ঘরের মাটিতে শুরু ১৩তম ক্রিকেট বিশ্বকাপ! ফিরে দেখা ২২ গজের যুদ্ধের ইতিহাস
ICC World Cup 2023: ২২ গজের এই মহাযুদ্ধ কিন্ত আজকের নয়। প্রায় ৪৮ বছর পেরিয়ে ৪৯-এ পা দিল আইসিসি মেনস ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ। সব মিলিয়ে মোট ১২টি টুর্নামেন্ট।
শুরু হয়ে গেল মহারণ। যার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমী। এবছর মহাযুদ্ধের 'কুরুক্ষেত্র' ভারত। ২২ গজের এই মহাযুদ্ধ কিন্ত আজকের নয়। প্রায় ৪৮ বছর পেরিয়ে ৪৯-এ পা দিল আইসিসি মেনস ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ। প্রায় পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে নানা ধরনের স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে এই বাইশ গজ। দুর্ধর্ষ সব খেলোয়ার দেখেছে, দেখেছে দুর্দান্ত সব চৌকা, ছক্কার। আসুন ফিরে দেখা যাক সেই সব স্মরণীয় মুহূর্ত।
শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। প্রথম বারের আইসিসি ক্রিকেট (মেনস) বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপ মানেই চার বছরের অন্তর। লিপ ইয়ারের মতোই চার বছর বাদে বাদে ফিরে ফিরে আসে বিশ্বকাপও। সেই হিসেবে এখনও পর্যন্ত মোট ১২বার এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও তাদের ক্রিকেটাররা। অন্য়ান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতও খেলেছে মোট ১২টি টুর্নামেন্ট।
১৯৭৫
প্রথম বছর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আইসিসি মেনস ওয়ার্ল্ড কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসে মাত্র ১৭ রানের ব্যবধানে ক্যারাবিয়ানদের কাছে হেরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই উদ্বোধনী টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল মোট ৮টি দল। প্রতিচি ৬০ ওভারের ম্যাচ খেলা হল লাল বল দিয়ে। নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচে শতরান করেছিলেন ক্যাপ্টেন ক্লাইভ লয়েড।
১৯৭৯
চার বছর পর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হল বিশ্বের সেরা টিমগুলি। তবে সেবারও নিজেদের শিরোপা ধরে রেখেছিল ক্যারাবিয়ানসরা। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ঘরে ট্রফি তুলতে পেরেছিল তারা। সেই চূড়ান্ত ম্যাচটিও হয়েছিল লর্ডসে। সেই বার অপরাজিত ১৩৮টি করেছিলেন ভিভ রিচার্ডস, আর পাঁচটি উইকেট নিয়ে জয় নিশ্চিত করেছিলেন জোয়েল গার্নার।
১৯৮৩
গত দু'টি টুর্নামেন্টে মাত্র একটি করে ম্যাচ জিতেছিল ভারত। তবে তৃতীয়বারেই জাত চিনিয়েছিল কপিল দেবের দল। পর পর দু'বছরের বিজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে দিয়েছিল ভারত। সেই জয়ের গর্ব আজও অমলিন ভারতীয়দের কাছে।
১৯৮৭
আইসিসি মেনস ওয়ার্ল্ড কাপের চতুর্থ টুর্নামেন্টে বিশ্ব পেল নতুন বিজয়ী। সেই প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিজয়ী দল হিসেবে উঠে এল অস্ট্রেলিয়া। সেই প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের বাইরে। সে বছর থেকেই শুরু হল ৫০ ওভারের ম্যাচ। আর সেবার ভারত ও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২২ গজের মহারণ। আর সেইবারই বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। আর তার পর থেকেই চেনা প্রতাপ নিয়ে মাঠে অবতীর্ণ হতে শুরু করল অস্ট্রেলিয়া।
১৯৯২
ইতিহাসের পঞ্চম বিশ্বকাপ, অবশ্যই ২২ গজের। সেবার খেলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। আর কার্যত বিশ্বকে অবাক পাকিস্তান সে বছর জিতে নিয়েছিল টাইটেল। ইংল্যান্ডকে অবলীলায় হারিয়ে ঘরে ট্রফি তোলে ইমরান খানের দল। ইমরান করেছিলেন ৭২ রান। তবে ওয়াসিম আক্রমের বলের জাদুদে মোহিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব।
১৯৯৬
ষষ্ঠ টুর্নামেন্ট চতুর্থ বিশ্বকাপজয়ী দেশ পেয়েছিল আইসিসি ক্রিকেট মেনস ওয়ার্ল্ড কাপ। বড় দেশকে পিছনে ফেলে সেবার শিরোপা জিতে নিয়েছিল পুঁচকে দেশ শ্রীলঙ্কা। তা-ও আবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। সেই বছর প্রথমবার ১২টি দেশ অংশ নিয়েছিল বিশ্বকাপে। তাদের সকলকে হারিয়ে প্রথম স্থান দখল করেছিল শ্রীলঙ্কা। প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন সেবার সনৎ জয়সূর্য।
১৯৯৯
এতদিন পর্যন্ত দু'বার খেতাব জেতার রেকর্ড ছিল শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই। ১৯৯৯ সালে সেই তালিকায় নাম লেখায় অস্ট্রেলিয়া। পাঁচটি দেশ জুড়ে আয়োজন করা হয়েছিল সেবারের বিশ্বকার। তবে ফাইনাল হয়েছিল লর্ডসে। আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড দুজনেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আর পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার ঘরে ট্রফি তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া।
২০০৩
তবে অচিরেই যে নয়া রেকর্ড গড়বে অস্ট্রেলিয়া, তা মালুম করতে পারেনি কেউই। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ম্যাচে ফের জিতে তিন-তিন বার বিশ্বকাপ ঘরে তোলার খেতাব ছিনিয়ে নেয় অজি-রা। সেই বছর প্রথমবার সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল কেনিয়া। রিকি পন্টিংয়ের অপরাজিত ১৪০ অস্ট্রিলিয়াকে পৌঁছে দিয়েছিল ৩৬০ রানে, যা অচিরেই ফাইনালে হারিয়ে দিয়েছিল ভারতকে।
২০০৭
তিন বার বিশ্বকাপ ঘরে তোলা হয়েই গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। বাকি ছিল হ্যাট্রিকটুকু। ২০০৭ সালে সেই ষোলো কলাটুকুও পূর্ণ করল তারা। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ১৪৯ রানের ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ে রাবণ রাজার দেশ। আর চতুর্থবার বিশ্বকাপ আর বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক দু'টোই নিশ্চিত করেছিল অজি-রা।
২০১১
আইসিসি মেনস বিশ্বকাপে দ্বিতীয় বার ট্রফিটি তুলেছিল ভারত ২০১১ সালে। পাকিস্তানকে ২৯ রানে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করার পর পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে দেয় ভারত। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মাহেলা জয়বর্ধনের অপরাজিত ১০৩-র পরেও শেষরক্ষা হয়নি। গৌতম গম্ভীরের মারকাটারি ৯৭ ও মহেন্দ্র সিং ধোনির অপরাজিত ৯১ ওভার শেষ হওয়ার আগেই জয়ের দিকে নিয়ে যায় ভারতকে।
২০১৫
আবার পালা অস্ট্রেলিয়ার। সেবার পঞ্চম বারের জন্য ট্রফি ছিনিয়ে নেয় অজি-রা। অকল্যান্ডে প্রাথমিক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে একবার হারিয়েওছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া ঝড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ট্রফি যায় অস্ট্রেলিয়ার ঘরে।
২০১৯
২০১৯ সালের বিশ্বকাপটি ছিল নাটকীয়। সেবার ট্রফি ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ফের ফাইনালে এসে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। তবে সেবারের ম্যাচ হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। দু'দলের ৫০ ওভার শেষ হওয়ার পরেও ফলাফলের জন্য ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। আর সেখানেই বিশ্বকাপটি ছিনিয়ে নেয় বাইশ গজের রাজা ইংল্যান্ড।
২০১৯-র পর ফের ২০২৩। দেখতে দেখতে দরজায় এসে হাজির আরও একটা আইসিসি মেনস বিশ্বকাপ। এ বছর বিশ্বকাপের আসর বসেছে ভারতে। ৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট, চলবে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ১৯ নভেম্বর ফাইনাল। বৃহস্পতিবার প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। এই বিশ্বকাপে আগামী ৮ অক্টোবর প্রথমবার মাঠে নামবে ভারত। প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিতে পারবে কি রোহিত শর্মার 'মেন ইন ব্লু'? সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।