‘মানুষের মোদি-ভয় কেটেছে!’ কেন এমন বলছেন রাহুল?
Rahul Gandhi On Modi: তিন দিনের সফরে আমেরিকা গিয়েছেন রাহুল। রাহুলের সঙ্গে রয়েছেন ‘ইন্ডিয়ান ওভারসিজ় কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদাও।
লোকসভা ভোটে জিতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেও এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি মোদি সরকার। বরং আসন বেড়ে প্রায় এক দশক পরে বিরোধীনেতার চেয়ারে বসেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। আর সেই লোকসভা ভোটের পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টেছে বলেই মনে করছেন রাহুল। মানুষ আর বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদিকে ভয় পাচ্ছেন না। সোমবার আমেরিকার ডালাসে, টেক্সাস বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে এমনই বলে বসলেন রাহুল।
তিন দিনের সফরে আমেরিকা গিয়েছেন রাহুল। রাহুলের সঙ্গে রয়েছেন ‘ইন্ডিয়ান ওভারসিজ় কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদাও। কংগ্রেস নেতা রাহুলের কথায়, “(লোকসভা) ভোটের ফলপ্রকাশের পর কয়েক মুহূর্তেই আমরা দেখলাম, ভারতের কেউ আর বিজেপি কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে ভয় পাচ্ছেন না।” কার্যত ২০২৪ লোকসভা ভোটে জোটসঙ্গীদের ভরসাতেই বৈতরণী পার করেছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীত্বে বসার পর থেকেই বিদেশি শক্তিগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে জোর দিয়েছেন, এমনটাই দাবি করে থাকে নানা পক্ষ। এবার সেই বিদেশে গিয়েই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দলকে কটাক্ষ করলেন রাহুল।
বিরোধী নেতার চেয়ারে বসার পর থেকেই মোদি ও বিজেপিকে এক চিলতে জমিও ছাড়েননি রাহুল। এবার বিদেশে গিয়েও আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস নেতা। এদিন তিনি জানান,, লোকসভা ভোটের ফলাফলে তাঁর নিজের কিংবা কংগ্রেসের জয় হয়নি, মানুষের ইচ্ছার জয় হয়েছে। একই সঙ্গে রাহুলের বক্তব্যে উঠে এসেছে আরএসএস প্রসঙ্গও। আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেসের আদর্শগত ফারাকের কথা উল্লেখ করে রাহুল বলেন, “আরএসএস বিশ্বাস করে ভারত আসলে একটি ধারণা। আর আমরা মনে করি ভারত হল বহু ধারণার সমন্বয়।” নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ভারতের ভাষাগত, ধর্মীয় এবং জাতিগত বৈচিত্রের কথাও উল্লেখ করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
আরও পড়ুন: ‘দোষীর শাস্তির দায়িত্ব সরকারের’, আরজি কর নিয়ে যা বললেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত
মোদি সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম লোকসভা অধিবেশনেই বিজেপিকে মারাত্মক ভাবে কোণঠাসা করেন রাহুল। মণিপুর থেকে শুরু করে হিন্দুত্ববাদ, বিভিন্ন প্রসঙ্গে মোদি ও বিজেপিকে বিঁধেছিলেন তিনি। টেক্সাসের ডালাসে ভারতীয়দের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি এদিন সংবিধানের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, “এটা একটা লড়াই। আর নির্বাচনের সময় লড়াইটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানকে আক্রমণ করছে। আমি যখন সংবিধান তুলে ধরি, তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন যে আমি কী বলছি। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে সংবিধানে আক্রমণ আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যতেও আক্রমণ।”
পাশাপাশি লোকসভা ভোটের আগে লোকসভা ভোটের আগে তাঁর কী ভূমিকা ছিল, সে কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাহুল জানান, তিনি মানুষের মধ্যে ভালবাসার বোধ জাগাতে চেয়েছিলেন। রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদের কথায়, “আমি ভেবে দেখলাম আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিটি দলের মধ্যেই যেগুলির অভাব রয়েছে, সেগুলি হল ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং নম্রতা।
আরও পড়ুন:বিজেপির সব হিসেব ঘেঁটে দিচ্ছেন রাহুল! কোন কৌশলে মোদিকে ঘাবড়ে দিচ্ছেন ‘পাপ্পু’?
রাহুল গান্ধিকে প্রায়শই 'অপ্রাপ্তবয়স্ক', 'পাপ্পু' বলে কটাক্ষ করে থাকেন মোদি। দুষতে ছাড়েন না বিজেপির অন্যান্য নেতারাও। তবে বিজেপির সেই দাবি যে অমূলক, তা বলতে ছাড়েননি এদিন রাহুলের বিদেশ সফরের সঙ্গী তথা ‘ইন্ডিয়ান ওভারসিজ় কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদা‘ইন্ডিয়ান ওভারসিজ় কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদা। এদিন ডালাসে রায়বরেলীর কংগ্রেস সাংসদের প্রশংসা করে পিত্রোদা বলেন, “রাহুল পাপ্পু নন, তিনি এক জন উচ্চশিক্ষিত। যে কোনও বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে পারেন। খুব ভাল রূপরেখা তৈরি করতে পারেন। তাঁকে বোঝা সহজ নয়।” যদিও রাহুলের এই বক্তব্যকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি। বিদেশের মাটিতে রাহুলের মন্তব্যের সমালোচনা করে বিজেপির দাবি, কংগ্রেস সাংসদের অভ্যাস রয়েছে ভারতকে অপমান করার। এর আগেও বিদেশের মাটিতে ভারত সম্পর্কে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ২০২২ সালে তিনি ব্রিটেনে বলেছিলেন সিবিআই-ইডি রাজ্যগুলিকে চিবিয়ে খাচ্ছে। সেই নিয়েও যথেষ্ট হইচই হয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে।