শহর জুড়ে বাড়ছে পার্কিং জুলুম! বিজেপিকে দুষে এবার কড়া সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা

Mamata Banerjee on Illegal Parking: বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠক থেকে বিজেপিকে তোপ দেগে বলেন, রাজ্যে যত বেআইনি পার্কিং রয়েছে, তার বেশির ভাগটাই বিজেপির লোকজনের।

জবরদখলের পর এবার বেআইনি পার্কিং নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। শুধু সরবই হলেন না, সরাসরি তার জন্য বিজেপিকে কাঠগড়ায়ও তুলেছেন মমতা। বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠক থেকে বিজেপিকে তোপ দেগে বলেন, রাজ্যে যত বেআইনি পার্কিং রয়েছে, তার বেশির ভাগটাই বিজেপির লোকজনের। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই আসরে নেমেছে বিজেপিও। তাঁদের পাল্টা দাবি, তৃণমূল আর পুলিশ মিলে পার্কিংয়ের নামে তোলাবাজি করছে শহর জুড়ে, আর মুখ্যমন্ত্রী সেই দায় চাপাচ্ছে বিজেপির উপরে।

স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা। বৃহস্পতিবার বেআইনি ভাবে দখল হয়ে থাকা ফুটপাথ দখলমুক্ত করা নিয়ে বৈঠক ডাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পুরবৈঠকে জমি জবরদখল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকেই দেশের পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু পুরসভাগুলি নেমে পড়ে রাস্তা দখলমুক্ত করার অভিযানে। জায়গায় জায়গায় চলে হকার উচ্ছেদ। এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে নবান্নে ফের বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বৃহস্পতিবার উঠে আসে বেআইনি পার্কিংয়ের প্রসঙ্গ।

আরও পড়ুন: মমতার বিধান: হকার বসালেই গ্রেফতার, পুনর্বাসন পাবে উচ্ছেদ হওয়ারা?

সোমবারের বৈঠকেও এ বিষয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর এদিনও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা। জানান, ‘‘যত বেআইনি পার্কিং রয়েছে, তার বেশির ভাগটাই বিজেপির লোকের। আমাদের লোকেরাই টাকা নিয়ে ওদের হাতে তুলে দেয়।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘পুলিশ-নেতাদের টাকা খাইয়ে অনেক জায়গায় বেআইনি পার্কিং জোন তৈরি হয়েছে।' নবান্ন থেকে এ দিন তিনি সাফ জানান, 'বেআইনি পার্কিংগুলি ভেঙে দিতে হবে।' এক্ষেত্রে কলকাতায় কতগুলি বেআইনি পার্কিং জোন রয়েছে তা জনানোর জন্য পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। একইসঙ্গে রাজারহাট, নিউটাউন, হাওড়া, আসানসোল ও দুর্গাপুরে কত বেআইনি পার্কিং রয়েছে তারও হিসেব চেয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানান, 'ওই জায়গাগুলি আইনি পার্কিং জোন তৈরি হওয়ার উপযুক্ত কি না তা জানতে হবে। যদি উপযুক্ত হয় তবে টেন্ডার করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে হবে এই টেন্ডার। এটা মেয়র নিজে দেখবেন। দেখে রিপোর্ট দেবে। নিজেরা করে দেবে না। সিপিকে সঙ্গে রাখতে হবে। দেখে গোটা তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে আমায় জমা দিতে হবে।' এই প্রসঙ্গে মমতা উল্লেখ করেছেন, আলিপুরে ইতিমধ্যেই 'সম্পন্ন' নামে পার্কিং জোন তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি উত্তরে হাতিবাগান ও বেহালাতেও একই রকম পার্কিং জোন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বড়বাজার এলাকার বেআইনি পার্কিং নিয়েও এদিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা। জানান, 'ফুটপাথের উপরেও গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। স্পষ্ট বলে দিতে হবে, এটা কারও জমিদারি নয়। বেআইনি গাড়ি পার্কিং জোন ভেঙে দিয়ে, কোথায় কোথায় আইনিভাবে করা যায় সেটা দেখতে হবে। সম্পন্ন যে ভাবে হয়েছে, তেমন যদি আর ৫-৭টা হয়ে যায় তাহলে পার্কিংয়ের সমস্যাটা মিটে যাবে। যদি উপযুক্ত জায়গা হয়, অন্য কোনও সমস্যা না থাকে, তাহলে আইনিভাবে আমরা পার্কিং জোন করে দেবেন। বেআইনিভাবে করে টাকা কামাতে দেব কেন?' একইসঙ্গে কাদের টাকা দিয়ে এই ধরনের বেআইনি পার্কিং তৈরি করা হয়েছে, সেই বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা শহরের মলের পার্কিংগুলি বেআইনি না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গলা কাটা টাকা ঘণ্টা প্রতি চাওয়া হয় এসব জায়গায় পার্কিংয়ের জন্য। সে নিয়েও নানা মহলে অভিযোগ উঠেছে।

এই প্রথম নয় অবশ্য। গত বছরও পোস্তা এলাকায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে বেআইনি পার্কিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। জানিয়েছিলেন, ওই এলাকায় সমস্যার কথা তিনি জানেন। কেউ পার্কিং করলে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। তবে শহর জুড়ে তারপরেও বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা বেড়েছে। জায়গা পেলেই রাস্তাঘাটে নিয়ম না মেনেই পার্কিং করে ফেলছেন মানুষজন। কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ নিয়ে ফেঁদে ফেলেছেন ধান্দাও। এই বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য় বিজেপির উপরেই দোষ চাপিয়েছেন মমতা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ী পাল্টা বলেন, ‘‘কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যে পার্কিং রয়েছে, সেখানে রসিদ ছাড়া টাকা তোলা হচ্ছে। তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা এবং বরো চেয়ারম্যানেরা সেই টাকা নিচ্ছেন। টাকা তুলছে তৃণমূল, আর দায় চাপানো হচ্ছে আমাদের ঘাড়ে! প্রশাসনে কি বিজেপি রয়েছে?’’

আরও পড়ুন:বাঙালি বনাম অবাঙালি: বেছে বেছে সুজিতকেই কেন নিশানা করলেন মমতা?

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। মাস খানেক আগেই কয়েক মাস আগে এই পার্কিং নিয়েই শিবপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে সংঘাত বাঁধে হাওড়ার পুরপ্রশাসক সুজয় চক্রবর্তীর। বৃহস্পতিবার সেই ঘটনাটির কথাও বৈঠকে তোলেন মমতা। হাওড়ার প্রসঙ্গ তুলে তাঁর দাবি, ‘‘হাওড়াতে তো দেখার কেউ নেই। তাই ওখানে যে যেমন পারছে লুট করছে।’’ বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাথ দখল করেও গাড়ি, মোটরসাইকেল পার্ক করা থাকছে বলেও অভিযোগ উঠেছে নানা মহল থেকে। পুলিশকে সেই বিষয়টিও দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্কিং নিয়ে মমতার সাফ বার্তা, যত বেআইনি পার্কিং রয়েছে, তা ভেঙে দিতে হবে। কোনও পার্কিংকে যদি আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে সেটাও করা যেতে পারে প্রশাসনের অনুমতি অনুযায়ী। কিন্তু কোনও ভাবেই টাকা তোলার জন্য পার্কিং চালানো যাবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন এদিন মুখ্যমন্ত্রী।

More Articles