অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার! বিজেপির দিল্লি দখলের মোক্ষম অস্ত্র এটিই?
CM Arvind Kejriwal Arrested by ED: আবগারি নীতিতে মদের হোম ডেলিভারি এবং দোকানগুলি রাত্রি ৩টে পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। লাইসেন্স থাকলে বিক্রেতা যা ইচ্ছা ছাড়ও দিতে পারে।
সারা দিনের জিজ্ঞাসাবাদ, অভিযানের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করল ইডি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র একটি দল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনে পৌঁছে যায় বৃহস্পতিবার। দিল্লি আবগারি নীতি মামলার খাঁড়া ঝুলছে কেজরিওয়ালের উপর। তদন্তকারী সংস্থার দল বর্তমানে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অর্থাৎ অর্থ তছরুপ আইনের ধারা ৫০-এর অধীনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য রেকর্ড করছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আইনি দল এই বিষয়ে জরুরি শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ইতিমধ্যেই।
ইডির প্রায় আটজন তদন্ত কর্মকর্তা কেজরিওয়ালের বাড়িতে উপস্থিত হন, বাসভবন জুড়ে তল্লাশি চালান। দিল্লি হাইকোর্ট আবগারি নীতির মামলায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারি থেকে সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইডির এই হানা। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে।
আবগারি নীতি-সংযুক্ত অর্থি তছরুপের একটি মামলায় আপ আহ্বায়কের কাছে দশমতম সমন পাঠাতে তদন্তকারী সংস্থার দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ার বাসভবনে যায়। উত্তর দিল্লির ডিসিপি মনোজ কুমার মীনাও সেখানে অন্যান্য এসিপি মর্যাদার আধিকারিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে বিশাল পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়।
দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলছেন, "যেভাবে পুলিশ ভিতরে রয়েছে এবং কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, দেখে মনে হচ্ছে ইডির অভিযান চালানো হচ্ছে। মনে হচ্ছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা করেছে তারা।" তাঁর আশঙ্কা সত্য হয়।
আরও পড়ুন- নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করেও রেহাই! ১০০০ কোটির বন্ড কিনেছে কোন কোন ওষুধ কোম্পানি?
আম আদমি পার্টির প্রধান আবগারি নীতি কেলেঙ্কারির বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের জারি করা নয়টি সমন এড়িয়ে গেছেন। সোমবার, তিনি দিল্লি জল বোর্ডের বেনিয়মের সঙ্গে যুক্ত একটি অর্থ তছরুপের মামলাতেও জারি করা সমন এড়িয়ে গেছেন।
বিআরএস নেতা কে কবিতাকে আবগারি নীতির মামলায় গ্রেফতার করার এক সপ্তাহেরও কম সময়ে ইডির দল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কে কবিতার গ্রেফতারির পর সেই প্রথম এই মামলায় ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে নাম প্রকাশ্যে আসে কেজরিওয়ালের।
গত বছরের অক্টোবরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট প্রথম সমন জারি করে। দিল্লির প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকেও গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, আপ রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংকেও অক্টোবরে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এই আবগারি নীতির মামলাটি ঠিক কী? ২০২১ সালে দিল্লিতে মদ বিক্রি নিয়ে একটি নীতি প্রবর্তিত হয়, পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অন্য রাজ্যের আবগারি নীতির থেকে এই নীতি আলাদা। এই নীতির অধীনে মদ বিক্রির সঙ্গে সরকারের আর কোনও সম্পর্ক ছিল না এবং শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দোকানগুলিই মদ বিক্রি করার অনুমতি পায়। এর লক্ষ্য ছিল কালোবাজারি বন্ধ করা, রাজস্ব বৃদ্ধি করা এবং গ্রাহকদের সুবিধা করে দেওয়া।
এই আবগারি নীতিতে মদের হোম ডেলিভারি এবং দোকানগুলি রাত্রি ৩টে পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। লাইসেন্স থাকলে বিক্রেতা যা ইচ্ছা ছাড়ও দিতে পারে। সরকার জানায়, এই আবগারি নীতির ফলে সরকারের আয় ২৭ শতাংশ বেড়েছে, সরকার প্রায় ৮,৯০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই নীতি নিয়েই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। প্রথমে দিল্লি পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা বিষয়টি সরাসরি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে জানাত। তারপর গোল বাঁধে দিল্লির নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার সঙ্গে, তিনিও কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রতিনিধি।
আরও পড়ুন- দশ বছরে দেশের বেকার, চাকরিপ্রার্থীদের কী দিলেন নরেন্দ্র মোদি?
মণীশ সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গ করার এবং লাইসেন্স থাকা মদ বিক্রেতাদের অযৌক্তিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত কিন্তু মণীশ সিসোদিয়ার নাম সিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে ছিল না। সিবিআই ২০২২ সালে তাঁর বাড়ি সহ ৩১টি জায়গায় অভিযান চালায়।
অন্যদিকে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও আলাদা করে দিল্লির আবগারি কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করে।অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠে। ইডি দাবি করে, 'সাউথ গ্রুপ' নামে পরিচিত একটি আবগারি লবি গোয়ায় নির্বাচনী প্রচারের জন্য আম আদমি পার্টিকে অন্তত ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে। আবগারি নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিজয় নায়ারও প্রায়ই কেজরিওয়ালের অফিসে যেতেন এবং সেখানে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন বলে দাবি ইডির। ইডির দাবি, এই বিজয় নায়ারই ইন্দোস্পিরিটের মালিক সমীর মহেন্দ্রুকে কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। সাউথ লবির প্রথম অভিযুক্ত রাঘব মাগুন্তা, যিনি এখন একজন সাক্ষী, তিনি বলেছিলেন তাঁর বাবা, ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সাংসদ, আবগারি নীতি সম্পর্কে আরও জানতে কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ইডি তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা বিজেপির তীব্র সমালোচক কে কবিতাকে এবং তাঁর প্রাক্তন হিসাবরক্ষককেও গ্রেফতার করে। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করার ঘটনা সারা দেশের রাজনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারিই নয় বিষয়টি, বিষয়টি বিজেপি বিরোধী শক্তিকে খোদ দিল্লি থেকে উপড়ে ফেলা। সরকার প্রতিষ্ঠাকে নিষ্কণ্টক করতে কোন পর্যায়ে যেতে পারে বিজেপি তাই এখন দেখার। অন্যদিকে এও প্রশ্ন উঠছে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি নিজের সমর্থনকে আবেগের দিক থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবেন?