চোখ রাঙাচ্ছে অশনি, ঘূর্ণিঝড়ে কোন সতর্কতা নিতেই হবে
কীভাবে এই ঝড়ের হাত থেকে বাঁচবেন উপকূলবর্তী এলাকার লোকজন? আসুন দেখে নিই এক নজরে।
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। আদৌ কি বাংলার দিকে আসবে এই ঝড়? আবহাওয়া দপ্তর আশঙ্কা করছে, আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রের উপকূলের দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিমি বেগে আছড়ে পড়বে এই ঝড়। তবে এর পথে একটি বাঁক রয়েছে। বাংলাদেশের দিকেও ঘুরে যেতে পারে ঝড়টি। গত কয়েক বছর থেকেই একের পর এক ঝড়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেন এই আবহাওয়া পরিবর্তন, তা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। তবে এই মুহূর্তে তার থেকেও বেশি প্রয়োজন, কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত– তা পর্যালোচনা করা। কীভাবে এই ঝড়ের হাত থেকে বাঁচবেন উপকূলবর্তী এলাকার লোকজন? আসুন দেখে নিই এক নজরে।
ঘূর্ণিঝড় আসার আগে কী কী সতর্কতা নেবেন?
● এই মুহূর্তে খুব ভালো করে ঘর পরীক্ষা করুন। যেখানে ফাটল ইত্যাদি রয়েছে, দুর্বল জোড় রয়েছে, মেরামত করে নিন। ছাতের কোনও টালি ঢিলা কি না দেখে নিন। দরজা এবং জানলা প্রয়োজনে দুইই মেরামত করে রাখুন।
● বাড়ির আশেপাশের মরে যাওয়া গাছ বা মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলুন। জড়ো করা কাঠকুটো, ফেলে রাখা টিন, ইটের টুকরো, ময়লার বালতি, সাইনবোর্ড ইত্যাদি ঝোড়ো হাওয়াতে উড়ে মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে। এগুলি যাতে না উড়ে যায়, তার ব্যবস্থা করুন।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন বাড়ি? জেনে নিন সেই প্রযুক্তি
● কিছু প্লাই বা তক্তা তৈরি রাখুন। কাচের জানলা হোক বা না হোক, প্রয়োজনে সেই তক্তা জানলা-দরজা ঢাকতে ব্যবহার করা যায়।
● হাতের কাছে কিছু হ্যারিকেন, লণ্ঠনে কেরোসিন ভরে রাখুন। কিছু টর্চ এবং পর্যাপ্ত ব্যাটারিও রাখুন। যাতে প্রয়োজনের সময় আলোর অভাব না হয়।
● পরিত্যক্ত বড় বিল্ডিং আগের থেকেই ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন।
● রেডিওতে ব্যাটারি ভরে রাখুন, কিছু বেশি ব্যাটারি কাছে রাখুন।
● আপৎকালীন অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার রাখুন হাতের কাছে। অনেকদিন টেকে এমন খাবার বেশি করে মজুদ রাখুন।
ঝড় শুরুর মুহূর্তে কী করবেন?
● রেডিওয় কান রাখুন। সমস্ত খবর এ-সময় বেতারে সম্প্রচারিত হয়। নির্দেশবার্তা, সতর্কবাণীও।
● সতর্কবাণীগুলো সম্বন্ধে সচেতন থাকুন, এবং সর্বদা সেইদিকে পরিস্থিতি মোড় নিচ্ছে কি না খতিয়ে দেখুন। এতে ঝড়ের ব্যাপারে অনেকখানি প্রস্তুত থাকা যায়।
● নিজে কোনও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে খবর ছড়িয়ে দিন।
● কখনওই গুজব ছড়াবেন না। গুজবে কানও দেবেন না। এতে ভীত হয়ে বুদ্ধিনাশ হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
● সরকারি তথ্যে আস্থা রাখুন।
● আপনার এলাকায় সাইক্লোনের সতর্কবার্তা জারি করার পরেও সাধারণ কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারেন, তবে অবশ্যই বেতারে কী বলছে, সেগুলো একটু খেয়াল রাখবেন।
● ২৪ ঘণ্টা সাবধান থাকুন। একটি সাইক্লোন অ্যালার্ট আগামী ২৪ ঘণ্টার বিপদকেই সূচিত করে।
এলাকার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার সময় কী করবেন?
● খুব তাড়াতাড়ি উঁচু জায়গায় বা নির্ধারিত আশ্রয়ে পৌঁছন, নইলে যাওয়ার রাস্তা বন্যায় ভেসে যেতে পারে।
● ধরে নেওয়া যাক, আপনার বাড়িটি উঁচু জায়গায় শক্তপোক্তভাবে নির্মিত, সেক্ষেত্রেও বাড়ির নিরাপদতম স্থানে আশ্রয় নিন। তবে স্থান পরিত্যাগের নির্দেশ এলে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে হবে।
● জানলা-দরজা খুব ভালো করে আটকে রাখুন। শাটার থাকলে নামিয়ে দিন।
● বাইরের দরজা যাতে ভেঙে না পড়ে, তার ব্যবস্থা করুন।
● হাতের কাছে তক্তা না থাকলে কাগজ আটকে দিন কাচে। তাতে কাচ ভাঙলেও টুকরো ছিটকে আহত হওয়ার ভয় থাকবে না।
● হাতের কাছে কিছু অতিরিক্ত খাবার ও জল মজুত রাখুন।
● বাড়ি পরিত্যাগের নির্দেশ এলে নিজের জরুরি কাগজপত্র ওপরের তলায় তুলে রাখুন বা এমন জায়গায় রাখুন যেখানে চট করে জল ঢুকবে না।
● বাড়ির একটি জানলা বা দরজা হাওয়ার ঝাপটের বিপরীতে থাকা প্রয়োজন, যা সহজেই খোলা যাবে। কোন জানলা বা দরজাটি এমন, সে সম্পর্কে সচেতন হন।
● নাবালক ও সাবালকদের ডায়েটের পার্থক্য সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে।
● ঝড়ের কেন্দ্র আপনার ঘরের ওপরে অবস্থান করলে কিছুক্ষণের জন্য বাতাস একদম থেমে যাবে, আর প্রচণ্ড বৃষ্টি হবে আধঘণ্টাটাক। এমন সময় ভুলেও বাইরে বেরবেন না। কারণ, কেন্দ্র সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের থেকেও প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ধেয়ে আসবে।
● বাড়ির সমস্ত বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখুন।
স্থান পরিত্যাগের নির্দেশ এলে কী করবেন?
● যা কিছু প্রয়োজনীয়, গুছিয়ে নিন। আপনার ও আপনার পরিবারের দরকারি ওষুধ, বাচ্চাদের বা বয়স্কদের কিছু বিশেষ খাবারদাবার– এই সবই যেন তিন-চারদিনের মতো মজুত থাকে।
● পূর্বনির্ধারিত বিশেষ আশ্রয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছন।
● আশ্রয়স্থলের দায়িত্বে যিনি, তাঁর কথা মেনে চলুন।
● যতক্ষণ না বিপদ পুরোপুরি কাটছে, সেখানেই থাকুন। সরকারি ঘোষণার পরেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেরবেন।
ঝড়ের পরবর্তী সতর্কতা
● ঝড়ের পরে যাতে নানা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সামলাতে কাহিল না হয়ে পড়েন, তার জন্য অবশ্যই টিকা নেবেন।
● ল্যাম্প পোস্ট থেকে ঝুলে থাকা ছেঁড়া তার মাড়াবেন না। দূরে থাকবেন যতটা পারা যায়।
● গাড়ি চালালে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চালাবেন।
● নিজের জায়গায় জমে থাকা ভাঙাফাটা টুকরো, নোংরা ইত্যাদি সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ফেলুন।
● কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে সরকারকে জানান।