'রেল মস্ত ভুল করছে'! কেন বলছেন খোদ বন্দে ভারতের নির্মাতা?

Indian Railway: সরকারের রেল সব মানুষের, কেবল উচ্চবিত্তদের নয়। তাই সরকারকে সাধারণ মানুষের জন্যও ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্দে ভারত হয়েছ, কিন্তু তা হয়েছে ভারতের জনতার নিরাপত্তার বিনিময়ে! ভারতীয় রেলের সমস্ত ঝাঁ চকচকে আতিশয্য বহিরঙ্গে হলেও ভিতরে কী পরিমাণ ফাঁপা বন্দোবস্ত তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে একের পর রেল দুর্ঘটনা। প্রাক্তন রেল অফিসার সুধাংশু মণি ছিলেন বন্দে ভারত-এর নেপথ্যের মূল মস্তিষ্ক। সেই তিনিই বলছেন, কেন্দ্র সরকার সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের দিকে নজর না দিয়ে মস্ত ভুল করছে। সুধাংশু বলছেন, গত কয়েক বছরে, সরকারের সব লক্ষ্যমাত্রা স্থির হচ্ছে বন্দে ভারতকে ঘিরে। যারা আমজনতা, যারা রোজ লোকাল ট্রেন, সাধারণ আসনে, অসংরক্ষিত আসনে যাতায়াত করেন, যাদের এসিতে ভ্রমণের সামর্থ্য নেই, তাঁদের দিকে নজর দিচ্ছে না রেল।

সুধাংশু মণি ভারতীয় রেলওয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে জেনারেল ম্যানেজার পদে কাজ করেছেন ২০১৬ সালের অগাস্ট থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সুধাংশু বলছেন, বন্দে ভারত উচ্চবিত্ত যাত্রীদের জন্য ভালো ট্রেন। এই যাত্রীরা আরামের জন্য একটু বেশি টাকা দিতে ইচ্ছুক৷ কিন্তু ভারতীয় রেল হচ্ছে দেশের সুলভতম পরিবহণ ব্যবস্থা। দেশের কোটি কোটি মানুষ সাধারণ জনতা যারা লোকাল ট্রেন বা সাধারণ আসনের যাত্রী। সাধারণ মানুষের কাছে আরামের চেয়েও জরুরি ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা আর সময়ানুবর্তিতা। সুধাংশু বলছেন, সরকারের রেল সব মানুষের, কেবল উচ্চবিত্তদের নয়। তাই সরকারকে সাধারণ মানুষের জন্যও ব্যবস্থা করতে হবে। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেধেন তিনি৷

আরও পড়ুন- রিল তৈরিতেই ব্যস্ত! রেলের কবচের ব্যবস্থা কেন করতে পারলেন না রেলমন্ত্রী অশ্বিনী?

গত কয়েক বছরে দেখা গেছে এসি কোচে অসংরক্ষিত যাত্রীরা ঢুকে পড়ছেন। সারা দেশজুড়েই ঘটছে এমন ঘটনা। রেলের কথা ছিল দেশজুড়েই রেল পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাবে, স্টেশনগুলিকে উন্নত করবে, অসংরক্ষিত কোচের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত কাজ করবে। অথচ সেসব কিছুই না হয়ে ভারতীয় রেল যেন কেবলই উচ্চবিত্তদের যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে উঠছে।

সুধাংশু মণির কথানুযায়ী, শ্রমিক বা ছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই টিকিট ছাড়াই সংরক্ষিত বগিতে উঠে পড়েন। আগেও এই অবস্থা ছিল, পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। "আগে কিছু রাজ্যে, বিশেষ করে বিহার, ওড়িশা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার সময়, শ্রমজীবী মানুষ পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিয়ে যাওয়ার সময় টিকিট ছাড়াই সংরক্ষিত বগিতে চড়ত। আমি অনেক ভিডিও দেখেছি এবং আমি বিশ্বাস করি যে পরিস্থিতি আগের তুলনায় সত্যিই খারাপ হয়েছে," বলছেন সুধাংশু।

আরও পড়ুন- দিনের পর দিন বিনিদ্র ডিউটি! চালক নাকি রেলকর্তৃপক্ষ, দুর্ঘটনার আসল দায় কার?

প্রাক্তন প্রকৌশলী সুধাংশু আরও বলছেন, এখন এসি কোচ তৈরিতে আরও জোর দেওয়া হয়েছে, যার ফলে নন-এসি কোচের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। পীযূষ গোয়ালের আমলে ঘোষণা করা হয়েছিল যে ধীরে ধীরে সমস্ত ট্রেনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে। তিনি বলছেন, কম ভাড়ায় প্রত্যেককে এসির সুবিধা দেওয়ার বিষয়টা ভালো হলেও তা বাস্তবে হয়নি। সরকার নীতি পরিবর্তন করেছে, কম এসি কোচ এবং বেশি নন-এসি তৈরি করেছে। পরে রেল অনেক ট্রেনেই এসি কোচ বাড়িয়েছে, যার ফলে সংরক্ষিত স্লিপার কোচের সংখ্যা কমেছে এবং সম্ভবত অসংরক্ষিত আসনও কমেছে। তাহলে এই যাত্রীরা যাবেন কোথায়? তাদের যাতায়াত করতে হবে বলেই তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসে ঢুকে পড়েছেন।

রেল বন্দে ভারত নিয়ে মাতামাতির পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের চাহিদার কথা ভাবলে কাজের কাজ হতো বলে মনে করছেন তিনি। এমনকী এই ঘটনা নির্বাচনী হাওয়াকেও খানিক উলটোপথে ঘুরিয়েছে বলে দাবি তাঁর। বিরোধীরা বারবার মানুষকে বুঝিয়েছে যে, শুধুমাত্র অভিজাত যাত্রীদের প্রতিই রেল মনোযোগ দেয়, সাধারণ মানুষের কোনও গুরুত্ব নেই এখানে আর। এখন রেল আবার ভুল সংশোধনের জন্য এসি কোচ তৈরি কমিয়ে নন-এসি বাড়াচ্ছে। "আমার মতে, এটাও ভুল। আরও এসি কোচ তৈরি করা উচিত, তবে সাধারণ মানুষের জন্যঈ আসন বৃদ্ধি করা উচিত," মনে করছেন সুধাংশু।

More Articles