মাথায় অসহনীয় যন্ত্রণা, এড়িয়ে যাবেন না! হতে পারে এই রোগে আক্রান্ত আপনি

মাইগ্রেনের ব্যাথা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে জীবনযাত্রায় বদল এনে মাথা যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব অনেকখানি।

হঠাৎ করে শুরু মাথার ব্যথা। অসহ্য যন্ত্রণা! ওষুধ খেয়েও কমছে না ব্যথা। যদিও এই সময়ে মানুষের জীবনে যে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ কাজের চাপ, তাতে মাথা ধরা খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রায়ই এমন অসহ্য মাথা ধরার কারণ হতে পারে মাইগ্রেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় এগারো শতাংশ মানুষ মাইগ্রেনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু মাইগ্রেন কী? তাছাড়া কাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে বা কী থেকে বুঝবেন আপনার সাধারণ মাথা ব্যথা নাকি মাইগ্রেন? চলুন বিশদে জানা যাক এ-ব্যাপারে।

মাইগ্রেন কী?
মাথা ব্যথার অন্যতম একটি কারণ। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির হালকা থেকে তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে মাথার একদিকে যন্ত্রণা হয়ে থাকে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির বমি, আলো ও আওয়াজে সংবেদনশীলতা দেখা যায়। এই ব্যথা মাঝে মাঝে হয়, আবার নিজে থেকেই বন্ধও হয়ে যায়। অনেকসময় পুরো মাথাও ব্যথা করতে শুরু করে। কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েকদিন পর্যন্ত এই ব্যথা থাকে। এটি একটি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা। এতে মাথা ব্যথা এবং বমির পাশাপাশি সর্দির সমস্যা হতে শুরু করে। তবে সমস্ত মাথাব্যথাই কিন্তু মাইগ্রেন নয়।

চিকিৎসকদের মতে, মাইগ্রেনের ব্যথা বংশগত একটি অসুখ। যে কোনও বয়সের মানুষেরই মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে সাধারণত দু'ধরনের মাইগ্রেন হয়— ক্লাসিক‍্যাল মাইগ্রেন ও নন-ক্লাসিক‍্যাল মাইগ্রেন। ক্লাসিক‍্যাল মাইগ্রেনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। অপরদিকে নন-ক্লাসিক‍্যাল মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তীব্র মাথা ব্যথা হয়। আর অন্য কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। মাইগ্রেনের ব্যথা হলে নিজের মতো করে ওষুধ খাবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই খাবার খান।

আরও পড়ুন: এবার ভারতে হানা নরোভাইরাসের! কতটা ভয়াবহ এই ভাইরাস, কীভাবে সংক্রমণ?

মাইগ্রেনের লক্ষণ

 ১. ক্ষুধামান্দ্য, অর্থাৎ খিদে কমে যাওয়া

২. কোনও কাজে ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারা যায় না মাইগ্রেন হলে।

৩. পুরো বা অর্ধেক মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব হওয়া। মাথা দপদপ করতে থাকে। সময় বিশেষে ব্যথার দিক পরিবর্তন হতে পারে।

৪. অধিক মাত্রায় ঘাম হওয়া।

৫. তীব্র শব্দ ও আলোয় সংবেদনশীলতা।

৬. কোনও খাবারের কারণে অ্যালার্জি হওয়া।

৭. বমি হওয়া বা বমি-বমি ভাব হলে বুঝতে হবে, সেই ব্যক্তি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন।

কীভাবে সতর্ক হবেন?
যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা যে যে জিনিসগুলি মেনে চলবেন:

১. একেবারেই পেট খালি রাখবেন না। পেট খালি থাকলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাঁকা পেটে গ্যাস হয়, যা মাইগ্রেনকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

২. যেহেতু মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তি আলোয় সংবেদনশীল হন, তাই রোদে ঘোরাঘুরি করলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম, আর্দ্রতার তারতম্যের কারণেও সমস্যা বাড়তে পারে।

৩. অত্যধিক কাজের চাপ হলেও এই ব্যথা শুরু হতে পারে। খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় মেনে না চললেও অনেকে মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সবসময় মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপে থাকলে এক কাপ লেবু চা খেতে পারেন। এতে খানিক স্বস্তি মিলবে।

৪. অত্যধিক মাত্রায় মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এতে দেহে ইনসুলিনের পরিমাণের তারতম্য ঘটে। ফলস্বরূপ মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে।

৫. অতিরিক্ত আওয়াজের কারণেও সমস্যা বাড়তে পারে। তাই প্রচণ্ড জোরে আওয়াজ হতে পারে, এমন জায়গা এড়িয়ে চলুন।

৬. ঘুমের অনিয়ম হলে শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। রাতের বেলা নিয়মিত ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস থাকলে শরীর সুস্থ থাকবে। আপনি ভাবছেন, একদিন অল্প ঘুমিয়ে পরের দিন ঘাটতি পূরণ করবেন। নিজের অজান্তেই ডেকে আনছেন বিপদ। দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের অনিয়ম চলতে থাকলে মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে।

কাদের মাইগ্রেন হতে পারে?
চিকিৎসকদের মতে, মাইগ্রেন পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। ঋতুস্রাব শুরু হলে অনেক মহিলাদের মাইগ্রেন হতে পারে, কারণ এই সময়ে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। দুই তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে, মেনোপজের পর মাইগ্রেন কমে যায়। আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এই সমস্যা মেনোপজের পরেও শুরু হতে পারে।

তবে মাইগ্রেনের সমস্যা কিন্তু ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা বদলে বমি এবং পেট ব্যথার মতো লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। একবারে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, মাইগ্রেনের প্রথম লক্ষণ হতে পারে পেট ব্যথা। যেহেতু এই রোগ অনেকাংশেই বংশগত, তাই বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ যদি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁদের সন্তানের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। অন্যদিকে, বাবা-মা উভয়েই যদি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হন, তাহলে সন্তানের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ঝুঁকি প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়ে যায়।

চিকিৎসা
সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় প্রাথমিক উপশমের জন্য পেনকিলার খেতে দেন চিকিৎসকরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে পেনকিলার খেলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। আর ভুলেও নিজে থেকে কোনও পেনকিলার খেতে শুরু করবেন না, তাতে পরিণাম আরও ভয়াবহ হতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ খুব জরুরি এক্ষেত্রে। প্রেশার ও হাইপারটেশনের রোগীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওষুধের ডোজ কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।

 • তবে খাদ্যাভ্যাসে বদল এনেই মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অতিরিক্ত কফি না খাওয়াই ভালো। তবে মাইগ্রেনের অনেক ওষুধে কিন্তু কফি থাকে। তাই পরিমিত মাত্রায় কফি মাইগ্রেনের ব্যথায় উপশম দিতে পারে। চকোলেট, রেড ওয়াইন, ড্রাই ফ্রুটস, চিজ-জাতীয় খাবার এড়িয়ে গেলে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়।

• ইউক্যালিপটাস অয়েল, মিন্ট অয়েল মাথায় লাগলেও আরাম পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে রোগী ল্যাভেন্ডার অয়েল খেলে তা দ্রুত উপশম দেবে তাঁকে।

• এমন অনেক সুগন্ধি রয়েছে, যা রোগীর মাথা যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেয়। এগুলো সবসময়ে ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হয়। তাই রোগীকে নিজেই বুঝতে হবে যে, কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে বা কোন ধরনের গন্ধে ব্যথা বাড়ছে। তা চিকিৎসকের পক্ষেও রোগ কাবু করতে সুবিধা হবে।

• যেহেতু মাইগ্রেনের সমস্যায় রোগীরা তীব্র আলো সহ্য করতে পারে না তাই অনেকসময় তাঁদের টিন্টেড গ্লাসের চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এতে ব্যক্তির চোখ ঠান্ডা থাকে।

মাইগ্রেনের ব্যাথা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে জীবনযাত্রায় বদল এনে মাথা যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব অনেকখানি।

 

 

 

 

 

More Articles