অভাবনীয় প্যাকেজ ভারতীয় রেলের! জলের দরে নেপাল সফর পুজোয়

নেপাল পৌঁছনোর পরের দিনেই আপনাকে দেখানো হবে পশুপতি মন্দির, পাটান, দুর্বার স্কোয়ার, তিব্বতি শরনার্থী শিবির। পরের দিন দেখানো হবে স্বয়ম্ভূনাথ স্তূপ।

নেপাল, পৃথিবীর ১৪টি উচ্চতম পর্বতের ১০টির বাড়ি হলো ভারতের উত্তর সীমান্তের এই ছোট্ট দেশটি। যাঁরা পাহাড় ভালবাসেন, হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গের স্বাদ যাঁরা একদম কাছ থেকে পেতে চান, সেই সঙ্গে বিস্তীর্ণ উপত্যকা, অবিশ্বাস্য জীববৈচিত্র্য এবং আধ্যাত্মিকতার এক মেলবন্ধন, তাঁদের জন্যে নেপালের থেকে ভালো কোনও জায়গা আর হয়তো হবে না।

এমনিতে ভারতীয়দের জন্য নেপাল যাওয়া খুব সহজ একটি বিষয়। ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল শান্তি এবং মৈত্রী চুক্তির সুবাদে ভিসা ছাড়াই একজন ভারতীয় নেপালে ঢুকতে পারেন। শুধু প্রয়োজন পাসপোর্ট বা ভোটার কার্ড সঙ্গে রাখা। তবে ভারতের নেপালপ্রেমীদের জন্য আছে এক দারুণ খবর। আইআরসিটিসি ঘোষণা করেছে একটি দারুণ প্যাকেজের।

পাঁচ রাত এবং ছয় দিনের এই প্যাকেজ শুরু হচ্ছে ৩৮,৪০০ টাকা থেকে। এই প্যাকেজের নাম তাঁরা দিয়েছেন 'ন্যাচারাল নেপাল'। এই প্যাকেজ শুরু হচ্ছে ৮ আগস্ট থেকে। এর মাধ্যমে পর্যটকরা নেপালের বহু মন্দির এবং প্রাচীন সমস্ত স্থাপত্য দেখার সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে নেপালের অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার হাতছানি তো আছেই।

আরও পড়ুন: পুজোয় বাংলা থেকে এক বাসে নেপাল! পর্যটকদের সুবর্ণসুযোগ, রইল সব তথ্য

যাত্রা শুরু হবে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল বিমানবন্দর থেকে। বিমান ছাড়বে সকাল ৭:৪৫-এ এবং দিল্লি বিমানবন্দর হয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু পৌঁছবে বিকাল ৩:৪৫ নাগাদ। প্যাকেজের মধ্যেই বিমান ভাড়া, তিনতারা হোটেলে থাকা, যাতায়াত, তিন বেলার খাওয়া এবং ট‍্যুরিস্ট গাইড ধরা থাকবে।

নেপাল পৌঁছনোর পরের দিনেই আপনাকে দেখানো হবে পশুপতি মন্দির, পাটান, দুর্বার স্কোয়ার, তিব্বতি শরনার্থী শিবির। পরের দিন দেখানো হবে স্বয়ম্ভূনাথ স্তূপ। সেই সঙ্গে থাকছে পোখারা যাওয়ার পথে মনোকামনা মন্দির।

তার পরের দিন রওনা দেওয়া হবে সুরংকোটের দিকে। সেখানে যেতে হবে একদম ভোরবেলা, যাতে অসাধারণ সূর্যোদয়ের দর্শন পাওয়া যায়। তারপর গুপ্তেশ্বর মহাদেব গুহা বিন্যাবাসিনী মন্দির।

অবশেষে আবার কাঠমান্ডু, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে ভোপাল ফেরত। পরিকল্পনা দেখে বেশ ভালোভাবেই বোঝা সম্ভব যে, শুধু হিমালয় নয়, নেপালের হিন্দু সত্তার সঙ্গে ভারতীয়দের আরো ওতপ্রোতভাবে আদানপ্রদানের দুরন্ত এক পরিকল্পনা করেছে আইআরসিটিসি।

কিছু জায়গার বিষয়ে আলাদা করে বলা প্রয়োজন, কারণ তাদের সৌন্দর্য এতটাই উল্লেখযোগ্য যে, তাদের বিষয়ে দু'চার কথা না লিখলেই নয়।

এগুলির মধ্যে একটি জায়গা হলো পোখারা। এটিকে অন্নপূর্ণা অঞ্চলের প্রবেশপথও বলা চলে। এটির সৌন্দর্য পর্যটকদের বার বার সেখানে টেনে নিয়ে গেছে। এখান থেকে আপনি অন্নপূর্ণার পর্বতশৃঙ্গ দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন ফেওয়া, বেগনাস এবং রূপা লেক। পোখারা থেকেই অন্নপূর্ণার দিকে ট্রেকিং শুরু হয়। পোখারার ঢেউখেলানো অবিশ্বাস্য সুন্দর উপত্যকার সবচেয়ে বড় লেক হল ফেওয়া। অনেকে এটিকে নেপালের সবচেয়ে সুন্দর লেকও বলে থাকেন। চাইলে এখানে আপনি বোটিং করতে পারেন। আপনি যদি এখানে বোটিং করেন, তাহলে জলের ভেতরের মাছ এবং সেই সঙ্গে জলের ওপর অন্নপূর্ণা শৃঙ্গের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। কারণ এই লেকের জল এতটাই পরিস্কার এবং স্বচ্ছ।

তাছাড়া লেকের ধারে অনেক রেস্তোরাঁ পাবেন। সেখান থেকেও ফেওয়ার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে সময় বের করে অবশ্যই ঘুরে আসবেন পুরোনো পোখারা বাজার। সেখানে খাঁটি নেপালি সংস্কৃতির স্বাদ তো পাবেনই, সেই সঙ্গে পাবেন অনেক মন্দির এবং প্রাচীন স্থাপত্য, যার সঙ্গে কাঠমান্ডুর নিওয়ারি স্থাপত্যর ভীষণ মিল। তাছাড়া আপনার প্যাকেজে বিন্যবাসিনী মন্দির তো আছেই।

আরও একটি বিষয় আপনার প্যাকেজে থাকছে, যা পোখারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তা হল তিব্বতি শরনার্থী শিবির। এই শিবিরে প্রবেশ করলে আপনার মনে হবে, আপনি এমন এক দুনিয়াতে প্রবেশ করেছেন যেখানে শান্তি ছাড়া কিছু নেই। চারিদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গৃহ, সেখান থেকে ঝুলছে পতাকা, এবং আপনার কানে ভেসে আসবে প্রার্থনার আওয়াজ। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, অমন এক পাহাড়ি উপত্যকায় প্রার্থনা এবং ঘণ্টার মিশ্রিত সেই মধুর শব্দ আপনার কানে এলে সহজে সেই স্থান আপনি ছাড়তে চাইবেন না।

আরও একটি স্থান এই প্যাকেজে থাকছে, যার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তা হল সারাংকোট। পোখারা শহর থেকে সামান্য দূরেই এই শহর অবস্থিত। অনেকে দাবি করেন, অন্নপূর্ণার সৌন্দর্য এই ছোট্ট গ্রামটি থেকেই সব থেকে ভালো ভাবে দেখা যায়। এই গ্রামের আরও একটি আকর্ষণ রয়েছে। এখানে আপনি প্যারাগ্লাইডিং করতে পারবেন।

আরও একটি জায়গা প্যাকেজে থাকছে, যা শুধু সুন্দর নয়, বরং তার বিশেষ ধার্মিক মাহাত্ম্যও রয়েছে। সেটি হল গুপ্তেশ্বর মহাদেবের গুহা। এখানে একটি বিশাল স্ট্যালেগমাইট বা শিলা থেকে বেরনো চুনাপাথর আছে যাকে শিবলিঙ্গ হিসেবে পুজো করা হয়। এই গুহাও তিব্বতি শরনার্থী শিবিরের মতো আরও একটি স্থান, যেখানে আপনি শান্তি পাবেন। তবে হ্যাঁ, সঙ্গে টর্চ রাখবেন, কারণ স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটি একটু অন্ধকার।

তাহলে আর দেরি কীসের? বেরিয়ে পড়ুন। দেশের এত কাছে এমন স্বর্গীয় দৃশ্য দেখার এমন সুযোগ ছেড়ে দেবেন? সামনে পুজো আসছে। বলা হয়, বসন্ত এবং শরৎ নেপাল ঘোরার পক্ষে আদর্শ। তাহলে এবার পুজোয় নেপাল দর্শন সেরে ফেলুন।

More Articles