৯ জনের মৃত্যু, ২৭৫০ জন আহত! লেবাননে কীভাবে ঘটল পেজার বিস্ফোরণ?

Lebanon Pager Explosion: ইজরায়েল যাতে কোনওভাবেই হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর উপর নজরদারি না চালাতে পারে, যোগাযোগ হাতিয়ে আক্রমণ না করতে পারে তাই পেজার ব্যবহার।

নিরীহ পেজার। এককালে ব্যাপক ব্যবহৃত মেসেজিং যন্ত্র। সেই সামান্য যন্ত্রই প্রাণ নিল অন্তত ৯ জন মানুষের। আহত হয়েছেন প্রায় ২৭৫০ জন মানুষ! লেবানন জুড়ে এই মারাত্মক পেজার বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে এক আট বছর বয়সি শিশুও। মঙ্গলবার এই পেজার বিস্ফোরণের পরে অন্তত ২০০ জনেরও বেশি মানুষের অবস্থা গুরুতর। বেশিরভাগেরই মুখ, হাত এবং পেটে ভয়াবহ আঘাতের খবর পাওয়া গেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ পেজার বিস্ফোরণের জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করেছে।

হিজবুল্লাহ বলছে, এই ঘৃণ্য আক্রমণের জন্য 'উপযুক্ত শাস্তি' পাবে ইজরায়েল। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রকাশিত একটি বিবৃতি অনুযায়ী, প্রায় এক বছর ধরে ইজরায়েলের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন আন্তঃসীমান্ত গুলি বিনিময় চলছে লেবাননের। যদিও এই হামলা বিষয়ে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী কোনও মন্তব্যই করেনি। গত ৭ অক্টোবর যখন ইজরায়েলে হামাস হামলা চালায় এবং তারপর থেকে গাজা ও ইজরায়েলের ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয় তখন থেকেই হিজবুল্লাহ লড়ছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাঁদের দুই যোদ্ধা এবং একটি মেয়ে এই বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে কারণ হিজবুল্লাহর বিভিন্ন শাখা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পেজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। হিজবুল্লাহর নিজস্ব পেজারে কীভাবে ঘটতে পারে বিস্ফোরণ?

আরও পড়ুন- গাজার পর লেবাননেও ‘মারণ’ ফসফরাস হামলা! যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে

এই পেজার বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন লেবাননে ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতাবা আমানিও। এই ঘটনায় আগে থেকেই হাত তুলে নিয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতও নয় এবং কারা আসলে দায়ী তাও সেই দেশ জানে না। "আমরা এই ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিল না," মিলার বলেছেন।

দক্ষিণ লেবাননে, দেশের পূর্বে এবং বেইরুটের দক্ষিণ শহরতলির কাছে-একযোগে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে এই পেজার যন্ত্রগুলির মাধ্যমেই। কোনওভাবে সেই যন্ত্র হ্যাক করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ কয়েক মাস আগে তাঁদের যোদ্ধাদের স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানান কারণ ইজরায়েল চাইলে যে কোনওভাবে সেই স্মার্টফোন হ্যাক করতে পারে। সেই প্রযুক্তি তাঁদের রয়েছে। এর পর থেকে পেজার ব্যবহার করেই যোগাযোগ চালাত হিজবুল্লাহ। কিন্তু তাতেও রক্ষা হলো না।

আরও পড়ুন- আরও এক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা! হিজবুল্লাহের সঙ্গে সংঘাত কোথায় নিয়ে যাবে ইজরায়েলকে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী পেজারের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। ইজরায়েল যাতে কোনওভাবেই এই গোষ্ঠীর উপর নজরদারি না চালাতে পারে, যোগাযোগ হাতিয়ে আক্রমণ না করতে পারে তাই পেজার ব্যবহার। এক্ষেত্রে হতে পারে, হিজবুল্লাহর সদস্যরা ওই পেজার পাওয়ার আগেই সেগুলিকে ইজরায়েল নিজেদের দখলে রেখে নিয়েছিল। অর্থাৎ 'ট্যাম্পার্ড পেজার'-ই ব্যবহার করছিলেন হিজবুল্লাহ সদস্যরা। পেজার কোনও নতুন যন্ত্র নয়। তাই এক্ষেত্রে কোনও তৃতীয় পক্ষের এই পেজারের উপর দখল থাকার আশঙ্কা থাকছেই, যে কারণে দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটানোর অ্যাক্সেস অপরপক্ষের হাতে ছিলই।

মঙ্গলবারই ইজরায়েল সরকারিভাবে যুদ্ধ সম্প্রসারণের ঘোষণা করেছিল। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, লেবাননের সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে পালিয়ে আসা ইজরায়েলিরা যাতে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লেবাননে ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং হামাসের বন্ধু হিজবুল্লাহর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ফলে সীমান্তের দুই পাশের হাজার হাজার মানুষই ভিটেমাটি ছাড়া। ইজরায়েলি সৈন্য এবং হিজবুল্লাহর মধ্যেকার এই যুদ্ধে লেবাননে শত শত মানুষ মারা গিয়েছেন। ইজরায়েলেরও বহু সাধারণ মানুষ ও সৈন্য নিহত হয়েছে।

More Articles