অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি থেকে সতর্ক থাকার উপায়
গত কয়েক বছরে ভারতে অনলাইন লেনদেন বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে 4G নেটওয়ার্ক পৌঁছে যাওয়া ও UPI লেনদেনের জনপ্রিয়তার কারণে অনলাইনে টাকা পাঠাতে শুরু করেছেন অনেকেই। এর ফলে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা পাঠানোর ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলছে। তবে ভারতে এখনও বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনলাইন লেনদেনের ঝুঁকি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। এই সুযোগ নিয়ে প্রতারকরা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই, দৈনন্দিন জীবনে একটু সতর্ক থাকলেই প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অনলাইন প্রতারকদের ফাঁদে পা দেওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে কী কী উপায় অবলম্বন করবেন? দেখে নিন।
ব্যাঙ্কের ফোনে 'না' বলতে শিখুন
ব্যাঙ্ক অথবা ক্রেডিট কার্ড বিভাগ থেকে ফোন করে কোনও পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হলে, তা এড়িয়ে চলুন। প্রতারকরা ব্যাঙ্ক থেকে ফোন করার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কে-ওয়াই-সি আপডেট অথবা ক্রেডিট কার্ডের লিমিট বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। তাই দিনের যে কোনও সময় কোনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবার জন্য ফোন এলে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটিকে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অথবা ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানাবেন না। এই সময় প্রতারকরা ভয় দেখানোর জন্য অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতে পারে। এই হুমকিকে গ্রাহ্য না করে নিকটবর্তী ব্রাঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
অজানা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না
হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপে নিয়মিত বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠান অনেকেই। এছাড়াও, ই-মেলের মাধ্যমেও বিভিন্ন লিঙ্ক আসতে থাকে। কোনও লিঙ্ক সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে সেই লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। এই ধরনের বেশিরভাগ লিঙ্কেই ম্যালওয়্যার থাকে। যা আপনার ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেবে। সাধারণত লোভনীয় অফার অথবা লটারি জেতার নাম করে এই ধরনের লিঙ্ক পাঠায় স্ক্যামাররা।
এই ধরনের লিঙ্কে ক্লিক করলে একটি ওয়েবসাইট ওপেন হবে। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যাঙ্কের ভুয়ো ওয়েবসাইট ওপেন হয়। এই ওয়েবসাইটগুলি হুবহু ব্যাঙ্কের আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে। সেখানে ব্যাঙ্কিং ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিলেই তা প্রতারকদের হাতে পৌঁছে যাবে। তাই ফোন ও কম্পিউটারে যে কোনও লিঙ্কে ক্লিক করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
কাস্টমার কেয়ারে ফোন করার আগে সমাধান
ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যে কোনও কোম্পানির গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন করার আগে গুগলে ফোন নম্বর সার্চ করবেন না। যে কোম্পানির গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন করতে চাইছেন সেই কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে নম্বর দেখে নিন। অনেক সময় প্রতারকরা বিশেষ উপায়ে গুগল সার্চে নিজেদের নম্বরটি ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারের নাম করে দেখাতে শুরু করে। এর ফলে গুগল থেকে পাওয়া নম্বরে ফোন করলে সেই ফোন আসলে প্রতারকদের কাছে পৌঁছে যায়। যার ফল হতে পারে ভয়ঙ্কর। তাই যে কোন কাস্টমার কেয়ারে ফোন করার আগে সেই ফোন নম্বর ভালো করে যাচাই করে নিন।
পাসওয়ার্ডের প্রতি সতর্কতা
বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। সব অ্যাকাউন্টে পৃথক পৃথক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এর ফলে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেও অন্য অ্যাকাউন্টগুলি সুরক্ষিত থাকবে। যেমন ধরুন ফেসবুক ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড রাখলে কোন কারণে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলে খুব সহজেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দিতে পারবে হ্যাকাররা।
এছাড়াও, ব্রাউজারে কখনওই নিজের ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড সেভ করবেন না। পাসওয়ার্ড সেভ করার জন্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্য নিতে পারেন। বিনামূল্যে ও সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে সুরক্ষিত ভাবে পাসওয়ার্ড সেভ করার জন্য বাজারে রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। এছাড়াও ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্টে কখনই সহজ পাসওয়ার্ড (12345 অথবা abcd1234) ব্যবহার করবেন না। লেটার, স্পেশাল ক্যারেকটার ও নম্বরের সংমিশ্রণে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। পাবলিক WiFi নেটওয়ার্কে কানেকটেড থাকলে ব্যাঙ্কিং লেনদেন এড়িয়ে চলুন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করার সময় পাসওয়ার্ড টাইপ করতে ভার্চুয়াল কি-বোর্ডের সাহায্য নিন।
সোশ্যাল মিডিয়া লগ-ইন এড়িয়ে চলুন
আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই অনলাইনে অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফেসবুক অথবা গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অনেক ওয়েবসাইটে লগ ইন করা সম্ভব। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ধরনের লগ-ইন এড়িয়ে চলুন। এর ফলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেলে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশন
লগ-ইনের জন্য মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করুন। এই ফিচার ব্যবহার করলে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরে আপনার ফোনে একটি ওটিপি আসবে। সেই ওপিটি দেওয়ার পরেই অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করা যাবে। তাই কোনও কারণে পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে গেলেও প্রতারকরা আপনার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে পারবে না।
ওটিপি ও পিন শেয়ার করবেন না
নিজের ওটিপি, পিন অথবা পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। প্রতারকরা ফোন করে বিভিন্ন উপায়ে ভয় দেখিয়ে আপনার কাছ থেকে পিন, ওটিপি ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। আপনার এক এক মুহূর্তের অসতর্কতার কারণে খালি হয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তাই কোনও পরিস্থিতিতেই এই সব তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে সতর্কতা
আজকাল প্রায় সব কাজের জন্যই পৃথক অ্যাপ এসে গিয়েছে। কিন্তু স্মার্টফোনে যে কোন অ্যাপ ইনস্টল করার আগে প্লে-স্টোর অথবা অ্যাপ স্টোরের রিভিউ ভালো করে পড়ে নিন। রিভিউ সন্দেহজনক মনে হলে সেই অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন। অ্যানড্রয়েড গ্রাহকরা প্লে-স্টোর ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে ফোনে অ্যাপ ইনস্টল করলে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই অন্য স্টোর ও ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপে আকর্ষণীয় ফিচার থাকলেও নিজের সুরক্ষার জন্য প্লে-স্টোর থেকেই অ্যাপ ইনস্টল করুন। অন্যদিকে, কম্পিউটার ও মোবাইল ব্রাউজারে এক্সটেনশন ইনস্টল করার আগে ভালো করে রিভিউ দেখে নিন।
প্রায় সব উপায় আগে থেকে জানা থাকলেও অনেকেই বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করেন না। ফলে চরম খেসারৎ দিতে হয়। তাই সবসময় সতর্ক থাকাই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায়।