সুধীর থেকে অর্ণব- একবারে বাদ ১৪ জন! কেন গোদি মিডিয়াকে বয়কটের সিদ্ধান্ত জোট ইন্ডিয়া-র?

INDIA Alliance: জোট ইন্ডিয়া-র সমন্বয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিজেপির দিকে ঝুঁকে থাকা ধামাধারী সংবাদমাধ্য়মগুলির কোনও শো-তেই কোনও প্রতিনিধি পাঠানো হবে না। সেইসব চ্যানেলের বিশেষ বিশেষ উপস্থাপকদের নিয়েই আপত্তি জোট ইন্ড...

যে দেশ গৌরী লঙ্কেশের মতো নিরপেক্ষ, নির্ভিক সাংবাদিকের জন্ম দিয়েছে, সেই দেশেই রাজনৈতিক দলতন্ত্রের ধামাধারী সাংবাদিকতার চর্চা যেভাবে দিনে দিনে শাখায় প্রশাখায় বাড়ছে, তা উদ্বেগের তো বটেই। সাম্প্রতিক কালের বেশ কয়েকটি ঘটনায় ফের উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমের সেই দৈন্যদশা। সে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে। আর এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও তাঁর উপস্থাপককে বয়কটের ডাক দিল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। সাফ জানিয়ে দিল, লাল দাগ সেই সব সংবাদমাধ্যম ও উপস্থাপকদের কোনও শো-তেই অংশ নেবেন না জোট ইন্ডিয়ার কোনও প্রতিনিধি।

হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত? দেখা যাচ্ছে, বর্তমান ভারতে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জায়গা ত্রমশ কমছে। এ অভিযোগ আজকের নয়। তবে আজকাল যেভাবে সংবাদমাধ্যমগুলি প্রকাশ্যে দলদাস হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ কোনও দলের পক্ষে খোলামখুচি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, মিথ্যা প্রচার করছে, তা নিন্দনীয় বলেই মনে করছে জোট ইন্ডিয়া। সম্প্রতি একটি বেসরকারি হিন্দি সংবাদমাধ্যমের সংবাদপাঠক সুধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে সুধীরের বিরুদ্ধে কর্ণাটকে দায়ের হয়েছে এফআইআরও। তা-ও আবার জামিন অযোগ্য ধারায়।

আরও পড়ুন: গোদি মিডিয়ার সুধীর ভাই আর তাঁর সাংবাদিকতা

নিজের সঞ্চালিত শো-তে কর্ণাটক সরকারের বাণিজ্যিক যানবাহন ভর্তুকি প্রকল্প নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সুধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তিনি তাঁর একটি শো-তে জানান, কর্ণাটক সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের ‘স্বাবলম্বি সারথি’ প্রকল্পটিতে হিন্দুদের আবেদন জানাতে দেওয়া হয় না। এই স্কিমে রাজ্যের দরিদ্র হিন্দুদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। আর সেই নিয়েই শুরু হয় গোলমাল। ব্যপারটি নিয়ে হইচই শুরু হতেই সুধীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় কর্ণাটক সংখ্যালঘু উন্নয়ন কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা। যার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় সুধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে বেঙ্গালুরুর শেশাদ্রিপুরম থানা । শুধু সুধীরই নয়, সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয় এমন প্রোপাগান্ডা করার অভিযোগে টিভি চ্যানেলটির চিফ এডিটর ও সংগঠকেরও নামেও দায়ের হয়েছে এফআইআর।

INDIA Bloc Parties To Boycott Some TV News Anchors, 'Provocative' Debates

এনডিএ সরকারের সমর্থক সংবাদমাধ্যমগুলিকে ইতিমধ্যেই 'গোদি মিডিয়া' বলে দেগে দিয়েছেন নিন্দুকেরা। আর সেই ধামাধরার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে সুধীর ও তাঁর চ্যানেল 'আজতক'-এর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বারবার তোপ দেগেছে প্রতিপক্ষ চ্যানেলগুলি। তবে তাতে পক্ষপাতদুষ্ট খবর করার প্রবণতা বিন্দুমাত্র কমেনি এই ধরনের সংবাদমাধ্যম ও তার কর্মীদের। বরং বিজেপি সরকার ও তাদের হিন্দুত্ববাদী ভাবধারার ধামা ধরতেই ব্যস্ত তারা।

এদিকে, দেশে ক্রমে জোরালো হচ্ছে মোদিবিরোধী স্বর। ইতিমধ্যেই বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট বেঁধেছে দেশের বিরোধী দলগুলি। দেশের ছোট-বড়, বেশির ভাগ বিরোধী শক্তিই জোট বেঁধেছে একসঙ্গে। গত বুধবার সেই বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার প্রথম কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের বৈঠকে বসেছিল সভা। আর সেই সভাতেই স্থির হয়েছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বয়কটের কথা। বৈঠকের পরে একটি প্রেস বিবৃতিতে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল জানান, সমন্বয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিজেপির দিকে ঝুঁকে থাকা ধামাধারী সংবাদমাধ্য়মগুলির কোনও শো-তে জোট ইন্ডিয়া-র কোনও প্রতিনিধি পাঠানো হবে না। সেইসব চ্যানেলের বিশেষ বিশেষ উপস্থাপকদের নিয়েই আপত্তি জোট ইন্ডিয়ার। ইতিমধ্যে এই মর্মে একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা।

INDIA Bloc Parties To Boycott Some TV News Anchors, 'Provocative' Debates

কোন কোন সংবাদপাঠক বা উপস্থাপক রয়েছেন সেই তালিকায়? রয়েছেন-

  • অদিতি ত্যাগি
  • আমন চোপড়া
  • অমিশ দেবগন
  • আনন্দ নরসিংহ
  • অর্ণব গোস্বামী
  • অশোক শ্রীবাস্তব
  • চিত্রা ত্রিপাঠী
  • গৌরব সাওয়ান্ত
  • নভিকা কুমাক
  • প্রাচী পরাশর
  • রুবিকা লিয়াকত
  • শিব আরুর
  • সুধীর চৌধুরী
  • সুশান্ত সিনহা

এই চোদ্দ জন উপস্থাপকের কোনও শো-তেই উপস্থিত থাকবেন না ইন্ডিয়ার কোনও প্রতিনিধি। এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বুধবার জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠকে।

সামনেই লোকসভা ভোট। প্রশ্ন উঠেছে, তার আগে জোট ইন্ডিয়ার এই সিদ্ধান্ত কি কিছুটা হলেও বিরোধী জোটের প্রচারের মুখে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না? তবে আপাতত সে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে চাইছে না বিরোধী জোট। বরং যে ভাবে হিন্দুত্ববাদী ও বিজেপিমুখী খবর করে দেশের সম্প্রীতি ভঙ্গ করার চেষ্টা করছে কয়েকটি ধামাধারী সংবাদমাধ্যম, তা নিন্দনীয় বলেই মনে করছে জোট ইন্ডিয়া। এর আগেও ২০১৯ সালে কংগ্রেস এমনই পদক্ষেপ করেছিল বেশ কয়েকটি পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। প্রায় এক মাসের জন্য বেশ কয়েকটি টেলিভিশন শো বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় দল। কর্মীদের দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁরা সেই সব চ্য়ানেলের শো-তে অংশ না নেয়।

আরও পড়ুন:এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া, দেশের নামে বিজেপির আসন টলাতে পারবে কি বিরোধী মহাজোট?

ক্রমে দেশ জুড়ে ছড়াচ্ছে বিজেপি বিরোধী হাওয়া। আর সেই জোয়ারে আপাতত দেশের সব চেয়ে বড় আশা জোট ইন্ডিয়াই। সুধীর চৌধুরীকে নিয়ে যেভাবে বিতর্ক উস্কে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে, সেই প্রেক্ষিতে জোট ইন্ডিয়ার এই সিদ্ধান্তকে বাহবা জানিয়েছেন অনেকেই।

 

More Articles