে বলতে শোনা যায়, তিনি এই দুর্ঘটনার ঘটনায় শোকাহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা রাখতেও বলে সে।

এর মধ্যে হাথরাস কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দেব প্রকাশ মধুকরকে গত ৫ জুলাই গ্রেফতার করে পুলিশ। ইতিমধ্যেই হাথরাসের ঘটনাটির তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। যে কমিটিটিকে নেতৃত্ব দেবেন সুপ্রিম কোর্টেরই এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সেই পিটিশনটি দায়ের করেন বিশাল তিওয়ারি নামে এক আইনজীবী। হাথরাসের ঘটনাকে সামনে রেখে এমন কোনও জনসমাবেশ বা সভার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাবিধি তৈরি করে নির্দেশিকা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে হাথরসের ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, রাজ্য সরকার ও পৌর কর্পোরেশনের দায়দায়িত্ব নিয়ে। এ ধরনের জনসমাবেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আয়োজকদের ব্যর্থতা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে যে ভাবে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, সেই প্রশ্নগুলিও উঠে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ওই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এই সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা করতে। মানুষের নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই মামলাটি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: মৃতকে জ্যান্ত করার দাবি, শ্মশান থেকে লাশ ছিনতাই! হাথরাসের ভোলে বাবার বুজরুকির খতিয়ান

ইতিমধ্যেই ওই মামলায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ৬ জুলাই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত মধুকরকে ১৪ দিনের বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিবার প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য়ের কথাও ঘোষণা করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। যদিও এখনও পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে দাগী ওই ধর্মগুরু। সেই ভোলে বাবার খোঁজ এখনও পায়নি পুলিশ।

More Articles