৩৭০ আসন জিততে কোন কোন রাজ্যে নজর দিতে হবে বিজেপিকে?

Modi Lok Sabha Election 2024: ২০১৪ সালে বিজেপি একাই ২৮২টি আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২৯০ তে। এবার মোদি-অমিত শাহরা চান সেই সংখ্যাকে ৩৭০-এ নিয়ে যেতে।

লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের অনেক আগে থেকেই 'বিজয় সংকল্প' অভিযান শুরু করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই সূত্রে মার্চের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও রাজনৈতিক সভার ঢল নামিয়ে দিয়েছেন। প্রথম দিন সভা করেছেন আরামবাগে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসনটিতে বিজেপির তপন কুমার রায় মাত্র ১১৪২টি ভোটে তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দারের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন মোদি সভা করলেন কৃষ্ণনগরে। নদিয়া জেলার দু'টি লোকসভা আসনের মধ্যে কৃষ্ণনগর আসনটি তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র জিতেছিলেন, আর রানাঘাট আসনটি বিজেপির জগন্নাথ সরকার জিতেছিলেন। মহুয়ার আসনটিতে জয়ের ব্যবধান ছিল ৬৩,২১৮ আর রানাঘাট আসনটিতে জগন্নাথ ২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন।

এর মধ্যেই মোদির বারাসাতে সভা করতে আসার কথা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে বনগাঁ ও ব্যারাকপুর ছাড়া বসিরহাট, বারাসাত, দমদম লোকসভা আসনে হেরেছিল বিজেপি। এবার সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহের পর (যেটি বসিরহাট আসনের মধ্যে পড়ে) মনে জোর পেয়েছে বিজেপি। কাজেই যেখানে বিজেপির একটু উৎসাহ প্রয়োজন সেখানেই মোদির সভা রেখেছে বিজেপি।

কারণ নরেন্দ্র মোদি যে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪২টিই জিততে হবে বলে টার্গেট দিয়ে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের ,তাতে এটি স্পষ্ট যে মোদির দরকার যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব তত আসন।

আরও পড়ুন- কেন তমলুক আসন থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করবে বিজেপি?

পশ্চিমবঙ্গে ৪২টির মধ্যে ৪২টি জেতা যে অসম্ভব তা মোদিও জানেন। কিন্তু তিনি আরও একটি টার্গেট দিয়েছেন দলকে। এবার এনডিএ জোট মিলে ৪০০টির বেশি লোকসভা আসন জিততে হবে সারা দেশ জুড়ে। তাতে বিজেপির একার যোগদান যেন ৩৭০টি হয়। এহেন অসম্ভবকে সম্ভব করতে হলে মোদিকে এই দুর্বল আসন বা গত নির্বাচনে একটুর জন্য হাতছাড়া হওয়া আসন বা সম্ভবনাময় আসনগুলির দিকে ঝাঁপাতেই হবে।

২০১৪ সালে বিজেপি একাই ২৮২টি আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২৯০ তে। এবার মোদি-অমিত শাহরা চান সেই সংখ্যাকে ৩৭০-এ নিয়ে যেতে। তার মানে আরও ৮০টি আসন বিজেপিকে নতুন করে জিততে হবে।

হাতে যেগুলি রয়েছে সেগুলিতে যে জয় সব জায়গায় নিশ্চিত তার কোনও মানে নেই। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের হিসেব ধরলেই বোঝা যাবে যে অনেকগুলি আসনে বিজেপি যে জিততেই পারবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। যেমন হুগলি, বর্ধমান-দুর্গাপুর, ব্যারাকপুর, ঝাড়গ্রাম। সুতরাং নতুন জায়গায় হাত বাড়াতেই হবে বিজেপিকে।

প্রথমেই তাই দুর্বল বা কম ব্যবধানে হারা আসনগুলির দিকে নজর দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। এবার তাদের নজরে থাকবে একদম জিততে না পারা রাজ্যগুলির দিকেও।

উত্তরের রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দিল্লি, রাজস্থান, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা এবং গুজরাত মিলিয়ে মোট ১৮৭টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে গত নির্বাচনে বিজেপি ১৫৭টি ও শিরোমনি অকালি দল ২টি আসনে জিতেছিল। তার মধ্যে উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত ও হরিয়ানায় সব আসনই বিজেপির দখলে ছিল। সুতরাং এই অঞ্চলে একমাত্র উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ৮০টি আসনের মধ্যে ৬৪টি থেকে আসন বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।

পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রে বিজেপি ও শিবসেনা মিলে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ৪৮টির মধ্যে ৪১টি আসন জিতেছিল। এবার পুরনো শিবসেনা নেই। তাই এনসিপি ও শিবসেনা ভেঙে মরিয়া চেষ্টা করবে বিজেপি যাতে আগের থেকে এনডিএ-র আসন সংখ্যা না কমে। সুতরাং উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারত থেকে বিজেপির আসন খুব বেশি বাড়ার সম্ভবনা প্রায় নেই।

পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অসমে ১৪টির মধ্যে ৯টি আসন বিজেপি গতবার জিতেছিল। ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ১৪টির মধ্যে ১২টি আসন জিতেছিল ও বিহারে বিজেপি আবার নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে)। গতবার বিজেপি-নীতিশ জোট ৪০টির মধ্যে ৩৩টি আসন জিতেছিল। আর ওড়িশায় ২১টির মধ্যে ৮টি জিতেছিল বিজেপি। যদিও ওড়িশায় বিজেপির 'বন্ধু' নবীনবাবুর দল বিজেডি বেশিরভাগ আসন জেতে। তিনি কারও সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করেন না।

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে বিজেপির পক্ষে আসন আর বাড়বে না। সিকিম নিয়ে ও অসম ছাড়া ১২টি আসনের মধ্য়ে বিজেপি ৫টি ও শরিক দল ১টি আসনে জিতেছিল। সেখানে আঞ্চলিক দলের সমীকরণ এমনই যে বিজেপির পক্ষে একা আসন জেতা কঠিন। বরং আঞ্চলিক দলগুলি পরে এনডিএ-তে যোগ দিতে পারে। এটি করেই থাকে উত্তর-পূর্বের দলগুলি।

আরও পড়ুন- ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাম প্রত্যাহার, কেন বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না পবন সিং?

সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসন বাড়ানো বা অন্তত যা আসন ছিল তাই ধরে রাখার পাশাপাশি, আসন সংখ্যা বাড়াতে গেলে মোদিকে ওড়িশা, অসম ও বিহারেও মন দিতে হবে।

তবে বিজেপির সবচেয়ে দরকার দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে নজর দেওয়া। যদিও তেলঙ্গানা নির্বাচনে বিজেপি সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। গতবার তামিলনাড়ু, কেরল ও অন্ধ্রপ্রদেশে একটিও আসন জিততে পারেনি বিজেপি। তামিলনাড়ুতে জোটসঙ্গী এইআইডিএমকে ১টি আসন জিতেছিল। কর্ণাটকে অবশ্য ভালো ফল করেছিল গেরুয়া শিবির।

কেরল ও তামিলনাড়ুতে বিশেষ মনযোগ দিয়েছেন স্বয়ং মোদি। সভা করার পাশাপাশি অযোধ্যার রামমন্দিরের সঙ্গে তামিলদের যোগসূত্র রচনার চেষ্টা করেছেন। চেন্নাইতে বিরোধী পরিসর দখল করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিজেপি। কেরলে আরএসএস-এর হাত ধরে একটা মরিয়া চেষ্টা মোদিকে করতেই হবে।

তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও কেরল মিলিয়ে মোট ১২৮টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে মোদিরা জিতেছিলেন মাত্র ৩০টি। সুতরাং ৩৭০ ছুঁতে গেলে দাক্ষিণাত্য অভিযান করতেই হবে মোদিকে। বাংলা থেকে শুরু করে তাঁর যাত্রা তাই কেরল পর্যন্ত নিয়ে যেতেই হবে।

More Articles