একদিনে আবারও এত বড় ক্ষতি, কেন এমন অবস্থা হল আদানির?

Goutam Adani : আদানি গোষ্ঠীর মোট দশটি কোম্পানির সম্মিলিত ইকুইটি বাজার মূল্য $১০০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছে বর্তমানে।

একটা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের পর থেকে রাতারাতি জায়গা হারিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর। কার্যত আকাশ থেকে পড়েছেন গৌতম আদানি। দেশের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তির তালিকা থেকে পিছতে পিছতে অনেকটা নিচে নেমে গিয়েছে তারা। বিগত কয়েকদিন ধরেই বারবার শিরোনামে উঠে এসেছেন গৌতম আদানি। এর আগেও অবশ্য বারবার শিরোনাম দখল করেছেন তিনি, তবে এবারের কারণটা যদিও সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই শেয়ার বাজারে হু হু করে জায়গা হারিয়েছেন গৌতম আদানি, এই পতনের শেষ ঠিক কোথায় তা এখনও আঁচ করা যাচ্ছে না। মাঝে কিছু ইতিবাচক দিক দেখা গেলেও আবারও সেই ক্ষতির দিকেই এগিয়েছে সাম্রাজ্য। আজ আবারও বড় ক্ষতির মুখোমুখি হল আদানি।

এরই মধ্যে আরও একটি তথ্য সামনে এসেছে জার কেন্দ্রে রয়েছে উইকিপিডিয়া। আমরা জানি সারা বিশ্বের যে কোনও বরান্তের মানুষ গুগলে কোনও বিষয়ে তথ্য জানতে নির্ভর করেন এই পেজের ওপর। এবার সেই পেজের তথ্য বিভ্রাট নিয়ে অভিযোগের তীর উঠল সরাসরি আদানি গোষ্ঠীর দিকেই। উইকিপিডিয়া পেজ এমন একটি জায়গা যাতে তথ্য যে কেউ যোগ করতে পারেন।

দ্য সাইনপোস্টের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ৪০-টিরও বেশি নিষিদ্ধ বা ব্লকড অপরিচিত অনিরপেক্ষ আইডি থেকে আদানি পরিবার এবং পারিবারিক ব্যবসা সংক্রান্ত নয়টি লেখা বদল বা সংশোধন করা হয়েছে সম্প্রতি। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নিবন্ধ নতুন করে এডিট করা হয়েছে। কোথাও আবার অ-নিরপেক্ষ লেখা যোগও করা হয়েছে। এমনকী উইকিপিডিয়ায় আদানি গ্রুপ সংক্রান্ত যে পেজটি এতদিন ছিল, সেটিও সম্পূর্ণ নতুন করে লেখা হয়েছে। গবেষকরা ইতিমধ্যেই নিশ্চিতভাবে জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট কোনও সংস্থাকে টাকার বিনিময়ে এই কাজ করতে বলা হয়েছিল। মার্কিন সংস্থা এই বিষয়ে দায়ী করেছে আদানিদের।

আরও পড়ুন - আদানিকে পথে বসাচ্ছে ‘নষ্টের গোড়া’ বামপন্থীরাই! মোদি-ঘনিষ্ঠের পাশে দাঁড়িয়ে যা বলছে আরএসএস

প্রসঙ্গত, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে একসময় শীর্ষস্থানে রাজ করছিলেন যে আদানি গোষ্ঠী সেই আদানি গোষ্ঠী এখন বিশ্বের প্রথম কুড়ি জনের তালিকা থেকেও ছিটকে গিয়েছেন। বারবারই নয়া কোনও কারচুপির কথা সামনে আসছে, এবং নতুন করে ধস নামছে শেয়ারে। যদিও প্রাথমিকভাবে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের তথ্যকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন গৌতম আদানি। ৪১৩ পৃষ্ঠার জবাবে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যাখ্যামূলক উত্তরও দিয়েছিল, এমনকী উক্ত সংস্থাকে উদ্দেশ্য করে ভারতের জাতীয়তাবাদের ওপর আঘাত হানার পাল্টা অভিযোগ এনেছিল আদানিরা। যদিও এতকিছু সত্বেও লাভ হয়নি আখেরে। এই ঘটনার পর থেকেই বাজারে হু হু করে শেয়ার হারাতে থাকেন গৌতম আদানি।

এদিকে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলির স্টকের দরপতন বুধবারও অব্যাহত ছিল, কারণ এর সমস্ত সংস্থার শেয়ারগুলি দেশীয় ইক্যুইটিগুলিকে ট্র্যাক করে পড়েছিল৷ আদানি এন্টারপ্রাইজ নতুন করে ১০.৪৩ শতাংশ বিপর্যস্ত হয়েছে। বিএসই ১,৪০৪.৮৫ টাকায় বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে এসিসি সিমেন্টের, মুম্বাই-ভিত্তিক এক্সচেঞ্জে ৩.৯৭ শতাংশ শেয়ার কমে ১,৭৫৫.২০ টাকায় নেমে এসেছে। অম্বুজা সিমেন্টের ক্ষেত্রে শেয়ার কমেছে ৪.৯২ শতাংশ। যেখানে একদিন রাজ করেছে আদানি, সেখানেই মোট ক্ষমতার ওপর ৫ শতাংশ ধস নামল আবারও। অভ্যন্তরীণ বাজারে আজ তীব্র পতন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আদানি সংস্থাগুলির ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ। বিএসই সেনসেক্স ৯২৮ পয়েন্ট বা ১.৫৩ শতাংশ কমে ৫৯,৭৪৪.৯৮ এ দাঁড়িয়েছে। নিফটি ফিফটির ক্ষেত্রে ২৭২.৪০ পয়েন্ট কমে ১৭,৫৫৪.৩০- তে নেমে গিয়েছে।

আদানি গোষ্ঠীর মোট দশটি কোম্পানির সম্মিলিত ইকুইটি বাজার মূল্য $১০০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছে বর্তমানে। ২৫ জানুয়ারি মার্কিন হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ওই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে আর যেন কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না আদানিরা। এই নিয়ে মোট ১১ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হল গৌতম আদানির।

More Articles