আমেঠি নয়, লোকসভায় লড়ার জন্য কেন রায়বরেলি বাছলেন রাহুল গান্ধি?

Rahul Gandhi Raebareli Seat: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এই আসনে তিনবার এবং সনিয়া গান্ধি টানা পাঁচবার জিতে এই আসনে সাংসদ হয়েছিলেন।

এবার আমেঠি থেকে নয় রায়বরেলি থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। ৩ মে রায়বরেলি আসন থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে রাহুলের নাম ঘোষণা করা হয়। বহুদিন ধরেই চর্চা হচ্ছিল আমেঠি থেকে রাহুল গান্ধি ফের প্রার্থী হবেন কিনা। তাঁর কেরলের ওয়ানাড়ের আসনে ইতিমধ্যেই ভোট হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, রাহুল গান্ধি উত্তরপ্রদেশের প্রার্থী হলেন, তবুও আমেঠি আসন ছাড়লেন কেন?

বলা হয়, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের অন্যতম 'গড়' রায়বরেলি। ২০১৯ সালে, কেরলের ওয়ানাড় এবং আমেঠি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। ওয়ানাড়ে জিতলেও আমেঠি হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত, লোকসভা নির্বাচনে আমেঠি থেকে জিতেই সাংসদ হয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। ২০১৯ সালে, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। এবারে লোকসভা নির্বাচনে ওয়ানাড় থেকে প্রার্থী হলেও আমেঠিকে বাদ রেখেছেন তিনি। আগামী ২০ মে দু'টি আসনেই ভোট। এবারে আমেঠি থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন কিশোরীলাল শর্মা। এই আসনে রাহুল গান্ধি যেমন জনপ্রিয় কিশোরীলাল শর্মাও ঠিক ততটাই জনপ্রিয়। রায়বরেলি থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী দীনেশপ্রতাপ সিং। ২০১৯ সালে, এই কেন্দ্রেই দীনেশপ্রতাপ সিংকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন সনিয়া গান্ধি। ২০১৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। কথামতো, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কোনও আসনেই প্রার্থী হননি সনিয়া গান্ধি। জওহরলাল নেহরুর শাসনকাল থেকেই কংগ্রেসের গড় রায়বরেলি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এই আসনে তিনবার এবং সনিয়া গান্ধি টানা পাঁচবার জিতে এই আসনে সাংসদ হয়েছিলেন। ১৯৬২ এবং ১৯৯৯ সাল বাদে প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনেই নেহরু-গান্ধি পরিবারের সদস্যরা প্রার্থী হয়েছেন। ১৯৫২ সালের পর থেকে পদ্মশিবির শুধুমাত্র ২ বার জিতেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়নি।

আরও পড়ুন- ১৮০-র বেশি আসন পেরোতে পারবে না বিজেপি! কেন এমন বলছেন রাহুল গান্ধি?

বিজেপি কংগ্রেসকে তোপ দাগছে, কংগ্রেস ভয় পেয়ে রায়বরেলিতে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী দিয়েছে। পাল্টা কংগ্রেসও দাবি করেছে, বিজেপিও প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণার আগের দিন।

রাহুল গান্ধি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন, রায়বরেলি তাঁর 'পরিবারের কর্মভূমি'। ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নিজের মতো। লিখেছেন "রায়বরেলি থেকে প্রার্থী হওয়া আমার কাছে আবেগময় মুহূর্ত। আমার মা ভরসা করে পরিবারের কাজের দায়িত্ব এবং সেবা করার সুযোগ আমাকে দিয়েছেন।" রাহুল আরও বলছেন, "আমেঠি এবং রায়বরেলি কোনওটাই আমার কাছে আলাদা নয়। দু'টিই আমার কাছে পরিবারের মতো এবং আমি এতে খুশি যে কিশোরীলালজি (কিশোরীলাল শর্মা), যিনি গত ৪০ বছর ধরে ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে সেবা করে গেছেন, এখন তিনিই ওখান থেকে দলের নেতৃত্ব দেবেন।" জয়রাম রমেশ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, এই আসন থেকে লড়াই করা শুধুমাত্র দায়িত্ব নয়, কর্তব্যও। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "কংগ্রেসের গড় শুধু রায়বরেলি নয়, উত্তর থেকে দক্ষিণ পুরো দেশই কংগ্রেসের গড়। রাহুল গান্ধি তো ৩ বার উত্তরপ্রদেশ থেকে এবং ১ বার কেরল থেকে সাংসদ হয়েছেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন দক্ষিণভারতে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার সাহস দেখাতে পারলেন না?"

আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধির সঙ্গে দু’ দশ মিনিট

' The Wire'-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাহুল গান্ধি উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রার্থী হয়েছেন মানে বুঝতে হবে, তিনি রাজনীতির ময়দানে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, রাহুল গান্ধির যদি আমেঠি থেকে প্রার্থী না হওয়ার কারণ ভয় পাওয়া হয়, তাহলে রায়বরেলি কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও কিন্তু চ্যালেঞ্জেরই। রবীশ কুমার তাঁর ইউটিউব ভিডিওতে প্রশ্ন তুলেছেন, রাহুল গান্ধি আমেঠি থেকে প্রার্থী হননি বলে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি প্রচারের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, কিন্তু কাশ্মীরে যে বিজেপি ৩ টি আসনে লড়ছেই না, সেই নিয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি চুপ কেন? তিনি এই সিদ্ধান্তকে 'মাস্টারস্ট্রোক' বলেও ব্যাখা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি এতদিন রাহুল গান্ধির পেছনে পড়ে থাকলেও আসলে ধরতেই পারেনি কী হতে চলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এতদিন আমেঠিতে রাহুল গান্ধির প্রচারের ফলে অন্তত ওই অঞ্চলের সমস্যাগুলি কোনও না কোনওভাবে সংবাদমাধ্যমগুলিতে ধরা পড়েছে, যা এতকাল দেখানই হয়নি। তাঁদের যুক্তি, রাজনীতি, 'ভয়' বা 'চ্যালেঞ্জ' হিসেবে দেখার বিষয় নয়। কংগ্রেস রায়বরেলি কেন্দ্রে হেরে গেলেও যদি আমেঠিতে জিতে যায়, তা হেরে যাওয়া থেকেও বড় সাফল্য হবে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, গান্ধি পরিবারের কেউই নিরাপদ আসন ছাড়া প্রার্থী হন না। বেছে বেছে তাহলে কি নিরাপদ আসনই বাছলেন রাহুল? রবীশ কুমারের সরাসরি দাবি, এটি 'ভয়'-এর নয়, রাজনীতির বিষয়। ৪ জুন, বোঝা যাবে রাহুল গান্ধির রায়বরেলি কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল কিনা?

More Articles