বাংলাদেশে গণরোষের শিকার! কেমন আছেন বছর বাইশের উৎসব মণ্ডল?
Bangladesh: সরকার বদল হলেও অশান্তি যেন লেগেই রয়েছে বাংলাদেশে। এবার খুলনার এক সংখ্যালঘু পড়ুয়াকে বেধড়ক মারের অভিযোগ বাংলাদেশে।
সদ্য সরকার বদল হয়েছে বাংলাদেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের হাত ধরে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে বাংলাদেশে। যার ফলে সে দেশে এখন ক্ষমতায় অভ্যন্তরীণ সরকার। যে সরকারকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস। সরকার বদল হলেও অশান্তি যেন লেগেই রয়েছে বাংলাদেশে। এবার খুলনার এক সংখ্যালঘু পড়ুয়াকে বেধড়ক মারের অভিযোগ বাংলাদেশে।
অভিযোগ, মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন খুলনার সোনাডাঙায় আজম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র উৎসব মণ্ডল। এর পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে সোনাডাঙা আবাসিক এলাকায় জনতার ক্ষোভের শিকার হন বছর বাইশের ওই হিন্দু ছাত্র। প্রাথমিক ভাবে তাঁকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে এসে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রমশ ভিড় জড়ো হতে থাকে থানাচত্বরে। উৎসবকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়। পুলিশ রাজি না হলে কার্যত উৎসবকে ছিনিয়ে নেয় তারা। থানাচত্বরেই চলে ভয়ঙ্কর মার। পরিস্থিতি সামাল দিতে মিলিটারি আসে। তার পরেও চলতে থাকে গণপিটুনি।
আরও পড়ুন: ধর্ম বা রাজনীতি দিয়ে কোনও বাংলাদেশির সঙ্গে বৈষম্য হবে না! ইউনূসের আপ্তবাক্য ফলবে?
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয়ের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ ওঠে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামদের নবীকে নিয়ে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ওই কিশোর। যার বিচার করতে জমে যায় তিন-চার হাজার মানুষের ভিড়। সকলেরই দাবি, শাস্তি দেওয়া হোক উৎসবকে। তবে আইন হাতে তুলে নিতে বেশিক্ষণ সময় নেয়নি সেই উন্মত্ত ভিড়। চলে বীভৎস মারধর। জনতার মারে উৎসব নেতিয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে শবদেহ বহনের ব্য়াগে ভরে নিয়ে যায়। স্থানীয় মসজিদের লাউডস্পিকারে ঘোষণা করা হয়, মারা গিয়েছে উৎসব। তাতে খানিকটা ক্ষোভ প্রশমিত হয় জনতার। ছত্রভঙ্গ হয় ভিড়।
পরে অবশ্য সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়, উৎসব বেঁচে আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। আপাতত উৎসব বিপন্মুক্ত বলেই হাসপাতাল সূত্রের খবর। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে, জনতার ভয়ঙ্কর মারে চোখ দু'টি খুইয়েছেন বছর বাইশের ওই হিন্দু ছাত্রটি। গত ৩ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকে ওই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেছিলেন বছর বাইশের ওই যুবক। যা নিয়ে এত ঝামেলা। পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে পোস্টটি মুছেও দেন তিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ তাঁর স্ক্রিনশটটি সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন, তা পরে তাঁরা ছড়িয়ে দেন। যা কার্যত বিপাকে ফেলে উৎসবকে। ইতিমধ্যেই উৎসব মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুলনার সদর থানায় নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নাসির হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্ভয়ে থাকুন, মানববন্ধনে যে বার্তা দিলেন আন্দোলনকারীরা
পুলিশ সূত্রের খবর, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য উৎসব মণ্ডলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ প্রশাসন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়ে ব্লাসফেমির অভিযোগও। ওই যুবক সুস্থ হলে তাঁকে ল' এনফোর্সমেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে। এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে উৎসব মণ্ডলের পরিবার। তাঁর পরিবার কোথায়, কীভাবে রয়েছে, এ নিয়ে কিছু জানা যায়নি এখনও। উৎসবের বাবা দীনবন্ধু মণ্ডল খুলনার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। ঘটনার পর থেকেই কর্মস্থলে যাননি তিনি। বন্ধ তাঁর মোবাইলও। ফোনে পাওয়া যায়নি উৎসব মণ্ডলের মাকেও। গত ৫ সেপ্টেম্বর নগরীর সার্কিট হাউস ফায়ার ব্রিগেড রোড এলাকায় উৎসবের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তালাবন্ধ। পাড়াপড়শিদের থেকে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার পর থেকে উৎসবের মা-বাবা বা ভাইকে আর দেখা যায়নি। উৎসবের ভাই অসুস্থ। তবে সম্প্রতি তাঁরা উৎসবের কাছে হাসপাতালে যান বলেই খবর। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ও হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজিব কুণ্ডুর নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি দল সম্প্রতি উৎসবকে দেখতে যান হাসপাতালে। উৎসবের শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানিয়েছেন তাঁরাও। ওই যুবককে আরও দু-একদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেই হাসপাতাল সূত্রের খবর।
বাংলাদেশে সরকার বদলের পর থেকেই ভয়াবহ তাণ্ডবের ছবি আমরা দেখেছি। দেখেছি, কীভাবে ভয়াবহ লুঠপাট, ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবনে। সেই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই বারবার প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুরা কতটা নিরাপদ, আদৌ নিরাপদ কিনা? এর মধ্যে উৎসব মণ্ডলের ঘটনা যেন সেই ভয়ঙ্কর আশঙ্কাকেই ফের উস্কে তুলল। ইতিমধ্যেই সেই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।