গালওয়ান যুদ্ধের পর পাল্টা মার দিতে কীভাবে রণসাজে সেজেছিল ভারত!

Galwan Clash Indo China Tension: ভারতের ২০ জন সেনার মৃত্যু হলেও, চিনের নাকি তেমন ক্ষতিই হয়নি।

দুর্বল অঞ্চল মানেই শত্রুর নজর সেই দিকেই। দুর্বলকে শুধু সাহস জোগালেই তো হয় না, মাঝেসাঝে অস্ত্রও জোগাতে হয়। যে অস্ত্রের দম্ভে ও ক্ষমতাতেই শত্রুকে 'বার্তা' দেবেন রাষ্ট্রনায়করা। দেশ বুঝবে, “দেশ সুরক্ষিত হ্যায়"। গালওয়ানের সংঘর্ষের পরে এভাবেই সীমান্তকে শক্তিশালী করতে ভারতীয় বিমান বাহিনী কয়েক হাজার সৈন্য এবং প্রচুর পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম, পদাতিক যুদ্ধ যান, ট্যাঙ্ক, বন্দুক, সারফেস-টু-এয়ার গাইডেড অস্ত্র এবং রাডার পাঠিয়েছিল পূর্ব লাদাখে। ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর চিনকে প্রতিহত করতে কোনওভাবেই সূচাগ্র মেদিনী ছাড়তে রাজি নয় ভারত। সেই সংঘর্ষের পর যে কোনও ধরনের সংঘর্ষ ঠেকাতে ভারত তৈরি হয়েছিল রণসাজে!

২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাস থেকেই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিক স্থবিরতা নেমে এসেছে। গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গত ছয় দশকের প্রেক্ষিতে একেবারেই তলানিতে নেমে যায়। ভারতের দাবি ছিল, দেশ পাল্টা আঘাত করেছে চিনকে, আর তাতে মোক্ষম জবাবও দেওয়া গেছে। পিএলএ-এর হতাহতের সংখ্যা নাকি ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেয়ে দ্বিগুণ ছিল। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করে যে সংঘর্ষে মাত্র চারজন চিনা সেনাই নিহত হয়েছেন।

ভারতীয় বায়ুসেনা ৬৮,০০০ সৈন্য, ৩৩০ টি পদাতিক যুদ্ধ যান, ৯০টি ট্যাঙ্ক এবং বেশ কয়েকটি আর্টিলারি বন্দুক পূর্ব লাদাখে পাঠিয়েছিল গালওয়ান হামলার পরেই। গালওয়ান পর্বের পরে সীমান্তে পরিস্থিতি মোটেও সুবিধার নয়। এই মুহূর্তে সামান্য নজর ঘোরালেও তা বিপদ বাড়িয়ে তুলতে পারে কয়েকশো গুণ। তাই সীমান্তে বিশ্বাসযোগ্য বাহিনী বজায় রাখা এবং তাদের যথাযোগ্য প্রতিরোধমূলক সামরিক সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া ছাড়া ভারতের কাছে উপায়ও ছিল না। তাই এই রাশি রাশি অস্ত্র জোগানের কাজটি করে ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড। ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড আইএএফ-এর বৃহত্তম অপারেশনাল কমান্ড। গত তিন বছরে এভাবেই বিমান বাহিনী এয়ারলিফট করে ওই এলাকায় ৯,০০০ টন সামরিক সরঞ্জাম মজুত করেছে।

আরও পড়ুন- আচমকা ভয়াবহ যুদ্ধ সীমান্তে! কোন পথে এগোচ্ছে ভারত-চিন সংঘাত

বায়ুসেনার বক্তব্য, সারফেস-টু-এয়ার গাইডেড অস্ত্র এবং রাডার ওই সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করে এয়ার ডিফেন্স নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলাই ছিল মূল লক্ষ্য। সারফেস-টু-এয়ার গাইডেড অস্ত্র কী? এই অস্ত্র ১০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে পারে। রাডারগুলি স্বাভাবিক যে কোনও রাডারের থেকে দেড় গুণ বেশি শক্তিশালী। সীমান্ত বরাবর চিন কী কৌশল নিচ্ছে, তাতে টানা নজর রাখতে রাডার স্থাপনের জন্য হেলিকপ্টার ব্যাবহৃত হয় ব্যাপকভাবে।

ভারতীয় বায়ুসেনা রাফাল, সুখোই-৩০ এবং মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানও আকাশ পাহারায় মোতায়েন করে। ইলেকট্রনিক নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য রিমোট কন্ট্রোলড বিমান ব্যবস্থাও গত তিন বছরে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিন বছর আগে, ১৪-১৫ জুনের রাতে গালওয়ান উপত্যকা সংঘর্ষ ভারত চিন সম্পর্ককে শেষ করে দেয়। গত ৪৫ বছরে সেই প্রথম ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সৈন্যরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় মুখোমুখি মারাত্মক সংঘর্ষে জড়ায়। ভারতের ২০ জন সেনার মৃত্যু হলেও, চিনের নাকি তেমন ক্ষতিই হয়নি। অথচ বিভিন্ন দেশের কিছু প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভারতীয় সেনার পাল্টা আক্রমণে গালওয়ান নদী পেরোতে গিয়েই নাকি ডুবে যায় ৩৮ জন চিনা সেনা। যদিও, চিন এই দাবি স্বীকার করেনি মোটেও।

গত তিন বছর ধরে, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক আলোচনা সত্ত্বেও সমস্যাগুলি মেটেনি। গালওয়ান উপত্যকা, প্যাংগং সো, গোগরা (PP-17A) এবং হট স্প্রিংস (PP-15) থেকে চার বার সরে আসার পরেও ভারত এবং চিন, দুই পক্ষের সেনাবাহিনীই এখনও ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ সৈন্য রেখেছে সীমান্তে।

More Articles