“মতাদর্শের মৃত্যু নেই”, নিজেই বলেছিলেন নেতাজি, সময়ের স্রোতে ঘা খেয়েও প্রাসঙ্গিক যেসব উক্তি
Netaji Subhash Chandra Bose : “স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পূণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ...” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উৎসর্গ করেছিলেন নেতাজির উদ্দেশ্যে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, নাম নয়, একটা ইতিহাস। সময়ের দলিল। তিনি আছেন, তিনি নেই, এক চিরকেলে দ্বন্দ্ব অনবরত তাড়া করে বেরিয়েছে ভারতবাসীকে। কারণ অবশ্য একটাই এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের জন্ম তারিখ জানা থাকলেও, মৃত্যুর তারিখের কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই তাঁকে জীবিত হিসেবে চিহ্নিত করার লোভ জাগে, অবশ্য এর পিছনে যে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি ছিল না তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। সময় নামক একটা বিষম স্রোতে ধাক্কা খেতে খেতে ‘নেতাজি’ ভেসে এসেছেন আজকের দিনে। যেখানে আর সত্যিই কোথাও নেতাজি নেই, থাকতে পারেন না। এই সাম্প্রদায়িক সময়ে দাঁড়িয়ে নেতাজির বেঁচে থাকা আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু নেতাজি জয়ন্তী আসে, প্রতিবছর আসে। সরকারি ছুটি পায় বর্তমান প্রজন্ম। দুপুরে জমিয়ে মাংস-ভাত খায়, কাছেপিঠে ঘুরতেও যায় অনেকেই। আর সমাজের অন্যপাশে অনাহারে মরে লাখো শিশু। মার খায় আরও অনেকে। ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি হয়, প্রকাশ্যেই। আর এইসবের মধ্যে নেতাজিও মরেন।
কিন্তু ‘নেতাজি’ নামটা ফিকে হয় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে ‘ দেশনায়ক ‘ আখ্যা দিয়ে তাসের দেশ নৃত্যনাট্যটি তাঁকে উৎসর্গ করেন। উৎসর্গপত্রে লেখেন, “স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পূণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ, সেই কথা স্মরণ ক’রে তোমার নামে ‘তাসের দেশ’ নাটিকা উৎসর্গ করলুম।”
আরও পড়ুন - অপুষ্টিতে ভুগে মরছে লাখো লাখো শিশু, এই ভারত চেয়েছিলেন নেতাজি?
নতুন প্রাণের বার্তা সত্যিই দিয়েছিলেন নেতাজি, ইতিহাস হলেও এ ঘোর সত্যি। নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রকৃতই, তাঁর মুখ নিঃসৃত পংক্তিগুলোই হয়ে উঠেছে আগামীর রসদ। আজ যে অবক্ষয়ের সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি নেতাজি নেই, কোথাও নেই। সেই সময়ে দাঁড়িয়েই ফিরে দেখা যাক সেইসব উক্তিগুলো -
১. "তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো", স্বাধীনতা পাওয়ার নেশায় বুঁদ থাকা ভারতবাসীর কাছে এই উক্তিতেই জ্বলে উঠলেন নেতাজি। প্রতিটা রক্ত বিন্দুই যে সেধিনতার স্বাদ হয়ে ফিরবে এমন বিশ্বাস তো তিনিই জাগালেন।
২. “ভারত ডাকছে। রক্ত ডাক দিয়েছে রক্তকে। উঠে দাঁড়াও আমাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই। অস্ত্র তোলো! আমরা শত্রুর র্যাঙ্ক ভেদ করে আমাদের পথ খোদাই করব, নতুবা ঈশ্বর চাইলে আমরা শহিদের মতো মৃত্যু বরণ করব। দিল্লি চলো”
৩. "বাস্তব বোঝা কঠিন। তবে জীবনকে সত্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সত্যকে গ্রহণ করতে হবে।"
৪. "স্বাধীনতা দেওয়া হয়না, ছিনিয়ে নিতে হয়।"
৫. "শুধু আলোচনার মাধ্যমে ইতিহাসের কোন আসল পরিবর্তন সাধিত হয়নি।” অর্থাৎ এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ সংগ্রাম।
৬. "মনে রাখতে হবে যে সবচেয়ে বড় অপরাধ হল অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ।"
৭. “আমাদের স্বাধীনতার মূল্য নিজের রক্ত দিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। যে স্বাধীনতা আমরা আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করব, তা আমরা নিজেদের শক্তিতে রক্ষা করতে পারব।”
৮. “কোনও একটা চিন্তনের জন্য একজন মৃত্যুবরণ করতে পারেন। কিন্তু সেই চিন্তনের মৃত্যু হয় না। সেই চিন্তন একজনের মৃত্যুর পর হাজার জনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।” এবং সেই চিন্তার হাত ধরেই মানুষ বেঁচে থাকেন আজীবন, এর যথার্থ উদাহরণ অবশ্য নেতাজি নিজে ছাড়া আর কিই বা হতে পারে!
আরও পড়ুন - গুমনামি বাবাই তবে নেতাজি? গবেষকের আবেদনে কেন্দ্রের জবাবে তোলপাড়
৯. “জীবন সংগ্রামে ঝুঁকি না থাকলে, জীবন বাঁচাটাই ফিকে হয়ে যায়।"
১০. “মানুষ যতদিন বেপরোয়া, ততদিন সে প্রাণবন্ত।”
১১. "জগতের সব কিছু ক্ষণভঙ্গুর। শুধু একটা জিনিস ভাঙে না, সে বস্তু, ভাব বা আদর্শ।"
১২. "আমাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যা হল, দারিদ্র, অশিক্ষা, রোগ, বৈজ্ঞানিক উত্পাদন। যে সমস্যাগুলির সমাধান হবে, কেবলমাত্র সামাজিকভাবনা চিন্তার দ্বারা।"
আজকের দিনেও কি ভীষণ প্রাসঙ্গিক সবকটি উক্তি, নেতাজিকে বাঁচিয়ে রাখার সহজ উপায় তো এই ধারণাগুলো বাঁচিয়ে রাখাই।