বিশাল বদল তৃণমূলে? কী রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো অভিষেকের রিপোর্টে?

TMC Change Proposal by Abhishek Banerjee: জেলাওয়াড়ি একটি রিপোর্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছেন অভিষেক। যার ভিত্তিতে তৃণমূলের মধ্যে বড়সড় রদবদল আসতে পারে।

গত ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে বড় বার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দলে ঝাড়াইবাছাই হবে ঢেলে। বিশেষ করে 'বিশ্বাসঘাতক'-দের জন্য কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সকলকেই নিজের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। নাহলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন মাস। এর মাঝে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখের অস্ত্রোপচার করতে গিয়েছেন বিদেশে। রাজ্য প্রায় দু'মাস ধরে আরজি কর ইস্যুতে উত্তপ্ত থেকেছে। ২১-এর বার্তাটি মাঝে চাপা পড়ে গেছে বলেই ধারণা ছিল অনেকের। এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন তৃণমূলের 'সেনাপতি'। সূত্রের খবর, জেলাওয়াড়ি একটি রিপোর্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছেন অভিষেক। যে রিপোর্টে পুরপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিধায়ক, সকলের ভূমিকাই আতশকাচের তলায় এসেছে। জানা যাচ্ছে, এই রিপোর্টের ভিত্তিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বড়সড় রদবদল আসতে পারে।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, ১২৫টি পুরসভায় রদবদল হতে চলেছে। কেমন রদবদল আর কেনই বা রদবদল? তথ্য বলছে, কলকাতা পুরসভার ৪৮টি ওয়ার্ডে হেরেছিল তৃণমূল, লোকসভা ভোটের পর। রাজ্যের মুখরক্ষা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, খোদ কলকাতার শহুরে এলাকাতেই তৃণমূলের ভোট কমে যাচ্ছে। এই ভোটের অনেকটাই যাচ্ছে বিজেপির কাছে। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা মাঝে বৈঠক করে নেতাদের বার্তাও দিয়েছিলেন। এই রিপোর্টে তৃণমূলের দলীয় প্রতিনিধি, কাউন্সিলর, চেয়ারপার্সনদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়েছে। কী এমন ফাঁক থেকে যাচ্ছে দলের নেতাদের তরফে যে হু-হু করে পুর এলাকায় জমি হারাচ্ছে তৃণমূল? সূত্রের খবর, তৃণমূলের ১৩৫ টি সাংগঠনিক জেলা আছে। এই সাংগঠনিক জেলাগুলিতে জেলা সভাপতি এবং অন্যান্যদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। ৩৫টি পুরসভা রয়েছে, যেখানের চেয়ারপার্সন, কাউন্সিলরসহ অন্য পুরপ্রতিনিধিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- তৃণমূল ‘দল’ নিয়ে কি মমতা-অভিষেকের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিল আরজি কর কাণ্ড?

কী কী খতিয়ে দেখা হবে? দেখা হবে, এই প্রতিনিধিরা আখের গোছাতেই ব্যস্ত না মানুষের জন্যও কিঞ্চিৎ কাজ করছেন। উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন বাস্তবেই। দেখা হবে, এই প্রতিনিধি-নেতারা তলে তলে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন কিনা বা দলবিরোধী কাজ করছেন কিনা। তৃণমূলের উপর কেন একাংশের মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে তাই ছানবিন করে দেখতে চাইছে দল। দলীয় নেতাদের অপকর্ম বা ক্ষমতার দম্ভবে মানুষের প্রতি উদাসীনতাই কি কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে দলের? যদি তাই হয় তাহলে অচিরেই এই নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে দল। মানুষের আস্থা ফেরাতে আবারও উন্নয়নের বাণীই হাতিয়ার করছে চাইছে ঘাসফুলের শিবির। তবে তৃণমূলের সব পুরপ্রতিনিধিই কি দুর্নীতিগ্রস্ত? সব নেতাই কি টাকা ছাড়া নড়েন না? এমন কেউ কেউ তো আছেন যারা কাজ করছেন উন্নয়নের জন্য। হয়তো কোনও চেয়ারপার্সন চাইছেন, শহরের জন্য ভালো কাজ করতে কিন্তু কোনও কাউন্সিলর তলে ঘোঁট পাকাচ্ছেন, যোগাযোগ রাখছেন বিরোধী শিবিরের সঙ্গে বা দুর্নীতিকে তোল্লাই দিচ্ছেন। তাহলে জবাবদিহি করতে হবে সেই কাউন্সিলকে তো বটেই, সেই চেয়ারপার্সনকেও। কেন অভিযুক্ত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তার খতিয়ান দিতে হবে ওই চেয়ারপার্সনকে।

কলকাতা পুরসভার মেয়রকেও কি তবে জবাবদিহি করতে হবে? তৃণমূলের একাংশ বলছে, মমতাকে পাঠানো অভিষেকের তালিকায় নেই কলকাতার নাম। তাই ফিরহাদ হাকিমের মেয়র পদ আপাতত নিরাপদে। তবে যেহেতু, নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব বিষয়টিও অভিষেকের সঙ্গে যুক্ত তাই প্রশ্ন উঠছে, বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কি তবে বিদায়ের পালা? সূত্রের খবর, এই নিয়েও নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তালিকা পাঠিয়েছেন অভিষেক। গত লোকসভা ভোটে প্রবীণদের টিকিট দেওয়া নিয়ে অভিষেক শিবিরের মতানৈক্য ছিল। লোকসভার প্রার্থী তালিকায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের নাম থাকায় অসন্তুষ্ট ছিলেন অভিষেক। এই তিন প্রবীণ নেতার হয়ে প্রচারও করেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সূত্রের খবর, এই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বড়সড় সাংগঠনিক বদল আসতে চলেছে। তবে তাড়াহুড়ো চাইছেন না নেত্রীও। আপাতত শিয়রে উপনির্বাচন। ২৩ নভেম্বর সেই উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশ হবে। উপনির্বাচনে দলের ফলাফল দেখেই তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শাসকদলের অন্দরের খবর।

More Articles