টলি কেলেঙ্কারি: স্বরূপ বিশ্বাসের উত্থান কখন, কীভাবে, কতটা?

Tollygunge Threat Culture: অন্যায্য ভাবে গিল্ডের কার্ড দখল, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটে নাম জড়ানো, কীভাবে টালিগঞ্জের কেউকেটা হলেন স্বরূপ বিশ্বাস?

পর্ব ২

টলিপাড়ার মূলত দুই অভিযোগ। এক, সিনেমা-টেলিভিশন জগতের মানুষই নন স্বরূপ বিশ্বাস। অথচ ক্ষমতা খাটিয়ে তিনি সহকারী পরিচালকের কার্ড বাগিয়ে বসে ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি হয়ে গেছেন। দুই, সভাপতি না হয় হলেন; কিন্তু টালিগঞ্জের এই বিশাল শিল্পসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলেন নিছক ক্ষমতার দম্ভে, নানা তুঘলকি নিয়ম চালু করলেন এবং সর্বোপরি এক দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুললেন। সামনে শিখণ্ডি করে রাখা হলো টেকনিশিয়ানদের স্বার্থ, অথচ এই সিন্ডিকেট থেকে লাভবান হন স্বরূপের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি বৈ কেউ নয়। এই নিয়মের নিগড়ে গত ১০ বছরে টালিগঞ্জ থেকে হু হু করে বিনিয়োগ সরে গেছে। বাইরে থেকে শুটিং করতে আসা দেশি-বিদেশি ইউনিট মুখ ফিরিয়েছে বাংলা থেকে। বাংলা ছবির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যদি কেউ হয়ে থাকে তা, টেকনিশিয়ান সম্প্রদায়। অথচ প্রত্যেক বিবৃতিতে স্বরূপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন বলতে থাকেন টেকনিশিয়ানদের স্বার্থেই নাকি তাদের এত কর্মকাণ্ড!

তা এই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তি কী? হতেই পারে তিনি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই কিন্তু টালিগঞ্জের এই সিনে জগতও তো হালে গজিয়ে ওঠা কোনও শিল্প নয়। সেখানে অল্প কিছুদিনের মধ্যে এত প্রভাব খাটানো সম্ভব কীভাবে? এই ইতিহাসের শিকড় খোঁজার চেষ্টা করেছিল ইনস্ক্রিপ্ট। টালিগঞ্জে যে 'দাদাগিরি'-র অভিযোগ উঠছে স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তার ভিত্তি খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে দুই ভাইয়ের কলেজ জমানাতেই।

নিউ আলিপুরের মিলিটারি গেটের উল্টোদিকে দুর্গাপুর কলোনি। সেখানেই বেড়ে ওঠা অরূপ বিশ্বাস ও স্বরূপ বিশ্বাসের। অরূপ বিশ্বাস ছিলেন নিউ আলিপুর কলেজের পড়ুয়া, সেখানে ছাত্র পরিষদের সক্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও হন। দুই ভাইকেই ছোটবেলা থেকে চেনেন, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নিউ আলিপুরের এমনই এক দীর্ঘদিনের বাসিন্দা জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা সোমেন মিত্র ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিট দেন অরূপ বিশ্বাসকে। তারপর ১৯৯৮ সালে তৃণমূলে যোগ দেন অরূপ। দাদা রাজনীতিতে ছিলেন ঠিকই কিন্তু স্বরূপ বিশ্বাস মোটেও এসবের ধারেকাছে ছিলেন না। পড়তেন সাউথ সিটি কলেজে। সাউথ সিটি মানেই এসএফআইয়ের ঘাঁটি। রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না স্বরূপ বিশ্বাসের। এদিকে অরূপ বিশ্বাস তৃণমূলের যোগ দেওয়া পরে কাউন্সিলর নির্বাচনে ২০০০ সালে দলের টিকিটে জিতে যান। এর কিছুকাল পরেই ১০ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান হন তিনি। এই সময় থেকেই স্বরূপ বিশ্বাস ধীরে ধীরে সক্রিয় রাজনীতিতে জুড়তে শুরু করেন দাদার হাত ধরে। অরূপ-স্বরূপের এই একসময়ের প্রতিবেশীর দাবি, দাদা বোরো চেয়ারম্যান হতেই ৮১ নম্বরের ওয়ার্ডের কাজকর্মের দেখাশোনা শুরু করেন ভাই স্বরূপ। তাঁদের প্রতিবেশীর অভিযোগ, তখন থেকেই এই চত্বরে গড়ে ওঠে তাঁদের রিয়েল এস্টেট সিন্ডিকেট।

নিউ আলিপুর সাধারণত বড়লোকদেরই জায়গা। এই অঞ্চলে কেউ যদি বাড়ি সারাতে চাইতেন, বা নতুন বাড়ি তৈরি করতে চাইতেন তাহলেই ধাপে ধাপে কাউন্সিলরের প্রভাব খাটিয়ে টাকা তোলা শুরু হতো। জলের লাইনের টাকা, বিদ্যুতের লাইনের টাকা, নতুন কেবলের টাকা— সব কিছুর জন্য অবৈধভাবে টাকা তোলা শুরু হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, নামে বেনামে ৮১ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে নাকি প্রচুর বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হন অরূপ এবং স্বরূপ। নতুন ফ্ল্যাট তৈরি হলেই সেখানে কাউন্সিলরকে একটা ফ্ল্যাট দিতে হবে বলে প্রোমোটারকে হুমকি দিয়েই এই সমস্ত বাড়ির মালিকানা জোটে বলে অভিযোগ। তারা আরও বলছেন, এখন সুরুচি সংঘের পুজোর যা চেহারা, এমনটা আগে ছিল না মোটেও। এখন নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের পুজো 'অরূপ বিশ্বাসের পুজো’ বলেই পরিচিতি। অথচ এই পুজো নাকি শুরু করেছিলেন চেতলার একজন ক্রীড়াপ্রেমী 'গোরাদা'। গোরাদা ওই মাঠে ছোটদের যোগব্যায়াম শেখাতেন। আগে কোনওরকমে অল্প আলো জ্বালিয়েই দুর্গাপুজো হতো। অরূপ বিশ্বাস কাউন্সিলর হওয়ার পরে, ২০০১ সালের পর থেকেই এই পুজোর ভোল বদলে যায়। ওই মাঠ আসলে এলআইসির সম্পত্তি বলেই স্থানীয় লোকেরা জানেন। ওই মাঠে বাচ্চারা খেলত আগে। এখন মাঠ পুরো কংক্রিট। ওই জমি এখন কার, তারা জানেনও না।

এবার আসা যাক স্বরূপ বিশ্বাসে উত্থানে। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরনো টালিগঞ্জের বিধায়ক হন অরূপ বিশ্বাস, ২০০৬ সালে। এদিকে নিউ আলিপুরে ২০১০ সালে স্বরূপ বিশ্বাসের স্ত্রী পুরসভা ভোটে প্রার্থী হন এই ৮১ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই। অভিযোগ, পৌরসভা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছেন বিশ্বাস পরিবারই। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে তৃণমূল হেরে যায়। ২০১৯ সালেও এই ওয়ার্ডে হারে দল। অথচ ২০২১ সালের পৌরসভা ভোটে বড় অঙ্কের ভোটে জেতে তৃণমূল। প্রতিবেশীর দাবি, নিউ আলিপুরের উচ্চবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষ কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ট হতে চান না। ফলে বুথ ফাঁকা থাকে। অন্য দলের এজেন্টও থাকেই না। অভিযোগ, এই সুযোগেই পুরসভা ভোটে দেদার ছাপ্পা মেরে তৃণমূল জেতে। যে সুযোগটা লোকসভা ভোটে থাকে না। অভিযোগ, নিউ আলিপুরে অনেক বড় বড় খাবার দোকান আছে, ফলের বাজার আছে। বিশ্বাসবাহিনীর ছেলেরা সেখান থেকে জোর খাটিয়ে যখন তখন বিনাপয়সায় খাবার নিয়ে আসে। এই নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ, কিন্তু ভয়ে মুখ খোলেন না কেউ। সুরুচির পুজোর মোটা টাকা চাঁদা নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। অভিযোগ, মূলত এইখানে তোলাবাজির কাজ করানো হয় প্রোমোটিং সিন্ডিকেটের লোক, কর্পোরেশনের ১০০ দিনের কাজের লোক আর কর্পোরেশনের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দিয়েই। নিউ আলিপুরের মতো জায়গায় যে বিজেপির প্রভাব বাড়ছে এই সমস্ত ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হওয়ার কারণেই।

প্রথম পর্বে পড়ুন- টলি কেলেঙ্কারি: সিনেমাপাড়ায় থ্রেট কালচারই শেষ কথা?

টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়া হচ্ছে ৯৭ নম্বর ওয়ার্ড। নিউ আলিপুর থেকে সেখানে কীভাবে স্বরূপ বিশ্বাসের প্রতিপত্তি বাড়ল? স্থানীয়রা বলছেন, অরূপ বিশ্বাস বিধায়ক হওয়ার পরেই টলিপাড়ায় স্বরূপ বিশ্বাসের প্রবেশ। ১৯৬৮ সালে ফেডারেশনের জন্মলগ্ন থেকে এর কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ প্রোডাকশন কন্ট্রোলার ইনস্ক্রিপ্টকে জানিয়েছেন, ১৯৬৮ সালে ফেডারেশন যখন প্রথম স্থাপিত হয় তখন আলাদা করে কোনও গিল্ডই ছিল না। পরে সর্বভারতীয় সংগঠন AIFEC (All India Film Employees Confederation)-এর অধীনে আসার সময় তাদের নিয়ম মেনে প্রত্যেকটা বিভাগের আলাদা গিল্ড হয়। ১৬টা গিল্ড দিয়ে ফেডারেশনের পথচলা শুরু। ১৯৮৫ সালে এই ফেডারেশন আইনি অনুমোদিন পায়। অভিনেতাদের দু'টি আলাদা ইউনিয়ন ছিল সেই সময়; শিল্পী সংসদ ও অভিনেত্রী সংঘ। সেই সময় প্রতিবছরই নিয়ম করে ফেডারেশনের নির্বাচন হতো। সুব্রত সেন শর্মা, পারিজাত বসু, পিনাকী মুখোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়ের মতো বহু কৃতী মানুষ ফেডারেশন তথা চলচ্চিত্র শিল্পের সাংগঠনিক নেতৃত্বে কাজ করেছেন বিভিন্ন সময়। এদের রাজনৈতিক দলগত আনুগত্য আলাদা হলেও, কাজের জায়গায় একটা স্পষ্ট অলিখিত নিয়ম সবাই মেনে চলতেন। দলীয় বিশ্বাস যাই হোক না কেন, ফেডারেশনের অন্দরে কোনও দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটবে না। তা স্টুডিও চত্বরের বাইরেই রেখে আসতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও সদস্যরা একই গিল্ড ও ফেডারেশনের সদস্য হয়েও নিজস্ব দলীয় রাজনীতি ফেডারেশনের মধ্যে নিয়ে আসেননি। নির্বাচনের সময় ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অথচ ফেডারেশনের সদস্য নন এমন মানুষদের নির্বাচনী কমিশনার হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হতো। যেমন প্রাইভেট স্টুডিওর আধিকারিক, সাউন্ড স্টুডিওর বেতনভুক্ত মিক্সিং ইঞ্জিনিয়ার। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনওদিন ফেডারেশনে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি বলেই দাবি করেছেন ওই প্রবীণ।

AIFEC-এর উদ্যোগে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে দাবি-দাওয়া বিষয়ক দীর্ঘ আলোচনার পরে সারা ভারতের সমস্ত ফেডারেশনের সদস্যরা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পান। ১৯৯৫ সালে ভারত সরকারের শ্রম মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে লেবার ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সিনে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড তৈরি হয়। স্বাভাবিক নিয়মেই কলকাতার ফেডারেশনের সদস্যরা এর সদস্যপদ লাভ করেন। এই সদস্যপদ থাকার ফলে তাঁরা নানাবিধ সুবিধা পেতেন, যেমন ছেলেমেয়েদের স্কুলস্তরের পড়াশোনার খরচ, উচ্চশিক্ষার জন্য অনুদান, এছাড়াও চিকিৎসার খরচ, বাড়ি তৈরি বা মেরামতের খরচ, মেয়ের বিয়ে, মৃত্যুর পর এককালীন সুবিধা, দাহকার্যের জন্য বিশেষ সাহায্য ইত্যাদি নানারকম সুবিধার ব্যবস্থা ছিল। এই কার্ড সর্বভারতীয় স্তরে এখনও আছে। ভারতবর্ষে অন্যান্য ফেডারেশনের সদস্যরা এখনও এর সুবিধা পান। ওই প্রবীণ প্রোডাকশন কন্ট্রোলারের অভিযোগ, কোনও এক অদ্ভুত কারণে (অনুমান, কারণটা রাজনৈতিক) স্বরূপ বিশ্বাস দায়িত্বে আসার পর এই কার্ডের বিষয়ে আর কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ফলে ফেডারেশনের পরবর্তী সদস্যরা এর কোনও সুবিধা আজ পান না। তাঁর আরও অভিযোগ, তৃণমূল সরকার সিনেশিল্পীদের মেডিক্লেমের ব্যবস্থা করেছিল ঠিকই কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই সেই মেডিক্লেমও নাকি অনিয়মিত এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ওই প্রবীণ প্রোডাকশন কন্ট্রোলার আরও জানিয়েছেন, স্বরূপ এবং অরূপ বিশ্বাস টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির দখল নেওয়ার পরে কয়েকটা ঘটনা ঘটে। বাংলার শাসকদল বাংলা সিনেমা জগত নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করে এবং টেকনিশিয়ান স্টুডিওর পুনর্নির্মাণ করে। মেডিক্লেমও চালু হয়। এতে সাধারণ কর্মীরা ভাবতে শুরু করেন, তৃণমূল সরকার বাংলা সিনেকর্মীদের ভালো-মন্দের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার সম্বন্ধে সাধারণভাবে তাদের অভিযোগ ছিল, বাম সরকার নন্দনের বাইরে সাধারণ বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি কোনওদিন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বাস ভাইদের গিল্ডগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ তৈরিতে সুবিধা হয়। অরূপ-স্বরূপ সরকারি অনুষ্ঠানে বাস ভাড়া করে টালিগঞ্জের কলাকুশলী এবং শিল্পীদের নিয়ে যাওয়ার প্রথা চালু করেন। কাজ বন্ধ, টাকা আটকে থাকার মতো ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু খোদ সরকার জড়িত, তাই প্রযোজকরাও এ ব্যাপারে কোনও প্রতিবাদ জানাতে পারেননি। পাশাপাশি, কয়েকজন ক্ষমতাশালী প্রযোজক সেই সময় সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়াতে তারাও শিল্পীদের উপর পরোক্ষভাবে প্রভাব খাটান।

অভিযোগ, সভাপতি হওয়ার পর থেকেই স্বরূপ বিশ্বাস নিয়মিত সমস্ত গিল্ডের সঙ্গে তাদের অবস্থা বুঝতে আলাদা আলাদা করে মিটিং করতে শুরু করেন। সেই মিটিংয়ে গিল্ডের সদস্যরা, যাঁরা সরকার, ফেডারেশন বা গিল্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা উষ্মা প্রকাশ করতেন তাঁদের বিশেষ করে নজরে রাখা হতো বলে অভিযোগ। টেকনিশিয়ানদের মধ্যে যারা কংগ্রেস বা সিপিএমপন্থী তাদেরকেও চিহ্নিতকরণের কাজ সেই সময় থেকেই শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওই প্রবীণের। যাঁরা বেশিই বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের সংগঠনবিরোধী কাজের অভিযোগে নানা গিল্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হয় যাতে সেই কুশলীর সঙ্গে আর কেউ কাজ না করতে পারেন। স্বরূপ বিশ্বাসের আমলে এভাবে বহু সাধারণ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই প্রবীণের। টলিপাড়ার বিক্ষুব্ধদের দাবি, নির্বাচনের প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ পাল্টে যায় এবং হাত তুলে 'হ্যাঁ' বা 'না' বলে ভোটের প্রক্রিয়া চালু হয়। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ সভায় সবার সামনে ক্ষমতাসীন বিধায়ক এবং তাঁর ভাইয়ের অনুগতদের বিরোধিতা করা কোনও টেকনিশিয়ানেরই পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই সমস্ত গিল্ডে প্রভূত অসন্তোষ সত্ত্বেও কোনও টেকনিশিয়ানই জনসমক্ষে মুখ খুলতে সাহস পান না। অচিরেই অধিকাংশ গিল্ডের কর্মসমিতি তাদের অনুগত লোক দখল করেন। যারা শুরুতে বিরোধী ছিলেন, টিকে থাকার স্বার্থে তাদের অনেকেই দলে ভিড়ে যান।

এর পাশাপাশি আরেকটি ঘটনা নাকি ঘটতে থাকে। অভিযোগ, টালিগঞ্জ এলাকার নানা লোক ইন্ডাস্ট্রিতে ঢালাও কার্ড পেতে শুরু করে এই সময়। এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ভোটের রাজনীতির সুবিধার্থে। স্বরূপ বিশ্বাসের মতোই, এরা কেউই প্রশিক্ষিত নন এবং সিনেমা, সিরিয়ালে কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতাই এদের নেই। এই কাজটি করে এলাকাতে অরূপ বিশ্বাস নিজের প্রতি এক ধরনের আনুগত্য তৈরি করার প্রক্রিয়া চালু করেন বলে অভিযোগ সিনেপাড়ার। আগের পর্বেও উল্লিখিত হয়েছে, এই সমস্ত অবৈধ কার্ডপ্রাপ্ত মানুষদের রোজগারের একটা অংশ আবার ঘুরপথে ক্ষমতাসীনদের কাছেই ফিরে যায় বলে অভিযোগ। শুটিংয়ে এত লোক নিতেই হবে, এবং সময় অসময় সেই লোকদের তালিকাও গিল্ড গুলি থেকে নির্ধারিত হবেএই বাধ্যবাধকতা আগে একেবারেই ছিল না, এখন হয়েছে কারণ এই ভুঁইফোঁড় সদস্যদের মোটা টাকার বিনিময় কার্ড নিতে হয়েছে। এবার এই লোকদের যদি ইন্ডাস্ট্রিতে একটা নির্দিষ্ট টাকার কাজ না পাইয়ে দেওয়া হয় তাহলে হিতে বিপরীত হবে!

‘গুপি শুটিং’ শব্দটি এই সময়ই ফেডারেশন তৈরি করে। এই গুপি শুটিং কথাটির ফেডারেশনকৃত ব্যাখ্যা হলো, ফেডারেশনের নির্দিষ্ট করে দেওয়া টেকনিশিয়ান সংখ্যার থেকে কম টেকনিশিয়ান নিয়ে যে সমস্ত শুটিং হয় তা নাকি অবৈধ! সব সিনেমাই কোটি টাকার বাজেটে হয় না, সব সিনেমাই তারকা নিয়ে হয় না। অর্থের অভাবে ছোট ইউনিট নিয়ে নানা কাজ হয়, এমনকি বড় বাজেটের ছবিতেও প্রয়োজনের ভিত্তিতে কিছু কিছু দিন ছোট ইউনিট নিয়ে কাজ হয়। এই প্রথা চালু আছে সারা বিশ্বজুড়েই! বিশ্বের কোথাও তা অপরাধ বলে গণ্য নয়। ফেডারেশন কখনই শুটিংয়ের জন্য কত লোক লাগবে তা ঠিক করে দিতে পারে না। দেশের কোনও আইনেই  ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে তাদের সেই অধিকার নেই। এরপরেও কেউ যদি এভাবে কোথাও শুটিং করেন, সেই খবর কীভাবে পায় স্বরূপের দল? সেই যে, নানা গিল্ডে নিজের অনুগত মানুষ ঢুকিয়ে রেখেছিলেন সভাপতি, অভিযোগ, তারাই ইনফর্মারের কাজ করেন। টলিপাড়ার অভিযোগ, খবর পেয়ে খুব দ্রুত সেই সমস্ত শুটিংয়ে লোক পাঠিয়ে ধমকানি-চমকানি করা হয়। এদের টার্গেট মূলত থাকে সেই সব পরিচালক এবং প্রযোজক যারা ক্ষমতাবান নন। শুটিংয়ের মাঝখানে আটকে পড়া প্রযোজক এবং পরিচালকের পক্ষে 'মূল্য ধরে' মীমাংসা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। কত টাকায় 'সেটল' হবে তা নির্দিষ্ট না, পরিচালক, প্রযোজক এবং শুটিংয়ের বহর দেখে তা নির্ধারিত হয়। অভিযোগ, এই যে টাকাটি নেওয়া হয় তার রসিদ আজ অবধি কোনও পরিচালক বা প্রযোজক কখনো পাননি। বলাই বাহুল্য এই ধরনের কাজ করারও কোন আইনি অধিকার ফেডারেশন বা কোনও গিল্ডের নেই। কিন্তু বিগত ১০-১২ বছরে এই ধরনের ঘটনার ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, অন্য এক প্রোডাকশন কন্ট্রোলার ইনস্ক্রিপ্টকে আরও জানান, তাদের পূর্ববর্তী ইউনিয়নের কর্মসমিতির সদস্যরা (এরা স্বরূপের পেটোয়া নন) একটা নিয়ম চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের হিসেবে, একজন প্রোডাকশন কন্ট্রোলার একদিনে একটা ইউনিটেই কাজ করতে পারবেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, ইউনিয়নের বিভিন্ন সদস্যরা যাতে কাজ পাওয়ার সমান সুযোগ পান। পুরোটা চালু করা না গেলেও এই নিয়ম নাকি অনেকখানিই কার্যকরী ছিল। ২০১৬ সালের পরে স্বরূপ বিশ্বাসের অনুগতরা প্রোডাকশন কন্ট্রোলারদের ইউনিয়ন দখল করার পর এই নিয়ম উঠে যায় বলে দাবি তাঁর। তিনি বলছেন, নতুন অলিখিত নিয়ম হয় যাতে একজন প্রোডাকশন কন্ট্রোলার একসঙ্গে তিনটি সিরিয়ালে কাজ করতে পারবেন। পরিবর্তে তাঁদের সিরিয়াল প্রতি ১২ হাজার টাকা প্রতি মাসে ইউনিয়নে দিতে হবে। সদস্যদের অনুমান, এর থেকে প্রোডাকশন কন্ট্রোলারদের ইউনিয়ন মাসে ১ লক্ষ ৮০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা রোজগার করে। এই নিয়ম কোনও সাধারণ সভা ডেকে গৃহীত হয়নি এবং এর থেকে সংগৃহীত অর্থেরও আজ অবধি কোনও অডিট হয়নি। সহজেই অনুমান করা যায়, এটা একটা মডেল। যে সমস্ত ইউনিয়নে সদস্যদের একাধিক ইউনিটে কাজ করার সুযোগ থাকে,  সেখানে এই নিয়ম চালু করা এবং তার থেকে রোজগার করাটাও খুবই স্বাভাবিক একটা পরিণতি।

অযৌক্তিক সেই সব নিয়ম না মানলেই রয়েছে বহিষ্কারের হুমকি, সারাক্ষণ ভীতির আবহ। কিন্তু ফেডারেশনের মতো ঐতিহ্যবাদী একটি সংগঠন কীভাবে এমন দলীয় রাজনীতি নির্ভর হয়ে উঠল? ফেডারেশনের ইতিহাস ইনস্ক্রিপ্টকে জানিয়েছেন বিমল দে, পুরনো ডিরেক্টর্স অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, ১৯৭১ সালের এক উত্তাল সময়ে খানিক অদ্ভুত কারণেই জন্ম হয়েছিল পুরনো ডিরেক্টর্স অ্যাসোশিয়েশনের। টলিপাড়ার প্রবীণরা জানান, সেই সময় প্রচুর পরিচালককেও নকশাল সন্দেহে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, আটকে রাখে। রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশই নাকি তখন পরামর্শ দেয় একটি সংগঠন তৈরির। তাতে করে সংগঠনের সদস্য হলে পরিচালকদের নকশাল সন্দেহে আটক করলেও তাঁদের ছেড়ে দেওয়া সুবিধার হবে। 

আরও পড়ুন- মালয়ালম সিনেজগতে মহিলারা কতটা নিরাপদ? প্রকাশ্যে রিপোর্ট! টালিগঞ্জ কবে মুখ খুলবে?

স্বরূপ বিশ্বাসকে টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র জগতে হাত ধরে নিয়ে আসেন অলোক ভৌমিক। তিনি ছিলেন ভিডিও অ্যান্ড সিনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর্স গিল্ড অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি। অলোক ভৌমিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে, ক্ষমতার জোরে স্বরূপ বিশ্বাসকে অবৈধ উপায়ে সহকারী পরিচালকের কার্ড দেন বলে অভিযোগ বিমল দে-র। সহকারী পরিচালকের কার্ড পেতে গেলে নিদেন পক্ষে তিনটি প্রজেক্টে অবজার্ভার হিসেবে কাজ করা বাধ্যতামূলক। এইখানে বলে রাখা ভালো, ভারতবর্ষের কোনও নাগরিকের ট্রেড ইউনিয়নের  সদস্য হওয়ার জন্য কোথাও কোনও আইনি বাধা নেই। চাইলে যে কেউ ইউনিয়নের সদস্য হতে পারেন।  কারণ সেটি কোনও বিশেষ সুবিধা নয়।  ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়া যে কোনও নাগরিকের প্রাথমিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। আর ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে কেউ কাজ করতে পারবে না এটাও ভারতের ট্রেড ইউনিয়ন আইনে কোথাও লেখা নেই। এই যে, কার্ড দেওয়ার ব্যাপারটা এক একটি গিল্ড নিজেদের অধিকারে রেখেছেন এই কাজটাই বেআইনি। এরপরেও গিল্ডের নিজস্ব নিয়মেই এই কার্ড পাওয়ার জন্য একজন সাধারণ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর বা অবজার্ভারকে বছরের পর বছর তদবির করে যেতে হয় সাফল্য ছাড়াই। গিল্ডের নিজের তৈরি করা নিয়ম বলছে, সদস্য হতে গেলে এই ইন্ডাস্ট্রির লোক হতে হবে। চলচ্চিত্র পরিচালক কাউকে সহকারী পরিচালক হিসেবে নিলে তবেই তিনি সহকারী পরিচালক হবেন। না হলে তিনি ইউনিয়নের সদস্য হবেন না। অথচ দলীয় রাজনীতির জোরে অভিজ্ঞতাহীন স্বরূপ বিশ্বাস কার্ড পেয়ে যান এক লহমায়। ইনস্ক্রিপ্ট জানতে পেরেছে, ২০১৮ সালের পর থেকে গিল্ডের তরফ থেকে কোনও নতুন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের কার্ড নাকি ইস্যুই করা হয়নি। টালিগঞ্জে কাজের হার কতটা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে, এই তথ্যেই তা প্রমাণ হয়ে যায়।

প্রবীণদের একাংশ বলছেন, তৃণমূল যখন সদ্য ক্ষমতায় এসেছে তখন জেলায় জেলায় প্রচারে তৃণমূলের দরকার ছিল তারকা ও সিরিয়াল অভিনেতাদের মুখ! সিনেপাড়া থেকেই দলের প্রচারের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে মুখ বেছে নেয় তৃণমূল। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অনেককেই নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হয়।এই লক্ষ্যেই শাসক তৃণমূল টালিগঞ্জের দখল নেয়। অরূপ বিশ্বাস যেহেতু টালিগঞ্জের বিধায়ক, তাই তাঁকেই এই শিল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরনো ডিরেক্টর্স অ্যাসোশিয়েশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, নিজের কার্ড পাওয়ার পরে দাদা অরূপের জন্যও বিমল দে-র কাছেই পরিচালক গিল্ডের একটি কার্ড পাওয়ার জন্য তদবির করেন স্বরূপ। বিমল দে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং তাতেই তিনি ও তাঁর গিল্ড বিরাগভাজন হন। এই প্রসঙ্গে বিমল দে-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি হেসে জানান, " যেহেতু আমার কাছে দেখানোর মতো এই বিষয়ে কোনও প্রমাণ নেই তাই আমি সংবাদ মাধ্যমের কাছে কারও নাম নেব না।"

অভিযোগ, বিমল দে-র পুরনো ডিরেক্টর্স গিল্ডের (EIMPDA) ফেডারেশনের স্বীকৃতি বাতিল করে দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। প্রতিটি ডিরেক্টর্স গিল্ড নিজেদের অ্যাফিলিয়েশন রিনিউয়ালের জন্য ফেডারেশনকে বাৎসরিক চাঁদা দেয়। বিমল দে-র সংগঠনের চাঁদার যে চেকটি দেওয়া হয়েছিল, তা পরিকল্পনা করেই কোনওদিন ভাঙানোই হয়নি। সেই চেক তাদের ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। পরে বলা হয়, এই টাকা যেহেতু  দেওয়া হয়নি তাই এই অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাফিলিয়েশন বাতিল করা হয়েছে। বাস্তব বলছে, ওই চেক দেওয়া হয়েছিল, তা জমাই দেওয়া হয়নি। 

বিমল দে ও তাঁর অ্যাসোশিয়েশন যে অরূপ এবং স্বরূপের কথা শুনে কাজ করবে না এটাই ছিল তাদের সরিয়ে দেওয়ার মূল কারণ। তবে এখানেই শেষ না।

ততদিনে মেডিক্লেমের বিষয়টি শুরু হয়ে গেছে। বিমল দে-র সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়ার ফলে সেই সংস্থার সদস্যদের কারও মেডিক্লেমের অনুমতি পাওয়া যায় না। মেডিক্লেম না পাওয়ার কারণে বিমল দে-র সংগঠন ছেড়ে বহু সদস্যই বেরিয়ে স্বরূপের গোষ্ঠীর শরণাপন্ন হন। তাদের সংগঠনের সদস্যদের জন্য মেডিক্লেমের আবেদন জানিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে একাধিক চিঠিও লেখেন বিমল। যদিও তার উত্তর আজও আসেনি। বিমল দে এরপর একাধিক আরটিআই করেন। জানতে চান, ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে ফেডারেশনের আদৌ অস্তিত্ব আছে কিনা। আরটিআইয়ের উত্তরে জানা যায়, ২০১৬ সাল অবধি ফেডারেশনের কোনও H ফর্ম জমা পড়েনি। তাই ততদিন অবধি ফেডারেশনের কোনও অস্তিত্বই রেজিস্ট্রার অফ ট্রেড ইউনিয়নের কাছে ছিল না। অর্থাৎ, স্বরূপ বিশ্বাস সভাপতি থাকাকালীনই ২০১৬ অব্দি ফেডারেশন খাতায়-কলমে অস্তিত্বহীন ছিল। সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন  থাকা সত্ত্বেও এই সময়কালে ফেডারেশন এক হাতে ইন্ডাস্ট্রি  শাসন করে গেছে। 

বিমল দে জানান, "এই ভয়ানক তথ্যটা ইন্ডাস্ট্রির প্রায় কোনও মানুষই জানে না। আমার ক্ষমতা খুব সীমিত। আমার সংগঠন এখন দুর্বল। স্বরূপের তত্ত্বাবধানে নতুন ডিরেক্টর্স অ্যাসোশিয়েশন তৈরি হয়েছে তার পরবর্তীতে। ফলে আমার কথা কারও কাছেই পৌঁছয়নি।" H ফর্ম প্রতি বছর রেজিস্ট্রার অফ ট্রেড ইউনিয়নকে জমা দিতে হয়। সেখানে সরকারকে নির্ধারিত টাকা, অডিট রিপোর্ট, বার্ষিক সভার বিবরণ জমা দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানাতে হয়। এটি করার জন্য একটি সংবিধান লাগে। বিমল দে-র অভিযোগ,

"ওরা জীবনে কোনওদিন ট্রেড ইউনিয়ন চালায়নি এর আগে। অভিজ্ঞতা ছাড়াই ওরা ক্ষমতা দখল করেছিল। কাজেই ট্রেড ইউনিয়নের কোনও নিয়ম কানুনই ওদের জানা ছিল না। ওদের নজর ছিল সিন্ডিকেটের দিকে তাই সংবিধানটার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল এবং পুরনো সংবিধানের কোনও কপিও ওদের কাছে ছিল না।"

এই আরটিআই-এর ফলে ফেডারেশন নড়েচড়ে বসে। তারা ট্রেড ইউনিয়নের কমিশনারকে আর্জি জানা, যাতে তিনি বিমল দে-কেই অনুরোধ করা হয় ফেডারেশনের একটি সংবিধান বানিয়ে দিতে। অভিযোগ, একটি অবৈধ কার্ড পেতে না দেওয়ার রেশ ধরেই বিমল দে-কে এই হেনস্থা করা হয়। এখানেও শেষ না।

এনটিওয়ান স্টুডিওতে বিমল দে-র সংস্থার যে অফিস ঘর ছিল সেখান থেকে সমস্ত মালপত্র বের করে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযোগ, নিউ থিয়েটার স্টুডিওর মালিকপক্ষকে চাপ দিয়ে তাঁকে ওই ঘরছাড়া করা হয়। বিমল দে বলছেন, "আমাকে বলে ঘর ছাড়ুন। ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে বসছি, সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার অনুযায়ী কেউই বের করতে পারেন না। তাও মালপত্র সব বের করে বাইরে ফেলে দিয়েছিল। তালা বন্ধ করে দেয়। পুলিশ কোনও ডায়রি নেয়নি। তারপর পুলিশ কমিশনারের কাছে যাই। তিনি অভিযোগ নেন, এখন মামলা চলছে।" তাঁদের ২০ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ডিপোজিট ছিল, যা ফেডারেশন নানা ভাবে হস্তগত করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ বিমল দে-র। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।

বিমল দে-র আরও অভিযোগ, স্বরূপ বিশ্বাসদের অলিখিত নিয়মে, গিল্ডে নতুন সদস্য নিতে গেলে নাকি সদস্যপদের টাকার ১০% থেকে ২০% দিতে হবে ফেডারেশনকে। বলা বাহুল্য, এই টাকা অডিটে দেখানোও হয় না। এত সমস্ত অভিযোগ এতদিন সামনে আসেনি কেন? কীভাবে আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে টাকা তোলা হয় বা বিরোধী সদস্যদের হেনস্থা করা হয়? সমস্ত অভিযোগের উত্তর খুঁজতে স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে ইনস্ক্রিপ্ট।

আসছে পরবর্তী কিস্তিতে

লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ- madhurima.dutta@nexval.com

More Articles