মন ভালো নেই দীর্ঘকাল? রোজের জীবনে ছোট ৮ টি বদলেই পাবেন সুখের হদিশ

Overcome Depression Tips: শুধুমাত্র জীবনধারা বদলালেই যে ডিপ্রেশন বাড়ার ঝুঁকি কমে যাবে এমন না

মন ভালো নেই। কতকাল ধরেই তো নেই। রোজ ভাবেন আজ নতুন সকাল, তবু সকাল হয়ে ওঠে চিরাচরিত বিরক্তির। অফিসে তবু যান, মুখে চাইলেও হাসি ফোটে না। ঘরে তবু ফেরেন, মুখে হাসি ফোটে না। একাকী বসে থাকেন তবু মনে হয় অযাচিতের ভিড়, সামলাতে না পারা পরিস্থিতির যন্ত্রণা কালো হতে থাকে, আপনার ছায়ার চেয়েও বেশি কালো। বিষণ্নতা আপনার সর্বক্ষণের মিত্র হয়ে ওঠে। মহামারীর আকার যে নিতে পারে ডিপ্রেশন তা নিয়ে অনেক আগেই সতর্ক করেছেন চিকিৎসক মনোবিজ্ঞানীরা। আসলে বিষণ্ণতা বা অবসাদ এমন একটি মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি যা ক্রমাগত দুঃখ, হতাশার বৃদ্ধি, কাজেকর্মে আগ্রহ বা আনন্দ কমানোর পাশাপাশি, খিদে বা ঘুমের ধরনে পরিবর্তন ঘটায়। আপনি মনোনিবেশ করতে পারেন না, প্রতি মুহূর্তে নিজের ক্ষতি করতেই ইচ্ছা হয়, করেও ফেলেন নানাভাবে। মন থেকে শরীরে অসুস্থ শিকড় চাড়িয়ে দেয় বিষণ্ণতা।

বিষণ্ণতার সঠিক কারণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা না গেলেও, এটি জেনেটিক, জৈবিক, পরিবেশগত এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির সংমিশ্রণ বলেই মনে করা হয়। শুধুমাত্র জীবনধারা বদলালেই যে ডিপ্রেশন বাড়ার ঝুঁকি কমে যাবে এমন না, তবে তারা ঝুঁকি কমাতে বা ডিপ্রেশনের লক্ষণ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার হাতেই রয়েছে রোজের জীবনে সামান্য বদল আনার ক্ষমতা।

আরও পড়ুন- রোজের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন এই বিশেষ খাবার? অবসাদের কারণ ডেকে আনছেন নিজেই

১. নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন মানসিক চাপ কমানো এবং মেজাজ ভালো রাখার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক ফেলে বলে প্রমাণিত। এন্ডোরফিন 'ফিল-গুড' হরমোন হিসাবে পরিচিত। এই হরমোন মেজাজ চাঙ্গা রাখতে পারে এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি কমাতে পারে।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য মস্তিষ্ককে সর্বোত্তম উপায়ে চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে পারে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম

পর্যাপ্ত সময়ের ঘুম এবং পর্যাপ্ত মানের ঘুম দুই যে কী আবশ্যিক তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।সামগ্রিক সুস্থতার জন্যই ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষণ্নতা থেকে পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চলুন। ঘুমের অভাব হলেই মেজাজ খারাপ হতে বাধ্য। ডিপ্রেশনকে চরমে নিয়ে যায় এই ঘুমহীনতা। প্রতি রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম আপনার দরকার।

৪. সামাজিকীকরণ

বন্ধু বা স্বজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সামাজিক কাজেকর্মে জড়িত হলে একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি দূরে সরে যায়। ডিপ্রেশনের অন্যতম সাধারণ লক্ষণই নিজেকে একা মনে হওয়া, অন্য কেউ আপনার অবস্থা বুঝছে না এই অনুভূতি নিজেকে আরও একা করে। মিশুন, বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা যে কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ভালো থাকবেন। ভালো থাকার কারণ খুঁজে পাবেন।

৫. মদ্যপান কমান

মানুষ ডিপ্রেশন ভুলতে, সাময়িক আনন্দ পেতে মদকে সর্বোত্তম বন্ধু ভেবে নেন। অথচ অ্যালকোহল হতাশাজনক এবং নেতিবাচকভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। মদ্যপান কমান, অথবা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিন। ভালো থাকবেন।

আরও পড়ুন- কষ্ট ভুলতে গিয়ে আরও অবসাদ! ডিপ্রেশনের রোগী করে তুলতে পারে মদই?

৬. চাপ পরিচালনা করুন

দীর্ঘস্থায়ী চাপ হতাশার বিকাশ ঘটায়। স্ট্রেস কমানোর স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজুন। নানান রিল্যাক্সেশন কৌশল আপনাকে সাহায্য করতে পারে। নিজের ভালোবাসার শখকে প্রাধান্য দিন। মাইন্ডফুলনেস অভ্যাস করুন, ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা আনন্দ পান এমন কাজে নিজেকে জড়ান।

৭. ধূমপান এড়িয়ে চলুন

ধূমপান এবং ডিপ্রেশনের ঝুঁকির মধ্যে যোগসূত্র পেয়েছেন গবেষকরা। ধূমপান ছেড়ে দিন, এতে মন ভালো না থাকার সমস্যা কমবে, সামগ্রিক মানসিক সুস্থতার উন্নতিও ঘটতে পারে।

৮. বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন

যদি ক্রমাগত দুঃখ, যন্ত্রণা আপনাকে ঘিরে থাকে। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন সবেতেই। নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা ক্রমেই লাগামছাড়া হতে থাকে তাহলে পেশাদার বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে দেরি করবেন না একদম। ভালো থাকার পথ আছে, বিশ্বাস রাখুন। পথটাকে চিনতে হবে। চেনার জন্যই জীবনধারায় ছোটখাটো বদল আনুন। ভালো থাকা ছাড়া ভালো পথ তো নেই।

 

More Articles