খাস কলকাতা থেকে গ্রেফতার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঁই! কোথায় দাঁড়িয়ে নিট-তদন্ত?
NEET Row: এরই মধ্যে আবার কলকাতা থেকে গ্রেফতার হল প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডের এক চাঁই। নিটের মেধা তালিকায় জায়গা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক পরীক্ষার্থীর বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
নিট পরীক্ষায় ঘোরতর অনিয়ম। অনিশ্চয়তার মুখে দেশের লক্ষ লক্ষ ডাক্তারি পড়ুয়ার ভবিষ্য়ৎ। যত দিন যাচ্ছে সামনে আসছে একের পর এক অভিযোগ। কোথাও ফাঁস প্রশ্নপত্র, তো কোথাও ওএমআর শিটে গোলযোগ। কোথাও আবার পরীক্ষার্থীরা পূর্ণ সময় পরীক্ষাই দিতে পারেননি। তাদের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নম্বর। যার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অন্যান্য পড়ুয়া। নিট প্রসঙ্গে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পরীক্ষাটির পরিচালনসংস্থা NTA। পূর্ণ সময় পরীক্ষা দিতে না পারা পরীক্ষার্থীদের জন্য পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হলেও সেই দিন পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। বিহার থেকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে জড়িত চার ব্যক্তি। পটনা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআইও। শুধু কি তাই, খাস কলকাতা থেকে ধৃত প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঁই। এরই মধ্যে নিট কাণ্ডে মুখ খুললেন খোদ দেশের রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার দ্রৌপদী মুর্মু নিট পরীক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাবেই।
এরই মধ্যে নিট -দুর্নীতি মামলায় নয়া মোড়। সম্প্রতি নিট-ইউজি পরীক্ষায় কারচুপির অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল একটি লার্নিং অ্যাপ। তার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (NTA)-কে নোটিস পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে হবে NTA-কে। গত ৫ মে-র নিট পরীক্ষায় ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীকে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার অভিযোগ ওঠে NTA-র বিরুদ্ধে। পরে সুপ্রিম কোর্টের সামনে সেই নির্দেশ রদ করার সিদ্ধান্ত নেয় NTA। আবেদনকারীদের দাবি, এই ধরনের কার্যকলাপ আসলে পরীক্ষার সামগ্রিক ব়্যাঙ্কিং পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়।
আরও পড়ুন: ২৪ জন কর্মী নিয়ে নিট-নেটের মতো পরীক্ষা পরিচালনা! NTA-এর ভয়াবহ গাফিলতি ফাঁস
পরীক্ষায় কারচুপি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের একাধিক মামলার তদন্তের ভার ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে। গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছে সিবিআই। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে সিবিআই। গ্রেফতারও হয়েছে কয়েকজন। বৃহস্পতিবার পটনা থেকে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছে মণীশ কুমার এবং আশুতোষ কুমার নামে দুই অভিযুক্ত। নিট কাণ্ডে এই প্রথম গ্রেফতারি সিবিআইয়ের। জাল প্রশ্নপত্র কাণ্ডে তারাই নিরাপদ জায়গা খুঁজে দেয়, যেখানে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ফাঁস প্রশ্নপত্র। মণীশ ও আশুতোষ ছাড়াও সিবিআই আরও ৬ জনের এফআইআর দায়ের করেছে।
বুধবারই ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ থেকে নিট প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলায় স্থানীয় এক স্কুলের অধ্যক্ষকে জেরা করেছে সিবিআই। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ মরুদ্যান স্কুলের অধ্যক্ষ আহসানুল হককে আটকও করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পাশাপাশি হাজারিবাগের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-এর একটি শাখা এবং কুরিয়ার কোম্পানি ব্লু ডার্টের একটি অফিসেও যায় সিবিআই। অভিযোগ উঠেছে, সেই অফিসটি থেকে ৩ মে ই-রিকশা ব্যবহার করে ব্যাঙ্কে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে আবার কলকাতা থেকে গ্রেফতার হল প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডের এক চাঁই। নিটের মেধা তালিকায় জায়গা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক পরীক্ষার্থীর বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আদতে কলকাতার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকী কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের ভর্তির নিশ্চয়তা দিয়েও টাকা রোজগার করেছে সে। শেক্সপিয়র সরণী থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও কোনও বড় চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা অভিযুক্ত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুজরাট, রাজস্থানেও ইতিমধ্যে জোরদার তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এরই মধ্যে আবার পুনরায় নিট পরীক্ষার বিরুদ্ধে সওয়াল করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ২ পরীক্ষার্থী। তারা আদালতে জানিয়েছে, কয়েক জনের অপকর্মের জন্য গোটা পরীক্ষা বাতিল করা অনুচিত। বছরের পর বছর খেটে তাঁরা ওই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। মেরঠের বাসিন্দা ওই দুই আবেদনকারী যথাক্রমে ৭০৫ ও ৬৯০ নম্বর ব্যাগে পুরেছেন নিট পরীক্ষায়। তাঁদের দাবি, দেশের কঠিনতম পরীক্ষাগুলির একটি এই নিট। তা পুনরায় নেওয়ার ফলে অনেকেরই ফলাফলে তার প্রভাব পড়তে পারে। গত ১৩ জুন এই রিট পিটিশনের ভিত্তিতে একটি নোটিস জারি করেছিল বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার অবকাশকালীন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন:৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে NEET প্রশ্ন! গ্রেফতারের পর কবুল মূল চক্রীর
সব মিলিয়ে নিট কাণ্ড নিয়ে ক্রমশ জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে শিক্ষাদুর্নীতি নিয়ে সরব সব মহল। তদন্তে নেমেছে সিবিআই। নিট পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থা NTA-র ভূমিকা নিয়েও উঠে গিয়েছে প্রশ্ন। নিটের সঙ্গে সঙ্গেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে নেট নিয়েও। পরীক্ষার পরের দিনই বাতিল হয়ে গিয়েছে ইউজিসি নেট পরীক্ষা। যার মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ হয়। একই সঙ্গে জুনিয়র ফেলোশিপ ও পিএইচডি পাওয়ার ছাড়পত্রও পান যোগ্যরা। সেই পরীক্ষারও নিয়ামক সংস্থা NTA। ফলে সার্বিক ভাবেই দেশের পরীক্ষা প্রক্রিয়া নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।