পালানোর উপায় নেই! রাফাহ, সুজাইয়াতে ইজরায়েলি বোমায় মৃত অন্তত ৪০

Israel-Palestine conflict: দিন চারেক আগেই উত্তর গাজার সুজাইয়াতেই ফের ঝুকে পড়েছিল ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক। সেই ট্যাঙ্ক থেকে একের পর এক শেলবর্ষণ করা হয় সেখানকার জনবসতিগুলি লক্ষ্য করে।

এক অক্টোবর থেকে আরেক অক্টোবর আসতে যায়। গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা কমায়নি ইজরায়েল। বরং দিনের পর দিন সেই তীব্রতা আরও বেড়েইছে। এই এক বছরে গোটা গাজাকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইজরায়েল। যে টুকু খণ্ড খণ্ড এলাকা বেঁচে রয়েছে, যেখানে কোনওমতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু খুঁজে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনের বাসিন্দারা, সেটুকুতেও লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। দক্ষিণ গাজায় ইজরায়েলি সেনার সঙ্গে জোরদার যুদ্ধ চলছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের। উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজাতেও একই রকম পরিস্থিতি।

রাফাহতে দীর্ঘদিন ধরেই লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। গোটা গাজার আর কোনও জায়গা নেই, যেটা বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ। যুদ্ধ আর ইজরায়েলি বাহিনীর মার থেকে যাঁরা কোনওমনে বেঁচে গিয়েছেন, তাঁরা বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছেন রাফাহ শহরের শরণার্থী শিবিরে। হামাস জঙ্গিদের খতম করার অছিলায় সেখানেই বারবার নিশানা করে চলেছে ইজরায়েলি বাহিনী। সম্প্রতি দক্ষিণ গাজায় ইজরায়েলি বাহিনীর নতুন করে হামলায় অন্তত ৬ জন ফিলিস্তিনির প্রাণ গিয়েছে। ইজরায়েলি আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে একাধিক ঘর। শুধু দক্ষিণ গাজার রাফাহতেই নয়। একই পরিস্থিতি উত্তর গাজার সুজাইয়াতেও।

আরও পড়ুন: গাজার শরণার্থী শিবিরে ভয়ঙ্কর হামলা! ফের নিরপরাধ মানুষের রক্তে ভিজল নেতানিয়াহুর হাত

দিন চারেক আগেই উত্তর গাজার সুজাইয়াতেই ফের ঝুকে পড়েছিল ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক। সেই ট্যাঙ্ক থেকে একের পর এক শেলবর্ষণ করা হয় সেখানকার জনবসতিগুলি লক্ষ্য করে। এমনকী মানুষ ঘর থেকে বেরোনোর সুযোগটুকুও পাননি তাঁরা। বাড়ির ভিতরেই আটকা পড়ে মৃত্যু হয় তাঁদের। কয়েকটি সূত্রের খবর, শনিবার থেকে ইজরায়েলি হানায় অন্তত জনা চল্লিশ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। যদিও ইজরায়েলের তরফে দাবি, সাধারণ মানুষের মৃত্য়ু হয়নি ওই হামলায়। বরং ধ্বংস করা গিয়েছে বেশ কয়েকটি জঙ্গিঘাঁটি। কিন্তু আদতে সত্যিটা তেমন নয় মোটেই। গত চব্বিশ ঘণ্টার লাগাতার হামলায় গাজায় বেশিরভাগ সাধারণ মানুষেরই প্রাণ গিয়েছে। জখম বহু।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সমন্বয় দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক দিনে সুজাইয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষ। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা মৃত্যুর জন্য দিন গুনছেন। ৫০ বছরের সিহাম আল-শাওয়া। জানালেন, তাঁদের জীবন নরকে পরিণত করেছে ইজরায়েলি সেনা। যে কোনও জায়গায় যে কোনও মুহূর্তে নামতে পারে হামলা, ছুটে আসতে বোমা-শেল-গুলি। লেগে যেতে পারে আগুন। আর সেই আগুনের চক্রব্যুহে আটকা পড়ে প্রাণ যেতে পারে অসংখ্য মানুষের। এই সব এলাকায় থেকে যাওয়া মানুষেরা জানেন না, হঠাৎ করে ইজরায়েলি সেনা হামলা চালানো শুরু করলে ঠিক কোথায় যাবেন তাঁরা? কোথায় গিয়ে মাথা বাঁচাবেন!

যাঁরা পালানোর চেষ্টা করছেন, চেষ্টা করছেন কোনও মতে প্রাণ বাঁচানোর, তাঁদের ধাওয়া করে যাচ্ছে ইজরায়েলি বাহিনী। আবাসিক ভবনগুলোকে নিশানা করেই ইচ্ছা করে হামলা চালাচ্ছে নেতানিয়াহু বাহিনী। সূত্রের খবর, গাজার উত্তরে বাসিন্দাদের বাড়ি লক্ষ্য করে শেল হামলায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে গত কয়েক ঘণ্টায়। এভাবেই হামলার প্রাবাল্য বাড়িয়ে চলেছে ইজরায়েলি সেনা প্রতিমুহূর্তে। আল-মাওয়াসি জেলায় যে জায়গাটাকে ইজরায়েলি বাহিনী নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছে, যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি, সেখানে গিয়েই আগুন ধরিয়ে দিয়ে এসেছে নেতানিয়াহু সেনা।

হামাস সেনা প্রতিহত করার চেয়েও গাজাবাসীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই যেন মূল উদ্দেশ্য নেতানিয়াহু বাহিনীর। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনও একটাই কথা বলে যাচ্ছেন বারবার, হামাসকে যুদ্ধে হারানো ছাড়া আর বিকল্প পন্থা নেই তাদের হাতে। কিন্তু কীসের বিনিময়ে হামাসদের হারাতে চাইছেন ইজরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধান? হাজার হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের প্রাণের বিনিময়ে। ইতিমধ্যেই গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছুঁই ছুঁই। জখমের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে লাখের ঘরে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে রয়েছে গণহত্যার অভিযোগ। তা সত্ত্বেও সেসবে ভ্রূক্ষেপ নেই ইজরায়েলের। যে কোনও কিছুর বিনিময়ে তাঁরা হামাসকে শেষ করতে চায়। আর সেই চাওয়ার নেপথ্যে আসলে লুকিয়ে থাকে গোটা গাজাকে 'নেই' করে দেওয়ার এক সুপ্ত ইচ্ছা।

আরও পড়ুন: ভুলস্বীকার নাটকই! রাফাহ শহর ধ্বংস করেই থামবে ইজরায়েল?

হামাস নেতারা বলছেন, কোনও শর্তেই  যুদ্ধবিরতির পথে যেতে রাজি নয় ইজরায়েল। বরং নির্বিচারে নিরপরাধ মানুষকে গণকবর রচনাতেই বেশি মন ইজরায়েল সরকারের। ইজরায়েলের জেলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপরও মাত্রাহীন অত্যাচার বাড়িয়েছে ইজরায়েল। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ইজরায়েলি সেনা। আর কতদিন চলবে এই ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ? আর কতদিন এভাবেই বেঘোরে মরতে থাকবেন নিরপরাধ মানুষজন? তার উত্তর নেই পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশের কাছেই।

 

More Articles