২ কোটি চাকরি কোথায়? ১০ বছরে দেশের বেকারদের অবস্থা কী? ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ্যে
Unemployment in Modi's India : স্ব-নিযুক্তির ক্ষেত্রে অবৈতনিক শ্রমিকের সংখ্যা ২০১৭-১৮ সালে প্রায় ৪০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ সালে ৯৫ মিলিয়ন হয়েছে।
ছত্তিশগড়ে মোদি বলেছেন ৮০ কোটি দরিদ্র ভারতীয়দের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের যে প্রকল্প রয়েছে, তা আরও পাঁচ বছর চলবে। কোভিড-১৯ যখন দেশকে ছারখার করছে, তখন এই প্রকল্পটি চালু করা হয়। কোভিড গিয়েছে কিন্তু লোকসভা নির্বাচন এসেই গিয়েছে প্রায়। তাই আপৎকালীন এই প্রকল্পটি এখন "ভারতের জনগণের কাছে মোদির গ্যারান্টি' হয়ে উঠেছে। মোদি আরও একটি 'গ্যারান্টি' দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর তৃতীয় মেয়াদে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। মানে মোদি তার তৃতীয় মেয়াদের কথা যেভাবে বলছেন তাতে জনগণকে যেন নির্বাচনের আগেই ফলাফল বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে ২০২৮ সালের মধ্যে যে অর্থনীতি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হয়েই উঠবে সেই অর্থনীতির দেশ কেন ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করবে? ভারত দ্রুত উন্নতি করছে এবং মোদি দেশে 'অমৃত কাল' নিয়ে এসেছেন বলে আরও পাঁচ বছর বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার যুক্তি কী?
ভারত যদি এতই দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হয় তাহলে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারত ক্রমেই পিছয়ে যাচ্ছে কেন? ২০২৩ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বলছে ভারত ১২৫টি দেশের মধ্যে ১১১ তম স্থানে রয়েছে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার (পিএমজিকেওয়াই) অধীনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিয়েও কেন হাঙ্গার ইনডেক্সের এই অবস্থা?
আরও পড়ুন- অপুষ্টিতে ভুগে মরছে লাখো লাখো শিশু, এই ভারত চেয়েছিলেন নেতাজি?
১০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদির অধীনে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, সঞ্চয়ের হার, বেসরকারি বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেশ কেমন এগোচ্ছে তা বোঝার জন্য ১০ বছর বেশ দীর্ঘ সময়। অথচ এই সব ক্ষেত্রেই দেশের অবস্থা কিন্তু মোটেও ভালো না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে উজ্জ্বল স্থান দখল করে বসে আছে! বাস্তবটা কী তাহলে?
ক্ষমতায় আসার পর মোদি MGNREGA অর্থাৎ গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিমটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিজেপি বলে, প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং আয় বাড়াতে কংগ্রেসের ব্যর্থতার চিহ্ন হচ্ছে এই প্রকল্প। এই মুহূর্তের সত্য হলো, মোদি সরকারের আমলে গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি বাজেটের ৯৩% অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই খরচ করা হয়ে গিয়েছে। যেহেতু প্রকল্পটি চাহিদার উপর নির্ভরশীল কর্মসূচি, তাই এই খরচ সম্ভবত ৬০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
১০ বছরে মোদি জিডিপি বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। ২০১৪ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বার্ষিক ২ কোটি চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি। এখন আরও পাঁচ বছর বিনামূল্যে খাদ্যশস্যের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রমাণ মিলেছে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই অবধি করা শ্রমশক্তির সমীক্ষায়। সমীক্ষাটিতে দেখা যাচ্ছে, স্ব-নিযুক্তি বা সেলফ এমপ্লয়মেন্টের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২২-২৩ সালে মোট কর্মনিযুক্ত মানুষদের ৫৮% সেলফ এমপ্লয়েড। অর্থনীতিতে মোট নিযুক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০০ মিলিয়নের অধিক। ২০১৭-১৮ সালে স্ব-নিযুক্ত শ্রেণি মানে মূলত ছোট বিক্রেতা এবং ব্যক্তিগত পরিষেবা প্রদানকারীদের অধিকাংশই ছিলেন গ্রামীণ ভারতে। মোট কর্মনিযুক্ত মানুষের ৫২% ছিলেন এই মানুষরা। সেলফ এমপ্লয়মেন্ট বা স্বনিযুক্তি বাড়লে ক্ষতি কী?
আরও পড়ুন- সারা বিশ্বের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল নরেন্দ্র মোদির নির্বুদ্ধিতা
স্ব-নিযুক্ত মানুষদের সংখ্যা বাড়ছে মানে নিম্নমানের কর্মসংস্থান বাড়ছে ব্যাপকহারে। স্ব-নিযুক্তদের এক তৃতীয়াংশই অবৈতনিক শ্রমিক যারা কোনও মজুরি ছাড়াই ছোট পরিবার পরিচালিত ইউনিটে যোগ দেন। স্ব-কর্মসংস্থানের অনুপাত এবং এর মধ্যে অবৈতনিক শ্রমিকদের অনুপাত গত ৫ বছরে, বিশেষ করে নোটবাতিল এবং মহামারীর পরে ব্যাপক হারে বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, স্ব-নিযুক্তির ক্ষেত্রে অবৈতনিক শ্রমিকের সংখ্যা ২০১৭-১৮ সালে প্রায় ৪০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ সালে ৯৫ মিলিয়ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে এই ধরনের অবৈতনিক শ্রমিকদের নিয়োগ হয় না। এখানেই শেষ না, গড় নিয়মিত মাসিক মজুরি ২০১৭-১৮ সালের থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ২০% এর বেশি কমেছে। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যে কোনও মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই এক উত্তর মিলবে, মাইনে বাড়ছে না অথচ জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে হু হু করে। নিম্ন মধ্যবিত্তের অবস্থা তথৈবচ।
অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদি বলছেন দেশে অমৃতকাল চলছে। এত অমৃত সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মাইনে বাড়ছে না, চাকরি নেই। এমনকী রোজের খাবার কেনারও টাকা নেই! দেশে যদি অমৃতকালই চলছে তাহলে ৮০ কোটি মানুষকে কেন বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে? প্রধানমন্ত্রী কি তৃতীয় মেয়াদে এর উত্তর দেবেন?