ত্রাণের লাইনে প্রাণঘাতী বোমা! রাফাহতে যে ভয়ঙ্কর হত্যালীলা চালিয়েই যাচ্ছে ইজরায়েল

Israel Hamas Conflict: সম্প্রতি কারেম আবু সালেম সীমান্তের কাছে মানবিক সাহায্যের জন্য ট্রাকের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন বাসিন্দারা। ভয়ঙ্কর দুর্ভীক্ষের মধ্যে সম্বল বলতে ওইটুকুই। সে সময় হঠাৎ করেই এসে পড়ে ইজরায়েলি বোমা।

যুদ্ধশান্তির প্রশ্নই নেই। গাজায় এখনও ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। গোটা গাজায় আর কোনও জায়গা বেঁচে নেই, যেটা সুরক্ষিত। সম্প্রতি দক্ষিণ রাফাহের কারেম আবু সালেম এইড ক্রসিংয়ের কাছে একটি সাহায্যকারী ট্রাকের কাছে জড়ো হয়ে যখন ত্রাণ নিচ্ছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বাসিন্দারা, সেসময় হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। সেই ঘটনায় অন্তত ৯ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জখম অন্তত ৩০।

হামাস নিকেষ করার নামে দিনের পর দিন স্থানীয় গাজাবাসীর উপর আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছে ইজরায়েল। কোনও কিছুতেই যুদ্ধের অবস্থান থেকে সরিয়ে আনা যায়নি তাদের। এমনকী যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পর্যন্ত সম্মত হয়নি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গোটা গাজা উজার করে দেওয়ার পর রাফাহ-র দিকে এগোতে শুরু করেছিল ইজরায়েলি সেনা। হামাস জঙ্গিরা সেখানেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, এই ভাবনা থেকে নামতে শুরু করেছিল একের পর এক হামলা। এখনও সেখানে জড়ো হয়ে রয়েছে ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক, ড্রোন। যে কোনও সময় আরও বড় কোনও হামলার ভয়ে কাঁপছে গোটা গাজা। 

আরও পড়ুন: ভুলস্বীকার নাটকই! রাফাহ শহর ধ্বংস করেই থামবে ইজরায়েল?

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪-এর জুন। এই ক'মাসে গাজায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৭ হাজার। জখম পৌঁছেছে এক লক্ষের কাছাকাছি। যার মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। এই কয়েক মাসে নির্বিচারে গাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করে গিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। স্কুল থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ধর্মস্থান থেকে শরণার্থী শিবির, বাদ যায়নি কোনও কিছুই। এতগুলো মাস ধরে লাগাতার যুদ্ধে ভয়াবহ দুর্ভীক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গাজা জুড়ে। নিরাপত্তার অভাবে আশপাশ থেকে সাহায্য় আসাও প্রায় বন্ধ। গাজার বেশিরভাগ হাসপাতালেরই এমন অবস্থা, সেখানে ন্যূনতম চিকিৎসার পরিকাঠামোটুকুও নেই।

রাফাহ আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে সাধারণ বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল ইজরায়েলি সেনা। কিন্তু গোটা গাজার মধ্যে শুধু মাত্র রাফাহ শহরটাই অক্ষত থাকায়, সেটিই হয়ে উঠেছিল গোটা গাজার আশ্রয়শিবির। তাই রাফাহ খালি করার কাজ সহজ ছিল না মোটেই। তার মধ্যেই হামলা চালাতে শুরু করে দেয় ইজরায়েল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (UNRWA) মনে করছে, এখনও অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ রাফাহতে রয়ে গিয়েছেন। যেখানে লাগাতার হামলা চালিয়েই যাচ্ছে ইজরায়েল।

সম্প্রতি কারেম আবু সালেম সীমান্তের কাছে মানবিক সাহায্যের জন্য ট্রাকের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন বাসিন্দারা। ভয়ঙ্কর দুর্ভীক্ষের মধ্যে সম্বল বলতে ওইটুকুই। সে সময় হঠাৎ করেই এসে পড়ে ইজরায়েলি বোমা। এর আগেই সাহায্য নিতে আসা নিরপরাধ মানুষের ভিড়ে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। কখনও বুক চিরে দিয়েছে গুলি, কখনও বোমা এসে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে শরীর।

আরও পড়ুন:‘ট্র্যাজিক মিসটেক’! রাফাহতে গণহত্যার পর ভুলস্বীকার আসলে কোন কৌশল নেতানিয়াহুর?

ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগ ঝুলছে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর আমাত্যবর্গের কাঁধে। এরই মধ্যে আবার ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ। দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের সঙ্গে অশান্তি বাড়ছে হিজবুল্লাহের। প্রায়শই ইজরায়েলে হামলা চালাচ্ছে তারা। হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ জানিয়েছেন, তাদের হাতে ইজরায়েল আক্রমণের গোটা পরিকল্পনা প্রস্তুত। এবং তেমনটা হলে হিজবুল্লাহের অস্ত্র থেকে ইজরায়েলের কোনও অংশ রেহাই পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। একদিকে হামাসের সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ, তার উপর ইরানের সঙ্গে সংঘাত, এবার হিজবুল্লাহের হুঁশিয়ারি। সব সামলাতে পারবেন তো একা হাতে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। নাকি এত সব চাপে গাজায় আগ্রাসন শেষমেশ কমানোর কথা ভাববেন নেতানিয়াহু? সেটাই এখন ভাবনা বিশ্বের সব কটি ছোটবড় দেশের।

More Articles