হাসিনার পাশে নেই ভারত? বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমেই স্পষ্ট অবস্থান
Bangladesh India Relation: বিদেশ সচিব বিক্রম বলছেন, ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে কোনও পৃথক মঞ্চ দেয়নি
বাংলাদেশ ইস্যুতে ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার দিকেই এগোচ্ছে ভারত। কিছুদিন আগেই ভারতের বিদেশ সচিব মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, আলোচনা করেছেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বলেছিলেন, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে 'সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা' করতে চায়। এবার বিক্রম মিসরি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে যে সকল সমালোচনা করেন তা ভারত সমর্থন করে না।
১১ ডিসেম্বর কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের সংসদের বিদেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সঙ্গে এক আলোচনাপর্বে বিক্রম মিসরি জানান, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা সরকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এই সম্পর্কের ভিত্তি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেই নিহিত। বিক্রম বলছেন, ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে কোনও পৃথক মঞ্চ দেয়নি, বরং হাসিনা নিজেই তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এইসব মন্তব্য করে চলেছেন।
আরও পড়ুন- জয় বাংলা বাতিল বাংলাদেশে? রইল আসল সত্য
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিক্রম মিসরি বলেছিলেন, "সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে দ্বিতীয় কোনও চিন্তা নেই। আমরা এটাকে দুই দেশের পক্ষেই লাভজনক হিসেবে দেখছি। আমরা যেখানে বিষয়টি থামিয়েছিলাম, সেখান থেকেই আবার চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই।” ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘুদের সমস্যা, ভুয়ো তথ্য প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়। মিসরি জানিয়েছেন, "আমাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে যেতে হবে। এটিই একটি প্রধান সম্পর্ক।"
মিসরি জানিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাগুলি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এক ধরনের অস্বীকৃতি রয়েছে, যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, এই হামলাগুলো আসলে আওয়ামী লীগের উপর হামলা। তবে মিসরি বলছেন, এমন যুক্তি এই ধরনের আক্রমণকে ‘ন্যায্য’ বলে প্রমাণ করতে পারে না।
আরও পড়ুন- ভারত বাংলাদেশের সুসম্পর্ক ফেরাতেই হবে! পদক্ষেপ শুরু হলো দুই তরফেই
বিক্রম মিসরি বাংলাদেশে মন্দির ও ইন্দিরা গান্ধি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর হামলার ঘটনাগুলির সত্যতা মেনে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনায় যে ৮৮ জনকে গ্রেফতার করেছে, তা যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই উল্লেখ করেছেন বিক্রম। তবে ইসকনের প্রাক্তন নেতার গ্রেফতারের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। বিক্রম মিসরি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কিছু সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সন্ত্রাসবাদী’ই ভারত-বিরোধী বক্তব্য প্রচার করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভিযোগ, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভুল তথ্য প্রচার করে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
বিদেশ সচিব বলছেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্য ও সংযোগের কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ, বাস যোগাযোগ এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ তৈরি হয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা ‘স্থগিত’ রয়েছে। বিক্রম বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারত ১৬ লক্ষ ভিসা জারি করেছে।
ভারতের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসও বলছিলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখনও 'খুবই দৃঢ়' এবং 'ঘনিষ্ঠ'। সাম্প্রতিক হিংসা ও অস্থিরতার আবহে সেই সম্পর্কের উপর মেঘ জমেছে, একথা অস্বীকার করার নয়। তবে দীর্ঘদিনের বন্ধু, তথা নিকটতম প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে যে কোনও পদক্ষেপ করলেই তা দুই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষদের উপরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক অজানা ছিল না। তবে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে ভারত সরকার যে হাসিনার সঙ্গে নেই তাই যেন প্রমাণ করতে মরিয়া কেন্দ্র।