মোদিকে কতটা 'ভালোবাসে' বিদেশের সংবাদমাধ্যম? বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে
PM Narendra Modi: নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট, সারা দেশে যখন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণহীন, তখন মোদি চকচকে পোশাক, N95 মাস্ক পরে রাম মন্দিরের ভূমিপুজো করেছিলেন।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত। এখন দেশে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই দাবি করে থাকেন, তাঁর শাসনেই ভারতের সঙ্গে অন্যান্য উন্নত দেশের সম্পর্ক ভালো হয়েছে। দেখা যাক, নির্বাচনী আবহে অন্যান্য দেশের প্রতিবেদনগুলিতে ভারতের মূল কোন বিষয়ে জোর দিয়ে লেখা হয়েছে।
“Modi’s Temple of Lies” - New York Times
প্রতিবেদনে সমালোচিত হয়েছে, মোদির 'নতুন ভারতের' অন্যতম প্রতিশ্রুতি রামমন্দির। প্রতিবেদক সমালোচনা করেছেন, ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট, সারা দেশে যখন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণহীন, তখন মোদি চকচকে পোশাক, N95 মাস্ক পরে রাম মন্দিরের ভূমিপুজো করেছিলেন। ওই দিন মহা আড়ম্বড়ে ৪৪ কেজি ওজনের রুপোর ইট গেঁথে ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামমন্দির নির্মাণের সূচনাও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেদক অযোধ্যার ঘুরে ঘুরে, মানুষের কথা জেনে এই প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ২০১৮ সালে ভাইরাল হওয়া 'অ্যাংরি হনুমান' ছবির জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর থেকে প্রশংসা পেয়েছিলেন করণ আচার্য। দাবি করা হয়েছে, মোদি সরকার দশ বছর ধরে ভারতের গণতন্ত্রকে হিন্দুত্ববাদী মুখোশ পরিয়ে রেখেছে।
“The Right to Education and Democratic Backsliding in India” - Verfassunsblog
প্রতিবেদনে সমালোচনা করা হয়েছে, শিক্ষায় বিজেপি সরকারের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি (NEP-এর তথ্য সামনে রেখে দাবি করা হয়েছে ২০২০ সালে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি), শিক্ষার গেরুয়াকরণ (পাঠ্যপুস্তকে মুঘল ইতিহাস বাদ), শ্রেণিকক্ষে ধর্মীয়করণ (হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে। দাবি করা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের বহুদিনের ধারাকে বদল করে শিক্ষার মানকে লঘু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ভারত এরপরও কীভাবে বৈচিত্র্যময় পরিচয়ের ভারসাম্য বজায় রাখবে? কীভাবে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিচিতি পাবে?
“Narendra Modi’s illiberalism may imperil India’s economic progress” - The Economist Magazine
প্রতিবেদক ১৯৯৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় - "রাজনীতি এবং গণতন্ত্র মেলানো যায় না" এই তথ্য সামনে এনে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, স্রেফ রামমন্দির তৈরিতে ১৮০০ কোটি টাকার খরচ হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে স্বয়ং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ৪৪ কিলোর রুপোর ইট গেঁথেছেন। দাবি করা হয়েছে, রামমন্দিরকে বিজেপি সরকার নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে সবরকমভাবে ব্যবহার করেছে। মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে মূলত রাজনৈতিক কার্যক্রম করে তুলতে সফল হয়েছে বিজেপি। রাজনীতির জন্যই রামমন্দির তৈরিতে বিপুল অর্থের খরচ নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন- ভোটে শুধু সারথি বদলান অর্জুন সিং! বাস্তবে কেমন আছেন ব্যারাকপুরের মজদুররা?
“India’s elections this year stand out for their ‘undemocratic nature’ - Modi is turning democracy into electoral authoritarianism.” - Le Monde France.
এই প্রতিবেদনে ভারতের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফ জেফ্রেরেলোটের মন্তব্য, "বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় পরিণত করছে" তুলে ধরে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
“‘Messianic spell’: how Narendra Modi created a cult of personality” - UK Guardian
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে , ভারতে 'মোদি' একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছত্রছায়াতেই বিজেপির নেতারা থাকেন। একদিকে যেমন প্রতিবেদনে আলোচিত হয়েছে, প্রতিটি সরকারি প্রকল্পে, সরকারি পোস্টারে মোদির ছবির কথা, তাঁর বক্তৃতার স্লোগান 'মোদি কি পরিবার'-এর কথা, অন্যদিকে ১০ বছরে যে তিনি একজনও সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেননি সে নিয়েও লেখা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে মোদির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি ছিল সেগুলোও আলোচিত হয়েছে। ভারতে মোদির শাসনকালে, ক্রনি ক্যাপিটালিজম, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক অসাম্য, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রে আঘাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আক্রমণ, মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
“Indian Democracy in Peril: Slide into Autocracy Likely to Continue” - Nippon Japan
প্রতিবেদনে আলোচিত হয়েছে, ভারত এবং জাপান, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার প্রতি একই রকম গুরুত্ব দেয় কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত যেভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে তাতে প্রশ্ন করা উচিত। হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং একনায়কতন্ত্র দেশের গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলেও প্রতিবেদকের দাবি ।
“Narendra Modi Is Preparing New Attacks on Democratic Rights” - Jacobin Magazine
ভারতের বিজেপি সরকার সংবিধান বদল করে দিতে চাইছে। তৃতীয়বার কুর্সিতে বসেই এই বদল করতে পারেন মোদি। তার জন্যে তাঁদের বেশি আসনে জেতা প্রয়োজন। তাই তারা ২০২৪ সালে ৩৭০ টি আসন পেতে চাইছে এবং বিরোধীদের দুর্বল করতে চাইছে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। দাবি, মোদি সরকার নির্বাচন কমিশনের নিয়োগে হস্তক্ষেপে করেছে যাতে বিরোধীদের দুর্বল করা যায়। সমালোচিত হয়েছে - বিরোধীদের জেলে বন্দি করে রাখা, ইলেক্টোরাল বন্ডের কারচুপি, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টতা, ২০১৪ সালের পর থেকে বিজেপিতে যুক্ত হওয়া বিরোধী নেতাদের মামলা দুর্বল হয়ে যাওয়া, ২০২০ সালের কৃষক আন্দোলন, সিএএ, এনআরসি, এনপিআর। 'এক দেশ এক ভোট' প্রক্রিয়া চালু করে বিজেপি নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে রাখার পরিকল্পনা করছে বলেও সমালোচনা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন এনে বিরোধীদের মত দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
“With democracy under threat in Narendra Modi’s India, how free and fair will this year’s election be?” - The Conversation, Australian Research Council
প্রতিবেদনটিতে, ভারতের ২০২৪ সালের নির্বাচন মূলত তিনটি কারণে কলঙ্কিত বলে দাবি করা হয়েছে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে, প্রথমত, বিরোধী নেতাদের 'ষড়যন্ত্র' করে গ্রেফতার করা, দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া, তৃতীয়ত, নির্বাচনী অনুদান। দাবি করা হয়েছে, নির্বাচনেও নিজেদেরই আধিপত্য বজায় রাখতে চায় দল। উল্লেখ করা হয়েছে, তার জন্যই ৭ দফায় ভোট এবং দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধির নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।
“India Democracy in name only” - Le Monde France
প্রতিবেদকের দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিকে সমালোচনা করতে দেখা যেত নয়াদিল্লির 'এনডিটিভি' টেলিভিশন চ্যানেলকে। ২০২২ সালে, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির হাতে 'এনডিটিভি' চলে যায়। দাবি, স্বাভাবিকভাবেই এনডিটিভি-র স্বাধীন কাজ করায় বাধা আসে। স্বাধীনচেতা, নামী সাংবাদিকরা সংস্থা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সরকার পক্ষ, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও তাদের কণ্ঠরোধের নির্লজ্জ চেষ্টা করেছে বলে সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পদ্মশিবির, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা লাগায় বলেও দাবি করা হয়েছে।
“Modi’s ‘Make in India’ Didn’t Make Jobs” -Foreign Policy Magazine
প্রতিবেদক উত্তরপ্রদেশের মিরাটে ঘুরে বেরিয়ে এই প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেকারত্বের সংকটের সমাধান না করেও তৃতীয়বার লোকসভা নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারেন। ১০ বছর রাজত্বের পরও মিরাটের রাস্তাঘাটের এমন কোনও উন্নতি হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদক অভিযোগ তুলেছেন, মোদি 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন মানুষের চাকরির প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। এই শহরজুড়ে, বেসরকারি স্কুল আর পেশাদারি কোর্সগুলির রাস্তায় রাস্তায় বিজ্ঞাপন দেখে সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, এই কোর্স এবং বেসরকারি স্কুলগুলির ফিজ মধ্যবিত্তের আর্থিক ক্ষমতার বাইরে।
“Modi’s party using ‘authoritarian playbook’ to cripple opposition in India” - UK Independent
ভারতে প্রধান বিরোধী দলনেতাদের গ্রেফতার করা, সংবাদমাধ্যমগুলিতে সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন গবেষক এবং বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিজেপি সরকার ভারতকে ভুল পথে পরিচালিত করছে - এই নিয়েই মারুসা মুজফর তার প্রতিবেদনে সমালোচনা করেছেন।
“What Has Happened to the Rule of Law in India?” - The Atlantic Magazine
২০১৯ সালে বিজেপি সরকার কাশ্মীরের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রতিবেদক তার সমালোচনা করে বলেছেন, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থেকে পরিবর্তন হয়ে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, একসময় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীনতার জন্য সুনাম পেত কিন্তু এখন শীর্ষ আদালত নিজের আইনি কাঠামো ধরে রাখতে পারছে না।
“Modification of India is almost complete” - TIME Magazine
এই প্রতিবেদনটিতে, মূলত মোদি কীভাবে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন এবং তাঁর প্রচার কৌশলগুলি কেমন ছিল তা আলোচিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজেপিকে 'হিন্দু জাতীয়তাবাদী' সরকার বলেও সমালোচনা করা হয়েছে। সমালোচিত হয়েছে, আইন এবং নীতি করে বিভিন্ন রাজ্যে গরুর মাংস নিষিদ্ধ করা, পাঠ্যক্রমে মুসলিম ইতিহাস বাদ দেওয়ার বিষয়গুলি। অভিযোগ রয়েছে, মোদির সমর্থকরা ষড়যন্ত্র করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে 'লাভ জিহাদ'-এর দোষারোপ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক কথাবার্তা ছড়ান। এতে মিডিয়ার ভূমিকাও সমলোচিত হয়েছে। প্রতিবেদক দাবি করেছেন, ১৯৭৫-৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধির সময়কালেও ভারতের গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু সেটা ছিল কিছু বছরের জন্য। বর্তমানে বিজেপির গণতন্ত্র আক্রমণের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
“India’s Voting Machines Are Raising Too Many Questions” - Bloomberg
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতে নির্বাচনী বন্ডের দুর্নীতি যেমন ফাঁস হয়েছে, তেমনই ভারতের পরর্বতী দুর্নীতি ফাঁস হবে - ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন। প্রতিবেদক নানা তথ্য সামনে এনে ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের সাহায্যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন।
The Guardian view on India's election: fixing a win by outlawing dissent damages democracy - The Guardian
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, মোদি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে, দেশের পরিস্থিতি প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর শাসনকালের মতো হবে। বলা হয়েছে, "কোনও দেশের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সকল নাগরিকের মতামত এবং সকল নাগরিকের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, যা মোদির ভারতে কম লক্ষণীয়।" প্রতিবেদনে অভিযোগ রয়েছে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা, বিরোধী দলের প্রধান মুখদের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে গ্রেফতার করা, ইলেক্টোরাল বন্ডে শাসক গোষ্ঠী বিজেপিরই বিপুল টাকার অনুদান নিয়ে। প্রতিবেদনটিতে সমীক্ষার তথ্য দিয়ে ভারতে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। মোদির শাসনকালে এই সকল বিষয়ের অবহেলা নিয়ে বদনাম রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদক দাবি করেছেন, ভারতে মোদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা 'বিপদজনক'।
“Progressive South Is Rejecting Modi” - Bloomberg
প্রতিবেদনে, দক্ষিণ ভারতে মোদির অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, প্রগতিশীল দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতেও ধর্ম, ব্রাহ্মণ্যবাদ, জাতপাত থাকলেও বিজেপি কেরল এবং কর্ণাটকের মন জয় করতে পারবে না ।
Is India's BJP the world's most ruthlessly efficient political party? - Financial Times
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, "মোদি ফের প্রধানমন্ত্রী হলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ আরও তীব্র হবে।" বলা হয়েছে, আরএসএস এবং তার সেল দলগুলি (ট্রেড ইউনিয়ন, এনজিও, মহিলাদের দল) বিজেপি কোন আদর্শকে গুরুত্ব দেবে সেই তথ্য দেয়। এই দলগুলি বিজেপির আদর্শকে সমর্থন যোগাতে সাহায্য করে। উল্লেখ করা হয়েছে, আরএসএস দশকের পর দশক সাফল্য পাচ্ছে, কারণ, তারা হিন্দুত্ববাদী বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেয়, যা মোদির রাজত্বের মূল এজেন্ডা হয়ে গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদটি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার বিলোপ করার কথা, জম্মু ও কাশ্মীরে ভাঙা মন্দিরগুলি নতুন করে তৈরি করার প্রচার, মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির তৈরি ইত্যাদি। প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বিজেপির শাসনে আরএসএস সংগঠনটির আরও বিকাশ হয়েছে। ২০১৪ সালে তাদের সেল দলগুলির সংখ্যা ৪৫,০০০ ছিল, আজ যা ৭৩,০০০ হয়েছে। প্রতিবেদনে দেওয়া 'সেন্টার ফর মনিটরিং ইকোনমি'-র তথ্য অনুসারে, যুব সম্প্রদায়ের বেকারত্বের হার ৪৫%-র বেশি। এই প্রতিবেদনেও নির্বাচনী বন্ডের তথ্যকে নিন্দা করা হয়েছে। আলোচিত হয়েছে, ভারতের অর্থনৈতিক অসাম্যের কথাও।
আরও পড়ুন- মুসলিমদের অকথ্য অপমান মোদির! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কেন ব্যবস্থা নেবে না?
“Why is Biden silent on Modi and India’s slide toward autocracy?”- LA Times
নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার ক্রমশ খর্ব হচ্ছে বলে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। অভিযোগ উঠেছে, ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপেরও। 'ফ্রিডম অফ দ্য ওয়ার্ল্ড', স্বাধীনতা সূচক প্রকাশ করে আমেরিকার সংস্থা 'ফ্রিডম হাউজ'। ২০২০ সালে 'স্বাধীন' দেশ হিসেবেই পরিচিত থাকলেও, ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতকে 'আংশিক স্বাধীন' বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। গণতন্ত্ররক্ষায় বিশ্বের কোন দেশের সরকার পক্ষ ও বিচারবিভাগ কতটা সক্রিয়, নির্বাচন প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ, নাগরিক অধিকার কতটা সুরক্ষিত, রাজনৈতিক সংস্কৃতি কেমন, দেশের মানুষ রাজনীতির সঙ্গে কতটা যুক্ত তার ভিত্তিতেই এই প্রতিবেদন। প্রতিবেদক সমালোচনা করেছেন, 'ফ্রিডম হাউজ' এবং 'ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট'-এর সূচকই বলে দেয় ভারত আর মুক্ত গণতন্ত্রের স্থান নয়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে রাহুল গান্ধিকে সংসদ থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া, ১৭,০০০ এনজিও-র বিদেশি অনুদান বন্ধ করে দেওয়া, ইডির হানা ৪০০% বেড়ে যাওয়া, যার মধ্যে ৯৫% বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই মামলা, মুসলিমদের প্রতি হিংসা ৩০০% বেড়ে যাওয়া সেই দেশে যেখানে ২০ কোটি মুসলিম থাকে- এত কিছুর পরও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মোদির শাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি বলে আলোচিত হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
“India’s authoritarian leader with his own app” - The Week, USA
প্রতিবেদনে বিরোধী দলের অবস্থান বোঝাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা 'ফ্রিডম হাউস'-এর প্রতিবেদন সামনে আনা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দেশে রয়েছে 'আংশিক স্বাধীনতা'। এছাড়াও মুসলিম নির্যাতন, মোদির রাজ্য গুজরাতে ২০০২ সালের দাঙ্গা, 'প্রেস ফ্রিডম'-এ ভারতের স্থান সহ হিন্দুত্ববাদ সমালোচিত হয়েছে ।
"Narendra Modi Is Developing a New Template for Authoritarian Control of the Internet” - Jacobin Magazine
প্রতিবেদনে আলোচিত হয়েছে - বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, মানবধিকার সংগঠন, জনস্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধ সমাজকর্মী, বিভিন্ন ধরনের সমালোচককে কীভাবে জেলে পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে। বিবিসি ২০০২ সালের গুজরাতের ঘটনাবলীতে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকার একটি তথ্যচিত্র প্রচারের জন্য কিছুদিনের মধ্যেই ওই সংস্থার দিল্লি ও মুম্বই কার্যালয়ে আয়কর বিভাগ দীর্ঘ তল্লাশি চালিয়েছিল, এই নিয়েও প্রতিবেদনে সমালোচনা করা হয়। ২০২৩ সালে রাহুল গান্ধিকে ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত করা, ডেটা নিয়ন্ত্রণ করা, পেগাসাস ব্যবহার করে বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, মানবধিকার কর্মীদের ফোন হ্যাকিং করা আলোচিত হয়েছে। প্রতিবেদক বলেছেন, বিজেপির মূল উদ্দেশ্য - অনলাইন রক্ষণাবেক্ষণ সরকারের হাতে রাখা। দাবি করা হয়েছে, এই সকল কিছুই বিরোধীদের দমিয়ে রাখার কৌশল মোদি এবং বিজেপি সরকারের।
“India’s middle class warm to autocracy under Modi” - The Press, New Zealand
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় ক্রমাগত আঘাত, বিচার বিভাগের উপর শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ, রাজ্যসভা থেকে সাংসদদের বরখাস্ত করা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটিতে। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক-এর পিউ রিসার্চ সেন্টার, ২৪ টি দেশে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল - দেশবাসী স্বৈরাচারী শাসন নিয়ে কতটা উৎসাহিত। সমীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছে ভারতীয়রা। যা প্রায় ৬৭% । ২০১৭ সালে যা ছিল ৫৫% । ৭২% সমর্থন জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসনে হলেও সমস্যা নেই। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ৬৭% মানুষ একনায়ক তন্ত্র বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে। তারপরেই সেনা শাসনের পক্ষে রয়েছেন ৭২% মানুষ। এই তথ্য সামনে এনে আলোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিটি প্রতিবেদনেই তথ্য দিয়ে যুক্তি সাজানো হয়েছে। প্রায় প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রশ্ন উঠেছে - স্বৈরতন্ত্র, স্বাধীনতা, হিন্দুত্ববাদ ও বেকারত্ব নিয়ে। একসময় ভারত গড়েই উঠেছিল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ নিয়ে। সেই দেশেই হিন্দুত্ববাদ ও বেকারত্ব পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাওয়া, দেশের মানুষের সঙ্গেই প্রতারণা নয় কি?