জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে মরিয়া লড়াই! সুপ্রিম কোর্টে সিব্বলকে যোগ্য জবাব ইন্দিরার
RG Kar Case: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেও কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড় আন্দোলনকারীরা। কবে কাজে ফিরবেন চিকিৎসকরা, এদিনের সুপ্রিম শুনানিতে প্রশ্ন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের।
আরজি কর মামলা নিয়ে তোলপার গোটা রাজ্য। টানা প্রায় ৩৯ দিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে আরজি কর চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি ছিল মঙ্গলবার। সেখানে রীতিমতো যুযুধান হয়ে উঠলেন রাজ্যের আইনজীবী ও জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষের আইনজীবী।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। তিলোত্তমার বিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে জুনিয়র ডাক্তারেরাও। প্রায় ৬ দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের সামনে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধর্না দিয়েছেন তাঁরা। পাঁচ বারের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সম্ভব হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। সেখানে তাঁদের নিজস্ব দাবিদাওয়া জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রীও সাধ্যমত সেসব মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিল। এমনকী সময়ও বেঁধে দিয়েছিল তার জন্য। তবে সেই সময় পেরিয়ে গেলেও কাজে ফেরেননি জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বরং আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সমর্থন করেছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরাও। মঙ্গলবার শুনানিতে ফের প্রশ্ন ওঠে, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আদৌ বিপর্যস্ত কিনা? তার উত্তরে চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের’ আইনজীবী করুণা নন্দী বলেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে বলা হয়েছে। এটা ঠিক নয়। সিনিয়র ডাক্তারেরা কাজ করছেন।”
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন! ডাক্তারদের কাজে ফেরা নিয়ে যা জানাল শীর্ষ আদালত
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেও কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড় আন্দোলনকারীরা। কবে কাজে ফিরবেন চিকিৎসকরা, এদিনের সুপ্রিম শুনানিতে প্রশ্ন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের। আর রাজ্যের পক্ষের আইনজীবীর সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারের পক্ষের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। সিব্বলের প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বুধবারের মধ্যে জিবি বৈঠকে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক মহিলা চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মেলে ধর্ষণের প্রমাণ। সেই ঘটনার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি আর কবে উঠবে, এদিন সুপ্রিম কোর্টে সেই প্রশ্ন করেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের আইনজীবী করুণা নন্দীর সাফ জানান, কাজে না ফেরার জন্য নিরাপত্তাহীনতাই মূল কারণ। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারলে কাজে ফিরতে কোনও সমস্যা নেই তাঁদের। মঙ্গল কিংবা বুধবার জিবি বৈঠকের পরই আন্দোলনকারীরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলেই সাফ জানান জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। এর পরেই রাজ্য়ের আইনজীবী জানতে চান, জুনিয়র ডাক্তারদের জেনারেল বডির বৈঠক কখন হবে, তা জানানো হোক। যদিও সেই প্রশ্ন খারিজ করে দিয়ে ইন্দিরা জানান, তা তাঁরা জানাতে অপারগ।
এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সওয়াল করার সময়ে ইন্দিরা জানান, “জুনিয়র ডাক্তারদের আস্থা অর্জনের জন্য রাজ্যের সঙ্গে তাঁদের যে বোঝাপড়া, তা নথিবদ্ধ রাখা হোক। আমরা জানি, আমাদের সব দাবি এক দিনে পূরণ হবে না। জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে ফিরতে চান। কিন্তু বিষয়ে এখনই নজর দেওয়া দরকার।” কর্মবিরতি তোলা প্রসঙ্গে ইন্দিরা বলেন, “জুনিয়র ডাক্তারেরা জেনারেল বডির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার জন্য একটু সময় লাগবে।”
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার দিন অকুস্থলে কারা ছিলেন, সেই সব নাম জমা দিতে পারবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। একই সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থাকে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, তদন্তের স্বার্থে ওই বিষয়গুলি নিয়ে সিবিআইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।
এদিন ইন্দিরা আদালতে আর্জি জানিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ যাতে না নেওয়া হয় কোর্টের তরফে। সে বিষয়ে অবশ্য কোনও কঠোর নির্দেশিকা জারি করেননি প্রধান বিচারপতি। পরিবর্তে তাঁদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে, প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, “গত শুনানিতে আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম ডাক্তারদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে। ওই বিষয়ে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে?” রাজ্যের আইনজীবী তার উত্তরে বলেন, “আমরা পদক্ষেপ করেছি। আদালতকে ওই বিষয়ে জানাচ্ছি।”
হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে রিপোর্ট দিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। রাজ্য আদালতে জানিয়েছে, রাজ্যের সব হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রাম কক্ষ, সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। চিকিৎসকদের ডিউটি রুমে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। তাতে অবশ্য সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। প্রধান বিচারপতি বলেন, “২৮টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে রাজ্যে। আরও ১৭টি হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে ১৮-২৩ বছরের তরুণীরা কাজ করেন। তাঁদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাঁদের নিরাপত্তায় চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হলে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।” রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখবেন? যেখানে সব সময় কাজ চলছে। ডাক্তাররা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করছেন। সেখানে এমন নিরাপত্তা কেন?”
আরও পড়ুন:নির্ভয়ার মাকে বলেন, ‘ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন’! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?
সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “ওই চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে কী ভাবে তাঁদের থেকে উপযুক্ত নিরাপত্তার আশা করেন? কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করতে পারে রাজ্য? রাজ্যের এই বিষয়ে ভাবা উচিত।” একই সঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে মনিটরিং কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। প্রতিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা, কোনও রকম হেনস্তার ঘটনা ঘটছে কি না, খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। সরকারি হাসপাতালে অন্তত পুলিশকর্মী রাখা উচিত বলেও এদিন মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।
এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য় পদক্ষেপ করে কিনা, সেটাই দেখার। একই সঙ্গে সুপ্রিম-নির্দেশ মেনে চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতি প্রত্য়াহার করে কাজে ফেরেন, না তাঁদের আন্দোলন জারি রাখেন, সেদিকেও নজর থাকবে গোটা দেশের।