গাজার শরণার্থী শিবিরে ভয়ঙ্কর হামলা! ফের নিরপরাধ মানুষের রক্তে ভিজল নেতানিয়াহুর হাত

Israel’s war on Gaza: মধ্য গাজার একটি স্কুলকেই শরণার্থী শিবির করে আশ্রয় নিয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সহায়সম্বলহীন গাজাবাসী। আর সেই স্কুলেই আকাশপথে হামলা চালানো হয় বৃহস্পতিবার।

গাজায় ইজরায়েলি হামলার কোনও বিরাম নেই যেন। রাফাহতে অগুনতি হামলা চালিয়েও শেষ হয়নি ইজরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন। এবার মধ্য গাজার নুসিরত শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ হামলা হানল নেতানিয়াহু সেনা। মধ্য গাজার একটি স্কুলকেই শরণার্থী শিবির করে আশ্রয় নিয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত সহায়সম্বলহীন গাজাবাসী। আর সেই স্কুলেই আকাশপথে হামলা চালানো হয় বৃহস্পতিবার। ঘটনায় অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও মহিলা।

প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার পর থেকে গাজায় হামলার পর হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। গাজার সামান্যতম অংশও রেহাই পায়নি ইজরায়েলি সেনার আগ্রাসনের হাত থেকে। কার্যত গোটা গাজাটাই পরিণত হয়েছে এক ধ্বংসস্তূপে। এখনও পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৩৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইজরায়েলি হামলায়। আর সেই সংখ্যাটা প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হামাস জঙ্গিদের ধ্বংস করার নামে ইজরায়েল সরকার গাজার অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে অবিরত হত্যা করে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারই ইজরায়েল সেনার তরফে ঘোষণা করা হয়, তাদের নয়া নিশানা মধ্য গাজার শরণার্থী শিবিরগুলি। সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে হামাস জঙ্গিরা। এমনটাই খবর রয়েছে ইজরায়েল সেনার কাছে।

আরও পড়ুন: গাজার পর লেবাননেও ‘মারণ’ ফসফরাস হামলা! যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে

মধ্য গাজার যে স্কুলটিকে নিশানা করে নেতানিয়াহু সেনা, সেই আল-সারদি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন যুদ্ধে সব কিছু হারানো অসংখ্য মানুষ। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের যে সংস্থা (UNRWA) রয়েছে, তার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এই শিবিরটি। তেমনটাই জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা। আর সেটির উপরেই নামে সাম্প্রতিক এই হামলা।

গাজায় এখন আর একটাও হাসপাতাল আস্ত নেই। যেখানে বিপর্যস্ত মানুষের চিকিৎসা হতে পারে। বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ হামলায় অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুর জন্য আল আকসা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেও অবশ্য তিল ধারণের জায়গা নেই। প্রায় প্রতিদিনই জমছে যুদ্ধাহতদের ভিড়। জমছে মৃতদেহের পর মৃতদেহ। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস জানায়, গাজা থেকে ইজরায়েল সম্পূর্ণ রূপে সেনা সরিয়ে না নিলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। এদিকে ইজরায়েলের সেনাপ্রধান জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথাবার্তার সময়ে যুদ্ধ থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

এদিকে প্রতিদিন গাজায় বাড়ছে দুর্ভীক্ষ। প্রায় দশ লক্ষ মানুষ সেখানে অনাহারের শিকার। এদিকে ইজরায়েলের তরফে যুদ্ধের মাত্রা বাড়ানোর নির্দেশই এসে পৌঁছচ্ছে বারংবার। বৃহস্পতিবারের এই হামলায় অবশ্য ২৭ জন হামাস জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে ইজরায়েলের তরফে দাবি করা হয়েছে। গত বছর অক্টোবর মাসে ইজরায়েলে হামলা করেছিল হামাস। সেই ঘটনার আট মাস কেটে গেলেও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। সত্যিই কি তাদের সাম্প্রতিক হামলায় একজনও হামাল জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, না নিরপরাধ মানুষের গণহত্যার অপরাধ কপাল থেকে মুছে ফেলতেই এই মিথ্যে গল্প বুনছে ইজরায়েল সরকার।

আরও পড়ুন: ‘তেহরানের কসাই’! কেন রইসির মৃত্যুতে আতসবাজি ফাটছে ইরানে?

এমনিতেই আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ চাপে রয়েছে ইজরায়েল। দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার আমাত্যদের বিরুদ্ধে ঝুলছে আন্তর্জাতিক আদালতের লালচোখ। ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য তদ্বির করেছেন এক কাউন্সেল। তার উপর ইরানের প্রেসিডেন্ট রইসির মৃত্যুর নেপথ্যে ইজরায়েলের হাত থাকতে পারে বলেও চর্চা চলছে। এই পরিস্থিতিতে এই হামলা ও এত এত নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু কি অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে নেতানিয়াহুর জন্য? উঠছে সেই প্রশ্নই।

More Articles