মস্তানদের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট দিতেন কংগ্রেসের বদুবাবুই
Congress Mastan Bodu Babu: সরাসরি ভানু বোস, গোপাল পাঁঠাদের উদ্বাস্তু উচ্ছেদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতেন বদুবাবু।
কলকাতার মস্তানরাজ আসলে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে গড়ে ওঠা প্রকাশ্য মঞ্চের ব্যাকস্টেজের গল্প। স্বাধীনতার পর বাংলায় যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাতে শাসক কংগ্রেস আর বিপক্ষে ডানা ঝাপটানো বাম রাজনীতি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের উপস্থিতি, এই পরিমণ্ডলেই শাসকদল এবং নির্দিষ্ট শাসকঘনিষ্ঠ শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করতেই মস্তানদের উৎপত্তি। এই মস্তানরা কংগ্রেস আমলে রাজনীতির অঙ্গনে পা ফেলতে পারেননি কিন্তু তারা রাজনীতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের প্রতিটি চলাফেরা, কর্মকাণ্ড সব কিছুই রাজনীতির অঙ্গুলি হেলনে নিয়ন্ত্রিত হতো।
কলকাতার প্রথম সংগঠিত আন্ডারওয়ার্ল্ড যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থেকেই সুসংবদ্ধ হয়েছিল, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই জগতের একের পর এক চরিত্র নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ করলেও এই আখ্যান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি আমরা একটি বিশেষ চরিত্রকে না চিনি। বদুবাবু। নির্মলেন্দু দে। যাঁর অঙ্গুলিহেলনে কলকাতার মস্তানতন্ত্র পরিচালিত হতো কিন্তু এই অঙ্গুলিহেলন বদুবাবুর নিজস্ব ব্যক্তিগত এজেন্ডা চরিতার্থ করতে নয়। এই অঙ্গুলিহেলন পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং শাসকঘনিষ্ঠ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার্থে। বদুবাবুই মস্তানদের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট দিতেন। একথা সাধারণ মানুষজনের জানার কথা ছিল না কিন্তু কলকাতার উপরতলার মানুষ আর কংগ্রেস রাজনীতির হাঁড়ির খোঁজ রাখা লোকজন বিলক্ষণ জানতেন নির্মলেন্দু দে কে? কী করেন! তাঁর নাম চাপা স্বরেই নিতেন তারা। এমনই প্রবল প্রতাপ ছিল বদুবাবুর।
তবে, কলকাতার সংগঠিত মস্তানতন্ত্র বুঝতে হলে যেমন বদুবাবুকে বোঝা দরকার, ঠিক তেমনই বদুবাবুকে বুঝতে হলে বোঝা দরকার অতুল্য ঘোষের রাজনীতি। নির্মলেন্দু দে ছিলেন অতুল্য ঘোষেরই ছায়া। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে আদতে অতুল্য ঘোষেরই ইচ্ছা ও নির্দেশ প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বদুবাবুর গল্প আসলে অতুল্য ঘোষের রাজনীতির হেঁসেলের গল্প। অতুল্য ঘোষকে মামা বলে সম্বোধন করতেন বদুবাবু। তাই রাজনৈতিকমহল জানত, বদুবাবু অতুল্য ঘোষের ভাগ্নে। আদতে গল্পটা ঠিক তা নয়। নির্মলেন্দু দে-র মামা সুকুমার দত্ত ছিলেন অতুল্য ঘোষের বন্ধু। সেই সূত্রেই বদুবাবুর সঙ্গে অতুল্য ঘোষের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তবে আরও একটা ঘনিষ্ঠতা ছিল। শ্রেণি বন্ধুত্ব। অতুল্য ঘোষ বাংলায় কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তুলতে যে শ্রেণিকে সহায়ক ও বন্ধু বলে বিবেচনা করেছেন, বদুবাবু ছিলেন সেই জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি। আরও একটা মিল ছিল, দু'জনেরই জেলা ছিল হুগলি। নির্মলেন্দু দে-র পরিবার হুগলির বেগমপুরের জমিদার। গ্রামে জমিদারির সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতায় বাড়ি এবং ব্যবসা। এই শ্রেণি অতুল্য ঘোষের রাজনীতির সহায়ক শ্রেণি।
আরও পড়ুন- ‘চাকরি দিলাম, মা-কে খাওয়াবি’! জ্যোতি বসুকেও থামিয়ে দিতেন মস্তান-মন্ত্রী রাম চ্যাটার্জি
ম্যাট্রিক পাস করেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় বদুবাবুর। অতুল্য ঘোষ যখন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন, বদুবাবু হন প্রদেশ কংগ্রেস সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। বোধহয় সবচেয়ে প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক। যতটুকু অনুমান করা যায়, বদুবাবুর এই প্রভাবের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল অর্থবল এবং বাহুবলের ওপর তাঁর অবাধ নিয়ন্ত্রণ। সবটাই অতুল্য ঘোষের জন্য। তাঁরই নির্দেশে, তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায়। অতুল্য ঘোষ ভিন্ন বদুবাবুর রাজনৈতিক-সামাজিক জীবনে আর কোনও পৃথক অস্তিত্ব ছিল না। এমনকী বঙ্গেশ্বর অতুল্য ঘোষের ছায়াসঙ্গীর নিজের গল্প বলে তেমন কিছুই ছিল না। সবটাই অতুল্য ঘোষকে ঘিরে। তাঁর পরিবার, কন্যারাও তাই জানেন। বাবার গল্পের চেয়েও অতুল্যদাদুর গল্পই তাঁরা বেশি জানেন। অতুল্যবৃত্তে 'বাবা' এক চরিত্র মাত্র, এমনটাই উপলব্ধি বদুবাবুর ছোট মেয়ে ইন্দ্রাণী মিত্রেরও। আলাদা করে বাবার রাজনৈতিক গল্প বলার মতো কিছু জানেন না ইন্দ্রাণীরা।
অথচ চৌরঙ্গীর পুরনো কংগ্রেস অফিসে কী প্রবল প্রতাপ ছিল বদুবাবুর। অতুল্য ঘোষের পাশেই তাঁর ছোট অফিসঘর। তরুণ ছাত্রনেতাদের স্মৃতিতে, তাঁকে বেশ অহংকারী এবং দাম্ভিক দেখাত। প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে যেমন বলেন, "আমরা ছাত্র-কর্মী-নেতারা অতুল্যবাবুর ঘরে যেতাম। কোনও বাধা ছিল না। আমাদের সঙ্গে মুড়ি খেতেন অতুল্যবাবু। হাসি-ঠাট্টা, আবার মিটিং করবার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা সবই করে দিতেন অতুল্য ঘোষ। ছোটদের প্রতি আন্তরিক এবং উদার কিন্তু নির্মলেন্দু দে-র ঘরে আমরা ঢুকতাম না। যে কেউ ঢুকে যেত না, বেশ দাম্ভিক, গম্ভীর, অহংকারী দেখাত তাঁকে।" এই কথাগুলোর সঙ্গে যদিও নিজের দেখা বাবাকে মেলাতে পারেননি ইন্দ্রাণী মিত্র। ঘরে বদুবাবু আর পাঁচজনের মতোই আন্তরিক।
যাইহোক, আজকের এই আখ্যান ব্যক্তি বদুবাবুর আখ্যান নয়। একটা ফেলে আসা সময় আর একটা ক্ষমতাসীন শ্রেণির গল্প। মার্কাস এফ ফ্রান্ডা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ 'দ্য পলিটিক্যাল ইডিওমস অফ অতুল্য ঘোষ'-এ দেখিয়েছেন, কীভাবে অতুল্য ঘোষ গ্রামে কংগ্রেস সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রামীণ প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের উপর নির্ভর করতেন। অর্থাৎ জমিদার, ব্রাহ্মণ এবং জমিদারের বদান্যতায় বাঁচা চাষি, ভাগচাষি ও অন্যান্য মানুষজন— এই চিরাচরিত গ্রামীণ সামাজিক ক্ষমতার আধারকেই নির্বাচনী সাফল্যের চেনা অঙ্ক হিসেবে মানতেন অতুল্য ঘোষ। শুধু সমর্থন নয়, সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থব্যয়ও করতেন তারা।
স্বাভাবিকভাবেই এই পৃষ্ঠপোষক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করা অতুল্য ঘোষের কাছেও ছিল বড় দায়। আর পঞ্চাশের দশক থেকেই সারা রাজ্য এবং কলকাতা শহরে এই সব কায়েমি স্বার্থে আঘাত আসছিল। অবশ্যই তা বাম আন্দোলনের জেরে। তবে অতুল্য ঘোষের কংগ্রেসের সামন্ততান্ত্রিক সংগঠন নির্ভরতা ভোটে কাজেও দিত। খাদ্য আন্দোলনের সময় যখন শহর কলকাতা লালে লাল, তখনও অতুল্য ঘোষের বিখ্যাত উক্তি ছিল, "গ্রাম আমাদের সঙ্গে। শহরের ভোট যদি কমেও, তবু আমরা গ্রামের ভোটে জিতব"। এবং হয়েছিলও তাই! গ্রামের ভোটেই তৃতীয়বার সরকার গড়ে ছিল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিধানচন্দ্র রায়।
আরও পড়ুন- মিতা বলে ডাকতেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার ‘মস্তান’ ভানু বোসের ম্যাজিক আজও অমলিন
লেখক সুপ্রিয় চৌধুরী তাঁর 'পাতাল পুরাণ' বইতে লিখেছেন, মধ্য কলকাতার মস্তানরা উদ্বাস্তুদের কলোনি আক্রমণ করছে এবং বহুক্ষেত্রেই বাস্তুহারা মানুষদের সংগঠিত প্রতিরোধের মুখে পিছু হটছে। এই আখ্যানগুলিতেই অলক্ষ্যে লুকিয়ে আছেন বদুবাবু।
দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সরকারি, বেসরকারি জমি জবরদখল করে বসতি স্থাপন করছে উদ্বাস্তু মানুষজন। এই পর্বে বিজয়গড় ও সংলগ্ন অঞ্চলে বহু জমি লায়েলকাদের ছিল। পাশেই ছিল দাগা বাঙ্গুরদের জমি প্রমোদ কানন। মনে রাখতে হবে, টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়া তখন রমরম করছে। দক্ষিণ শহরতলিতে গড়ে উঠছে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের বিলাসভবন, বাগানবাড়ি। উদ্বাস্তুদের জবরদখলের জেরে এই সব জমিতে গড়ে ওঠে কলোনি। স্বাভাবিকভাবেই জমি পুনরুদ্ধারে কংগ্রেসের দিকপাল নেতা বদুবাবুর শরণাপন্ন হন ব্যবসায়ী ও জমিদারেরা। তখন এই শ্রেণি বান্ধবদের সাহায্য করতেই সরাসরি ভানু বোস, গোপাল পাঁঠাদের উদ্বাস্তু উচ্ছেদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতেন বদুবাবু। সেই সময় ভোটের কাজে এই সব মস্তানবাহিনী পরিচালনাও ছিল তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে।
মধ্য ও উত্তর কলকাতায় গোপাল পাঁঠা এক বিশিষ্ট চরিত্র ছিলেন। ১৯৪৬-এর দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে এই সব অঞ্চলের প্রাচীন পরিবারগুলির কাছে 'হিন্দু হৃদয়সম্রাট' হিসেবে তাঁর একটা ছবি ছিল। দক্ষিণে উদ্বাস্তু মানুষের কাছে গোপাল পাঁঠা ছিলেন এক ঘৃণ্য চরিত্র। ভানু বোসও তাই। তারা বহুবার জমিদারদের হয়ে যে কলোনি উচ্ছেদ করতে এসেছিলেন, এই সব গল্প মুখে মুখে ফিরত কলোনির বয়স্ক মানুষজনের মধ্যে। 'অগোরে মাইর্যা ভাগানোর' গল্পও তাঁরা বলতেন গর্বের সঙ্গে।
ভানু-গোপালদের এই সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আড়ালে জড়িয়ে ছিলেন নির্মলেন্দু দে। উদ্বাস্তুরা এসে শুধু নতুন সমাজ গড়লেন না, নতুন রাজনীতিরও হাওয়া উঠল দক্ষিণে। প্রাথমিকভাবে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি উদ্বাস্তুদের মধ্যে সংক্রমিত হলেও বাম রাজনীতি স্থায়িত্ব পেল। টালিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মধ্য কলকাতার বাঘা মস্তানদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলল নবীন মস্তানরা। এরা রাজনৈতিকভাবে কেউ কংগ্রেসের সঙ্গে তো কেউ আবার বাংলা কংগ্রেস বা ফরোয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে ছিলেন। দক্ষিণ তখন কাঁপছে টুলু মুখার্জির নামে। মধ্য কলকাতার মস্তানদের নকল করে সেও আয়োজন করত বিরাট জলসার। একবার অশোককুমার নাইট করল টুলু। অশোককুমার এলেন কিন্তু বাকি শিল্পীরা, যেমন আশা ভোঁসলে, মহম্মদ রফিরা এলেন না। টিকিট কেটে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে হতাশ জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। ভাঙচুর, তাণ্ডব। মহিলাদের গায়ের কাপড় খুলে নিল একদল তথাকথিত 'শ্রোতা'। বিরাট ঘটনা ঘটে গেল সেবার দক্ষিণে। টুলু মুখার্জির গল্প অন্যত্র আসবে। আপাতত এটুকুই। আবার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চরিত্র ছিলেন রোবো খান। বাংলা কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক হয়ে পরে আজীবন সিপিএমের ছত্রছায়ায় ছিলেন রোবো খান। উত্তরের মস্তানদের সঙ্গে এলাকা দখলের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিল টালিগঞ্জের এই রোবো খানের। তখন টালিগঞ্জ অঞ্চলের এই মস্তানির প্রতিবেদন প্রায় নিত্যদিন ছাপা হতো তৎকালীন দৈনিক সংবাদপত্রে।
দক্ষিণের মস্তানদের পেছনে ছিল কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যক্ষ মদত। বাকিটা মস্তানদের নিজস্ব এলাকা দখলের লড়াই। টালিগঞ্জ, রাসবিহারী, কুঁদঘাট অঞ্চলের মস্তানির আখ্যান একটা স্বতন্ত্র বিষয়। পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
আপাতত আবার ফিরে আসি বদুবাবুর গল্পে। বদুবাবুর ১৮ এ হরিতকি বাগান লেনের প্রসাদোপম বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে অতীতের স্মৃতির স্মারক হিসেবে। যে বাড়ি, যে দুর্গাদালান তার শ্রেণি চরিত্রের হদিশ দেয় আজও। বদুবাবুর বাড়িতে অবশ্য কোনও শিল্পপতি বা মস্তানদের আসতে দেখেননি বা এরকম কিছুই শোনেননি কন্যা ইন্দ্রাণী। বরং তাঁর স্মৃতিতে জেগে আছে বাবার ঘরে উপচে পড়া সাধারণ মানুষের ভিড়। অতুল্য ঘোষের কংগ্রেস সংগঠন মেশিনারি ছিল ক্ষমতার এক সমান্তরাল কাঠামো। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনিক কাঠামোর পাশেই অতুল্য ঘোষ, নির্মলেন্দু দে-রাও ছিলেন সমান্তরাল ক্ষমতার অধীশ্বর। জনপ্রতিনিধিত্ব নয়, সংগঠনের জোরেই এরা ছিলেন বেতাজ বাদশা।
আরও পড়ুন- যৌনকর্মী, বেপরোয়া প্রেমিকা! কে ছিলেন কলকাতার প্রথম মহিলা মস্তান নির্মলা দাসী?
বাংলার সমাজে তখন ঘটি-বাঙাল বিভাজন চরমে। জন্মগত এবং শ্রেণিগত অবস্থানে বদুবাবুরও বাঙাল বিদ্বেষ ছিল প্রবল— এমনটাই জনশ্রুতি।
যেদিন বঙ্গে কংগ্রেসের সুসময় ছিল, সেদিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি বদুবাবু। তবে দুঃসময়ে, ১৯৭৮ সালে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়ান। হারবেন জেনেও দাঁড়ান এবং হারেন কিন্তু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসেননি কখনও। অতুল্য ঘোষ রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর বদুবাবুও রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ততদিনে বাংলার রাজনীতির পরিমণ্ডল বদলে গেছে। পরে জয়প্রকাশ নারায়ণের দেশজোড়া আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় জনতা দলের সঙ্গে যুক্ত হন বদুবাবু। জয় প্রকাশ নারায়ণকে কলকাতায় যারা নিয়ে এসেছিলেন তাঁর মধ্যে অন্যতম এই নির্মলেন্দু দে।
তবে অতুল্য ঘোষ নামক কায়া যেদিন রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান, সর্বক্ষণের ছায়া বদুবাবুও অন্তরালে চলে যান। খানিকটা স্বেচ্ছবসরও বলা চলে। ষাটের দশক শেষ হতে বদুবাবুর 'সেলিব্রিটি' মস্তানরাও ঘরে ঢুকে গেলেন রাজপাট রাস্তায় ফেলে রেখে। তারপরও তারা টিকে ছিলেন। তবে সেই রমঝম আর ছিল কোথায়! একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খসে পড়তেই কলকাতার প্রথম সংগঠিত মস্তানতন্ত্র শেষ হলো।