ধুতি-টোপর পরে তৈরি বট গাছ! যেভাবে ধুমধাম করে ‘একমাত্র ছেলে’র বিয়ে দিলেন বৃদ্ধা মা
Marriage of Tree at East Bardhaman : গাছের বিয়ে! পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে ধুমধাম করে বসল আসর! কী আসল ঘটনা?
ছেলে বড়ো হয়েছে, দিব্যি নিজের কাজ নিজে করতে পারে। রুজিরুটি নিয়েও বিশেষ ভাবনার কিছুই নেই। এই অবস্থায় সব বাবা-মাই চায় বিয়ে করে সংসারী হোক সন্তান। ঠিক তেমনটাই চেয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা রেখা দেবী। স্বামী, স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এই একটি মাত্র ছেলে নিয়েই ছিল তাদের ভরপুর সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে আগেই। স্বামীও গত হয়েছেন ইতিমধ্যে। এখন থাকার মধ্যে এই এক ছেলে এবং বৃদ্ধা মা। ফলে শেষ জীবনে ছেলেকে সংসারী করতেই ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করলেন রেখা দেবী।
ঘটনাটা এটুকু শুনে হয়তো আর পাঁচটা সাধারণ ঘটনার মতোই লাগছে। এই তো স্বাভাবিক। তাহলে তা নিয়ে এত জলঘোলার প্রয়োজন পড়ল কেন? জানলে অবাক হবেন এই যে ছেলে সন্তানের বিয়ে নিয়ে এত আয়োজন, এত ধুমধাম সে আসলে কোনও রক্ত মাংসের সন্তান নয়, আদতে একটা বট গাছ। আর এই বট গাছটিই হল রেখাদেবীর একমাত্র ছেলে।
দুই কন্যা সন্তান ছিল তাঁর, ফলে ছেলের অভাব পূরণ করতে এই ব্যবস্থা। ছোট্টবেলা থেকে নিজের ছেলে হিসেবে কার্যত কোলে পিঠে করেই লালন পালন করেন এই বট গাছটিকে। ফলে এই গাছটিকে বাদ দিয়ে কিছুই ভাবতে পারেন না তাঁরা। এখন স্বামীও গত হয়েছেন, তাই রক্ত মাংসের পরিণত ছেলে থাকলে যেভাবে বিয়ের আয়োজন করতেন একই ভাবে বট গাছেরও বিয়ের আয়োজন করলেন এই বৃদ্ধা।
আরও পড়ুন - পাশে সারাক্ষণ হেঁটে চলে কেউ! অভাবনীয় কারণে নামাজ পড়াও বন্ধ প্রাচীন এই মসজিদে!
আজকের এই আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনা ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চারদিকে। এখনও এই বাংলায় বেশ কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে বট গাছের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে বেশ কিছু কু-সংস্কার চালু রয়েছে। যদিও এই মেমারির সাম্প্রতিক বিয়েটি ক্ষয়ক্ষতি হীন। এর সঙ্গে প্রচলিত কোনও কুপ্রথা অথবা সংস্কারের কোনও যোগাযোগ নেই। এই ঘটনাটি একেবারেই অভিনব।
অকালে স্বপ্ন দেখার যে নেশা বাঙালির চিরন্তন তারই কোনও ক্ষীণ প্রভাব হয়তো বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন রেখাদেবীও। শুধু যে মুখে একটি গাছকে সন্তান হিসেবে জাহির করছেন এমন নয়, বরং প্রকৃতই মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছেন তিনি। গ্রামের আরও পাঁচ জনের কাছ থেকে কিছু কিছু টাকা পয়সা জোগাড় করে বিয়ের আয়োজন করেন তিনি। অভিনব এই ঘটনাটি ঘটেছে মেমারি থানার অন্তর্গত পারিজাত নগরে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল পাত্রী কে? সেই প্রশ্নেরও উত্তর মিলেছে ইতিমধ্যে। আজকের যুগে সবাই লাভ ম্যারেজে বিশ্বাসী তাই হয়তো বট গাছটিও নিজের পাত্রী পছন্দ করে রেখেছিলেন আগে থেকেই। অভিভাবক হিসেবে কেবল শুভ ক্ষণ দেখে যুগলকে এক করে দেওয়ার অপেক্ষা। আসলে প্রকৃতির নিয়মে ওই বট বৃক্ষের কোলের কাছেই বেড়ে ওঠে অন্য একটি বট গাছ। তৈরি বউ মেনে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরাও। একেবারেই প্রথাগত হিন্দু বিয়ের সমস্ত রীতিনীতি মেনে কলাগাছ আল্পনা দিয়ে, শাড়ি-ধুতি, শাখা সিঁদুর টোপর পরিয়ে পুরোহিত ডেকে বিয়ে দেওয়া হয় বট গাছ যুগলের। গোটা ঘটনা ঘিরেই রীতিমতো উত্তেজিত এলাকাবাসীরা। এমন অভিনব বিয়ের সাক্ষী থাকতে পেরে খুশি সকলেই।