বিজেপিকে সমর্থনের দাম! দাবিদাওয়ার লম্বা ফিরিস্তি নিয়ে ফের মোদির দরজায় চন্দ্রবাবু

PM Narendra Modi-Chandrababu Naidu: অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য মোদি সরকারের কাছ থেকে সমর্থনের দাম উশুল করেই নিতে চাইছেন চন্দ্রবাবু নাইডু পুরোপুরি। ইতিমধ্যেই নাকি এই সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে চন্দ্রবাবু নাইডু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র...

লোকসভা ভোটে জিতলেও এ বছর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। যার ফলে সরকার গড়তে নরেন্দ্র মোদিকে অনেকটাই নির্ভর করতে হয়েছে এনডিএ-র শরিক দলগুলিকে। বিশেষত বিহারের নীতীশ ও অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুকে দেখা গিয়েছিল কিংমেকারের চেয়ারে। এদিকে ইন্ডিয়া জোটও খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না এনডিএ-র প্রাপ্ত ভোটের থেকে। ফলে জনা চল্লিশটি সাংসদ জোগাড় করতে পারলেই বিজেপির ঘটি উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তাদের। এই পরিস্থিতিতে এনডিএ শিবিরের মনোবল বাড়িয়েছেন নাইডুর। শক্ত করে ধরেছেন মোদির হাত। তার বিনিময়ে মোদির মন্ত্রিসভায় যা যা চেয়েছিলেন তারা, কার্যত তার এক তৃতীয়াংশও পূরণ হয়নি। বিশেষত চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্ষেত্রে তো বটেই। যেসব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপদ তিনি চেয়েছিলেন, সে সব কিছুই হাতছাড়া করতে চায়নি বিজেপি। এমনকী স্পিকারপদের জন্য যে দাবি জানিয়েছিলেন চন্দ্রবাবুরা, তা-ও পূরণ করেনি মোদি সরকার।

পাঁচ বছর পর অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষমতায় ফিরেছে তেলগু দেশম পার্টি। কেন্দ্রে সুবিধা না করতে পারলেও এবার মোদির থেকে পাশে থাকার দাম চান চন্দ্রবাবু নাইডু। ইতিমধ্যেই নয়া দিল্লিতে ফোন এসেছে তার। সঙ্গে এসেছে দীর্ঘ তালিকা। তাতে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের জন্য একগুচ্ছ দাবিদাওয়া। স্বল্পমেয়াদী তহবিল থেকে শুরু করে পরিকাঠামো উন্নয়নে অতিরিক্ত ক্যাপেক্স সহায়তা, অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী অমরাবতীর জন্য বাড়তি অর্থ এবং একটি নতুন তৈল শোধনাগার। কেন্দ্রীয় বাজেটের আগেই সেই সব দাবিদাওয়া কেন্দ্রের কানে তুলে দিতে চাইছে অন্ধ্রের টিডিপি সরকার।

আরও পড়ুন: কারও পকেটে ৭০০ কোটি তো কারও ৩০ হাজার! মোদি-মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্রতম সদস্য কারা জানেন?

সরকার গড়তে মোদিকে সমর্থন জানানোর সময়েই রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের দাবি করে রেখেছিলেন দুই কিংমেকারই। চলতি বছর বিহারে বিধানসভা ভোট। ফলে সেখানকার সমীকরণ আলাদা। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য মোদি সরকারের কাছ থেকে সমর্থনের দাম উশুল করেই নিতে চাইছেন চন্দ্রবাবু নাইডু পুরোপুরি। ইতিমধ্যেই নাকি এই সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে চন্দ্রবাবু নাইডু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। গত ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করেন তিনি। আর সেই বৈঠক খুবই ইতিবাচক হয়েছে বলেই দাবি করা হয়েছে অন্ধ্র সরকারের তরফে।

২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তেলঙ্গানা। সেই বিভক্তি অন্যায্য বলেই মনে করেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। সূত্রের খবর, গত সরকারের ‘ভুল আর্থিক নীতির’ কারণে রাজকোষে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়া মেটানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি রাজ্যের নতুন রাজধানী অমরাবতী গড়ে তোলার জন্যও বড় মাপের অর্থসাহায্য প্রয়োজন বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন নাইডু। আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটে অন্ধ্রের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করার অনুরোধ করেছেন।

শুধু নাইডুই নন, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা রেবন্ত রেড্ডিও নাকি শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এসে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন তারাও। কেন্দ্রীয় বাজেটে বিহারের জন্যেও যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করার দাবি জানিয়ে রেখেছেন নীতীশও। ফলে শরিক দলের ঋণ মেটাতে রীতিমতো বিপাকে এই মুহূর্তে মোদি সরকার। সমস্যা আরও গভীরে। দুটি রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য দিলে একই দাবি নিয়ে সরব হবে বাকিরাও। এমনকী আন্দোলনের নামতে পারে সেসব রাজ্য। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের অনুমান।

সূত্রের খবর, আগামী শনিবার নাকি হায়দরাবাদে তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ, এই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং রেবন্ত রেড্ডির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলবেন সেখানে নরেন্দ্র মোদি। তার আগেই শুক্রবার পুরোনো হিসেব বুঝে নিতে প্রধানমন্ত্রীর দরবারে হাজির রেবন্ত। ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে ভেঙে তেলঙ্গানা হওয়ার সময় নতুন রাজ্যকে যে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র, তা এখনও মেলেনি। সেই আর্থিক প্যাকেজ চেয়েই মোদির কাছে আবেদন জানান রেড্ডি। শুধু সেটাই নয়। আরও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়নের জন্য অর্থসাহায্য চাওয়া হয়েছে মোদির কাছে।

আরও পড়ুন: মোদি মন্ত্রিসভা 3.O: বিজেপির ভাগ-বাঁটোয়ারা খুশি মনে মানবেন নীতীশ-নাইডুরা?

সব মিলিয়ে শরিক দলের দাবিদাওয়া মেটাতে গিয়ে বেশ সঙ্কটেই পড়তে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। মন্ত্রিসভায় তেমন ভাবে নাইডুর প্রত্যাশাপূরণ করে উঠতে পারেনি বিজেপি। এবার রাজ্যের প্রসঙ্গেও যদি অন্ধ্রের দাবিদাওয়া এড়িয়ে যায় তারা, সেক্ষেত্রে পরবর্তী কালে শরিক দলের সমর্থন টিকিয়ে রাখতে সমস্যায় পড়তে পারে গেরুয়া শিবির। সে ক্ষেত্রে সব দিক বজায় রেখে কী সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদির সরকার, সেটাই দেখার।

More Articles