এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন ভারতীয় নভোশ্চর! নয়া মাইলফলক ছুঁতে পারবে ISRO?
ISRO-NASA Mission: আপাতত যেদিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ, তা অবশ্যই নাসা ও ইসরোর যৌথ অভিযান Axiom Space AX-4। যেখানে প্রথমবার আন্তর্জাতিক স্পেস সেন্টারে নভোশ্চর পাঠাতে চলেছে ভারত।
নাসার একটি মিশনে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ফেরা হয়নি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস ও তার সহ-মহাকাশচারীদের। এর মধ্যেই আবার কোমর বেঁধেছে ইসরো ও নাসা। তাদের এক যৌথ মিশনে এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যেতে চলেছে ভারতীয় নভোশ্চরদের একটি দল। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর এপ্রিলের মধ্য়েই রওনা হতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশচারীদের ওই দলটি। তেমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং। কার্যত ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি বড় মাইলফলক হতে চলেছে এই মিশন, মনে করা হচ্ছে তেমনটাই।
২০২৩ সালে মহাকাশ গবেষণায় একের পর এক সাফল্য অর্জন করেছে ভারত। ইতিমধ্যেই সফল ভাবে চাঁদজয় করেছে ইসরো। তার পর সফল হয়েছে ইসরোর সৌরযান আদিত্য এলওয়ানের উৎক্ষেপণও। এমনকী সমস্ত বাধা কাটিয়ে সূর্যের কক্ষপথের উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেও গিয়েছে সেটি। চন্দ্রযান ৩ এবং আদিত্য এলওয়ান বিভিন্ন সময় সফল ভাবে ইসরোর কাছে পৌঁছে দিচ্ছি বিভিন্ন জরুরি সংবাদ। যা সাহায্য করছে তাদের মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায়।
আরও পড়ুন: মহাশূন্যে বিলীনও হয়ে যেতে পারেন সুনীতারা! কেন জানেন?
এরই মধ্যে নতুন মাইলফলকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নাসা। যে অভিযানে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)-কে সাহায্য করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ইতিমধ্যেই সেই অভিযানের জন্য নভোশ্চর দল গড়ার কাজও শেষ। এই অভিযানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার দুই ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা ও প্রশান্ত বালাকৃষ্ণান নায়ারকে। ইসরোর তরফে এই মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছে Axiom Space AX-4।
এই মিশনের জন্য ইতিমধ্যেই আমেরিকায় প্রস্তুত নিতে পাঠানো হয়েছে বায়ুসেনার ওই দুই ক্যাপ্টেনকে। মিশনের প্রাথমিক প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে শুভাংশু শুক্লাকে। ব্যাকআপ প্রার্থী হিসেবে থাকছেন প্রশান্ত বালাকৃষ্ণান নায়ার। সব ঠিক থাকলে শুভাংশু আগামী বছর এপ্রিল মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছতে চলেছে। এর আগে কোনও ভারতের কোনও নভোশ্চর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাননি। সে হিসেবে রেকর্ড গড়তে চলেছেন শুভাংশু।
২০২৩ সালের ২৩ অগস্ট তারিখে চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে পা রেখেছিল ইসরোর চন্দ্রযান ৩। যার সঙ্গে সঙ্গেই সফল ভাবে পা রেখেছিল ভারত। সেই দিনটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে স্মরণীয় একটি দিন তো বটেই। যেটিকে জাতীয় মহাকাশ দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। শুক্রবার সেই ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ষপূর্তি। সেই হিসেবে আগামীকাল, শুক্রবার প্রথম জাতীয় মহাকাশ দিবস উদযাপন করতে চলেছে দেশ। তার আগে নয়াদিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ইসরো ও নাসার যৌথ এই মিশনের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী। এর সঙ্গে সঙ্গেই মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে আরও এক মাইলফলক ছুঁয়ে দেখতে চলেছে ভারত, তেমনটাই মনে করছেন তিনি।
তবে শুধু মন্ত্রী নন, নয়া মিশন সম্পর্কে জানিয়েছে ইসরোও। এর পাশাপাশি NISAR নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণেরও কথা রয়েছে নাসার আগামী বছর। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই উৎক্ষেপণ করা হবে সেটিকে। ওই উপগ্রহের বারো মিটার রিফ্লেক্টরটি আপাতত আমেরিকায় রয়েছে কিছু প্রযুক্তিগত আপডেটেশনের জন্য। এই বছরের অক্টোবরের মধ্যেই সেটির ভারতে এসে যাওয়ার কথা। ২০২৭ সালে চন্দ্রযান ৪ মিশনের জন্যও ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। চাঁদের শিলা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করে আনাই যে মিশনের মূল উদ্দেশ্য হতে চলেছে। জাপানের JAXA-র সঙ্গে মিলে চন্দ্রযান ৫ অভিযানেরও পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। যা NASA এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার রোভার এবং যন্ত্রের সাহায্যে চাঁদের মেরু অঞ্চলে খোঁজাখুঁজির কাজ করবে।
আরও পড়ুন:পৃথিবীর দিকে আসছে বিশাল গ্রহাণু! ধ্বংস হতে পারে মানবজাতি? যা জানাচ্ছে ISRO
তবে আপাতত যেদিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ, তা অবশ্যই নাসা ও ইসরোর যৌথ অভিযান Axiom Space AX-4। যেখানে প্রথমবার আন্তর্জাতিক স্পেস সেন্টারে নভোশ্চর পাঠাতে চলেছে ভারত। তবে এই মিশন ঘিরে যেমন উত্তেজনা রয়েছে, তেমনই রয়েছে উদ্বেগও। গত ৫ জুন নাসার একটি পরীক্ষামূলক মিশনে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে গিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোশ্চর সুনীতা উইলিয়াম, তার সঙ্গী বুচ উইলমোর-সহ ৯ মহাকাশচারী। যে মহাকাশ যানটিতে করে তাঁরা স্পেস সেন্টারে গিয়েছিলেন, তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরায় স্পেস স্টেশনেই আটকা পড়েন তারা। তার পর দু'মাস কেটে গেলেও তাঁদের এখনও ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়নি। বরং ক্রমশ জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। নাসার তরফে জানানো হয়েছে, স্টারলাইনের ওই ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশযানে তাঁদের ফেরানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁদের ফেরানোর জন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। সেই ঝুঁকির আশঙ্কা নিয়েই এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যেতে চলেছে ভারতীয় নভোশ্চর। কোনও ভাবে তাঁদের জন্যও নতুন কোনও বিপদ অপেক্ষা করে নেই তো স্পেস স্টেশনে? সুনীতাদের মতো পরিস্থিতিতে পড়বেন না তো তাঁরাও। ইসরোর নয়া মিশন ঘোষণার খবর প্রকাশ্যে আসতে ছড়িয়েছে সেই উদ্বেগও।