পেট ভরাবে হাতি! ২০০ হাতিকে হত্যার মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত এই দেশের প্রশাসনের
Drought in Zimbabwe: স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুই দেশের পশুনিধন যজ্ঞ দেখে ক্ষুব্ধ পশুপ্রেমীমহল। ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে নানা মহল থেকে।
মানুষ কী না খায়! মানুষের মতো সর্বভুক প্রাণী বোধহয় পৃথিবীতে আর দু'টো নেই। গাছপালা- ফলফুল- শিকড়মূল থেকে শুরু করে সাপ,ব্যাঙ, আরশোলা— কী না খায় সে! ছাগল, ভেড়ার মতো চতুষ্পদ প্রাণী তার ভোজনতালিকায় থাকলেও হাতি বা জলহস্তির দিকে আগে কোনওদিন মানুষ হাত বাড়িয়েছে বলে শোনা যায়নি। কিন্তু খিদের বালাই বড় বালাই। বিষয়টা অবাক করা হলেও এবার নামিবিয়ার পর তেমনটাই ঘটতে চলেছে জিম্বাবোয়েতে।
দেশ জুড়ে প্রবল খরা। মানুষের পেটে একদানা খাবার নেই। জমিতে ফসল নেই। গত কয়েক দশকে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি দেশটি। দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই অভুক্ত। দেশের সরকার পারছে না মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার জিম্বাবোয়েতে হাতির জনসংখ্যা বরাবরই বেশি। হাতিশুমারি অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে হাতির সংখ্যা ৮৪ হাজারের বেশি। বতসোয়ানার পর পৃথিবীতে যা সর্বাধিক।
সহজ ছিল না সিদ্ধান্ত। তবু বাধ্য হয়েছে সরকার। খরা পরিস্থিতিতে মানুষের পেটে খাবার তুলে দিতে দু'শোটি হাতিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিম্বাবোয়ে সরকার। যাতে ক্ষুধার্ত নাগরিকদের খিদে নিবারণ করা যায় ওই হাতির মাংস দিয়ে। হ্যাঁ, মানুষ যা সাধারণত করে না, তা-ই তাঁকে করতে বাধ্য করছে খিদের বালাই। দেশের অভাবী মানুষদের মধ্যে সরকারের তরফে বিলিয়ে দেওয়া হবে জবাই করা ওইসব হাতিদের মাংস। যাতে কোনও মতে এই কঠিন সময়টুকু পেরিয়ে যেতে পারে দেশবাসী। জিম্বাবোয়ে প্রথম নয়। ভয়ঙ্কর এই খরার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়াতেও। সপ্তাহ তিনেক আগে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকারও। একই কারণে ৮৩টি হাতি-সহ প্রায় সাতশোরও বেশি বন্য প্রাণীকে হত্যা করেছে তারা।
আরও পড়ুন: শুকিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী! যে ভয়াবহ বিপদের মুখে আমাজন নদী
জিম্বাবোয়ে ন্যাশনাল পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেন্ট অথরিটির মুখপাত্র টিনাশে ফারাও জানান, যে হাতি শিকারের জন্য ওই সব এলাকায় শিকারি সম্প্রদায়কে বিশেষ পারমিট দেওয়া হবে। শুধু শিকার করলেই হবে না, হাতিগুলির মাংস বিতরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে হবে। সরকারের তরফে অনুমতি মিললেই শুরু হবে সেই কাজ। তবে হাতি দেখলেই মেরে ফেলা হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। এর জন্য এমন অঞ্চলের হাতিদের নিশানা করা হচ্ছে, যেখানে প্রবল গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য তাদের জনসংখ্যা বিপদের মুখে। খাবারদাবার খুঁজতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে হাতিদেরও। হাওয়াঙ্গে ন্যাশনাল পার্ক সংলগ্ন এলাকাতেই শিকারপর্ব সারা হবে বলে জানানো হয়েছে। ওই জাতীয় উদ্যানে ৪৫ হাজারেরও বেশি হাতি রয়েছে। যেখানে ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার মতো। এর ফলে ও জাতীয় উদ্যানে হাতির জনসংখ্যা ও বাস্তুতন্ত্রেও একটু লাগাম টানা যাবে।
স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুই দেশের পশুনিধন যজ্ঞ দেখে ক্ষুব্ধ পশুপ্রেমীমহল। ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে নানা মহল থেকে। কিন্তু সরকার নিরুপায়। এল নিনোর প্রভাব এই বছর পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ একাধিক মহাদেশে। ভয়াবহ খরার মুখোমুখি হয়েছে জিম্বাবোয়ে, নামিবিয়ার মতো দেশগুলি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে উদ্বেগ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করে আসছেন বিগত কয়েক বছর ধরেই, তার ফলাফল ভালোই বুঝতে শুরু করেছে পৃথিবীর মানুষ। যেসব দেশে গরম কল্পনা করাও ছিল অসম্ভব ব্যাপার, সেই সব দেশগুলিও অনুমানের চেয়ে বেশি গরম প্রত্যক্ষ করেছে এ বছর। যার ফল ভুগছে মানুষ, পশু-পাখি থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বের সমস্ত জীবজগৎ।
আরও পড়ুন:পাপের শাস্তি, এসেছে খারাপ সময়! জলবায়ু পরিবর্তনকে যেভাবে দেখছেন হিমালয়বাসী
১৯৮৮ সালের পর জিম্বাবোয়েতে এতবড় হাতিনিধন যজ্ঞ আর হয়েছে কিনা বলা মুশকিল। হোয়াঙ্গে, এমবিরে, চিরেদজি-র মতো একাধিক জেলায় এই হাতি মারার পরিকল্পনা রয়েছে দেশের সরকারের। মনে করা হচ্ছে, নামিবিয়ার পথে হেঁটেই মানুষকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নামিবিয়া প্রশাসন। দেশের সমস্ত জাতীয় উদ্যান মিলিয়ে মোট ধারণ ক্ষমতা ৫৫ হাজার। অথচ সেই সংখ্য়া বাড়তে বাড়তে বাড়তে ৮৪ হাজার পার করে গিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সেই হাতির প্রবল চাপ কমাতে সাহায্য করবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।