রাস্তায় যুগলের 'রোম্যান্টিক নাচ', সেই 'অপরাধে' ১০ বছরের জেল! ইরান কি কখনও শোধরাবে না?

Iran Couple Sentenced Jail for Dancing : কাঠগড়ায় তোলা হল তাঁদের। শাস্তি? ১০ বছরের জেল! কারণ? তাঁরা রাস্তায় নেচেছিলেন…

ঝলমলে রাস্তায় হাঁটছেন দুই তরুণ তরুণী। একে অপরকে ভালোবাসেন তাঁরা। বিয়েও হতে চলেছে তাঁদের। রোম্যান্টিকতা ভরপুর ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে। রাস্তার মধ্যেই ওই যুগল একসঙ্গে নেচে উঠলেন। একে ওপরের কোমর জড়িয়ে রোম্যান্টিক আবহে মেতে উঠলেন। একটা সময় চুম্বনও করলেন দুজনে। হাজার হোক, ভবিষ্যৎ যে একসঙ্গেই কাটাতে হবে। আর এটাই তাঁদের ‘অপরাধ’। নেট দুনিয়ায় সেই ভিডিও দেওয়ার পরই গ্রেফতার করা হল ওই যুগলকে। সম্প্রতি কাঠগড়ায় তোলা হল তাঁদের। শাস্তি? ১০ বছরের জেল! কারণ? তাঁরা রাস্তায় নেচেছিলেন…

এই ঘটনার জেরে আপাতত স্তম্ভিত গোটা সোশাল মিডিয়া। সঙ্গীর সঙ্গে সামান্য নাচার জন্য এত বড় শাস্তি। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় এমন ঘটনা ঘটার পর ‘শাস্তি’ দিয়েছে সেই দেশের প্রশাসন। ঘটনাটি ঠিক কী?
আমির মহম্মদ আহমেদি এবং আসতিয়াজ হাগহিঘির প্রেমের সম্পর্ক ছিল অনেকদিনের। দুজনেই তেহরানের বাসিন্দা; নেট মাধ্যমেও অত্যন্ত সক্রিয়। প্রেমিকার সঙ্গে রিল, ভিডিও, ছবি হামেশাই তোলেন আমির। আসতিয়াজও সেই কাজে যোগ দেন। দুজনেরই বয়স ২২-এর কোঠায়। ২০২২-এর নভেম্বরে তেহরানের রাস্তায় চলতে চলতে এমনিই দুজনে নেচে ওঠেন। রাস্তার মধ্যেই দুজনে একসঙ্গে নাচেন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। গোটা মুহূর্তটি ভিডিওবন্দি করে রাখেন তাঁরা। পরে সেটি সোশ্যাল মিডিয়াতেও আপলোড করেন।

আরও পড়ুন : মাথা নত স্বৈরতন্ত্রের, কট্টর ইরানে নিষিদ্ধ হল নীতিপুলিশ! আর হিজাব?

এরপরই বাঁধে গণ্ডগোল। নভেম্বর মাসেই তাঁদের গ্রেফতার করে ইরানের পুলিশ। কেন? কারণ খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসবে ইরানের গোঁড়া, পুরুষতান্ত্রিক শাসন কাঠামো। ভিডিওয়ে দেখা গিয়েছে, আসতিয়াজের মাথায় কোনও কাপড় নেই। এদিকে ইরানের আইন অনুযায়ী, মেয়েদের একেবারে কড়া পোশাকবিধি মেনে চলতে হবে। অভিযোগ, আসতিয়াজ সেই ‘নিয়ম’ মানেননি। সেইসঙ্গে জনসমক্ষে মেয়েদের নাচানাচি করাও নিষিদ্ধ ওই দেশে। এত নিয়মের ফাঁসেই জড়িয়ে পড়েন আসতিয়াজ। তাঁর প্রেমিক আমির আহমেদিকেও গ্রেফতার করা হয়।

সম্প্রতি তাঁদের নিয়ে রায় দিয়েছে ইরানের আদালত। যে রায় শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন সবাই। আদালতের বক্তব্য, আসতিয়াজ ও তাঁর প্রেমিক – দুজনেই দোষী। তাই দুজনকেই ১০ বছর ৬ মাস জেলের ঘানি টানতে হবে। এক ধাক্কায় স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে যায় দুজনের। তাঁদের অপরাধ কী ছিল? স্রেফ ভালোবাসা, আর একসঙ্গে নাচ করা? আদালতের বক্তব্য, দুজনেই ‘অনৈতিক কাজকর্ম’ করেছেন। তাঁদের ভিডিও ও রাস্তায় নাচা আসলে ‘যৌনতাকে উস্কানি দেওয়া’ – এমন মন্তব্যও করেছেন খোদ বিচারক। দেশের নিরাপত্তাকে নাকি বিঘ্নিত করেছেন তাঁরা!

এরপরই ফের একবার ইরানের গোঁড়া, নারী স্বাধীনতা বিরোধী নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ওঠে গোটা বিশ্ব। এই সূত্রেই মনে পড়বে মাত্র কয়েক মাস আগের ঘটনা। মনে পড়বে মাহসা আমিনির কথা। ইরানের এই যুবতীর বয়সও ছিল ২২ বছর। মাথায় কেন কোনও কাপড় নেই, কেন হিজাব নেই, এই অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে ইরানের পুলিশ। শেষমেশ পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীনই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যু, না হত্যা?

আরও পড়ুন : হিজাব নয়! কর্নাটক থেকে ইরান, আন্দোলনের মূল মন্ত্র নারীস্বাধীনতা

এই প্রশ্ন তুলেই আন্দোলন শুরু হয়। ২০২২ বিশ্বকাপের মঞ্চেও সেই প্রতিবাদের ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল। ইরানের ফুটবলাররা মুখে আঙুল দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন মাহসা আমিনিদের লড়াইকে। জাতীয় সঙ্গীত গাননি তাঁরা। প্রতিবাদের গর্জন এখনও থামেনি। নারী স্বাধীনতার প্রশ্নে সরব হয়েছেন ইরানের মেয়েরা। তার মধ্যেই ফের ঘটল আসতিয়াজের এই ঘটনা। মাহসা আমিনির মতোই তাঁদের দুজনের বিচার হল; অদ্ভুত কিছু ‘দোষ’ দেখিয়ে শাস্তি দেওয়া হল। তাহলে কি প্রতিবাদ আর গর্জনই সার? ইরান, বা ইরানের মতো দেশগুলো কি নারী স্বাধীনতাকে কখনই গুরুত্ব দেবে না? মানবাধিকার কি একেবারে তলানিতে থাকবে?

More Articles