হার মানল তাজমহল, গিজার পিরামিডও! মায়াপুরে বিশ্বের বৃহত্তম মন্দিরের অন্দর চোখ ধাঁধাবেই
Mayapur Vedic Planetarium Temple: প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া এই মন্দিরের মাথায় বসানো হয়েছে এক বিশালাকার চক্র।
কৃষ্ণের নামে এখানে জোটেন ভক্তরা। শুধু উৎসবেই নয়, সারা বছর জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কৃষ্ণভক্তদের আসা যাওয়া এমনকী আবাসও এখানে। প্রতি বছর ৭০ লক্ষ পর্যটক আসেন মায়াপুরে। নদিয়ার মায়াপুরের ইস্কন মন্দির দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র। মায়াপুর ইস্কন চত্বরে বহু যুগ থেকেই মন্দির আছে। তবে এবার সেখানে তৈরি হচ্ছে বিশালাকার মন্দির। নির্মাণের কাজ অবশ্য শুরু হয়েছে গত ২০০৯ সালে, আশা করা যায় ২০২৪ এর আগেই কাজ সম্পূর্ণ হবে। মন্দিরটি পুরোপুরি তৈরি হলে তা তাজমহল এবং ভ্যাটিকানের সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের থেকেও আকারে বড় হবে। কোভিডের কারণে দুই বছর থেমেছিল মন্দিরের কাজ। মন্দিরের নাম বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম, আয়তন চার লক্ষ বর্গফুট। উচ্চতা এবং আয়তনে এটিই হবে বিশ্বের বৃহত্তম মন্দির। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব কৃষ্ণ কনসাসনেসের (ISKCON) সদর দফতরও হবে মায়াপুরের এই মন্দির। এই বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামের প্রতি তলায় ১০ হাজার মানুষের একত্রে বসতে পারবেন।
কী কী আছে এই মন্দিরের ভেতরে?
এই সুবিশাল বৈদিক প্ল্যানেটেরিয়াম মন্দির তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল ভবনের নকশা দেখে ভালো লেগেছিল তাঁর। সেই রকম করেই শ্রীল প্রভুপাদ এই মন্দির তৈরি কথা বলেছিলেন। ১৯৭৬ সালে মন্দিরের বাহ্যিক কাঠামো তৈরির কথা প্রসঙ্গে নিজের এই পছন্দের কথা জানান তিনি। ওয়াশিংটনে থাকাকালীন তিনি বিশাখা মাতাজি এবং যদুবরা প্রভুকে ক্যাপিটাল ভবনের ছবি তুলতে বলেন। সেই মতোই তৈরি হচ্ছে মন্দিরখানি।
বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মন্দির হল কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাট। তাকেও টেক্কা দেবে মায়াপুরের বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম। আয়তনে এটি হবে গিজার পিরামিডের সমান। বিশ্বের বৃহত্তম গম্বুজও রয়েছে এই মন্দিরে।
প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া এই মন্দিরের মাথায় বসানো হয়েছে এক বিশালাকার চক্র। পুরোটাই তৈরি স্টেনলেস স্টিল দিয়ে, তার উপরে রয়েছে রঙিন আস্তরণ। ২১ ফুট উচ্চতার এই চক্রের ওজন দেড় টন, তৈরি হয়েছে রাশিয়ায়। শুধু চক্র নির্মাণেই খরচা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।
এই বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামের ফাইন্যান্স কমিটির প্রধান হলেন মায়াপুর ইস্কনের শিষ্য আলফ্রেড ফোর্ড। বিখ্যাত মোটরগাড়ি নির্মাণ সংস্থার মালিক হেনরি ফোর্ডের প্রপৌত্র তিনি, ইস্কনে দীক্ষার পর নাম পালটে তিনি হয়েছেন অম্বরীশ দাস। বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম এবং চক্র নির্মাণে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা করেছেন আলফ্রেড এবং তাঁর স্ত্রী শর্মিলা ভট্টাচার্য। মন্দির তৈরিতে ৩০ মিলিয়ন ডলার দান করেছেন অম্বরীশ।
ইস্কন সুত্রে জানা গিয়েছে, মন্দিরের ভেতরে থাকবে নানা ত্রিমাত্রিক মূর্তি যা বৈদিক সংস্কৃতির নানা দিক ফুটিয়ে তুলবে। ভেতরে রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি তো থাকছেই। শ্রীচৈতন্যদেব এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণবীয় পরম্পরা আচার্যদের বিগ্রহও থাকবে এতে।
মন্দির সাজাতে রাজস্থানের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে টাইলস আনা হয়েছে। টেম্পল অব বৈদিক প্ল্যানেটেরিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মন্দিরটি পূর্ব এবং পশ্চিমের স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ। মন্দিরটির মধ্যেকার 'পূজারি ফ্লোর'-এর আয়তন ২.৫ একর এবং মন্দিরের মেঝের ব্যাস ৬০ মিটার। এখানে ২০ মিটার লম্বা একটি ঝাড়বাতিও আছে। এখনও পর্যন্ত ২ কোটি কেজি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে মন্দির নির্মাণে। মন্দিরটিকে প্রাসাদ বললেও কম হয়।
বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামে থাকছে ইনস্টিটিউট অব বৈদিক কসমোলজি বিভাগ। এখানে ভক্তরা কৃষ্ণের ভার্চুয়াল দর্শনও করতে পারবেন, এছাড়া মহাজাগতিক সৃষ্টি নিয়ে নানান প্রদর্শনীও চলবে মন্দিরের ভেতরে।
বিশ্বের অন্যান্য সমস্ত ধর্মীয় সৌধের থেকে বৃহত্তম চূড়া হবে এই মন্দিরে। ৩৫০ ফুট উঁচু এই মন্দিরে থাকবে ১৪টি লিফট।
মন্দিরের পুজো অনলাইনে সম্প্রচারও করা হবে। বিশ্বের বৃহত্তম এই বৈদিক মন্দির সব ধর্ম, বর্ণ ও সম্পদায়ের মানুষের জন্য উন্মুক্ত।