অবহেলা করছেন পায়ের ক্ষত? চিরজীবনের জন্য হাঁটার ক্ষমতা হারাতে পারেন আপনিও
Diabetic foot ulcer: প্রায় ১৫-২৫% ডায়াবেটিক রোগীর জীবনের কোনও না কোনও সময়ে পায়ের আলসার হয়।
আলসার সামান্য বিষয় নয় মোটেও। তবে বিভিন্ন আলসারের মধ্যে অন্যতম জটিল এবং চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে পায়ের আলসার। বিশেষত ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা রয়েছে যে মানুষদের তাঁদের ক্ষেত্রে পায়ের আলসার ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। পায়ের আলসার অবশ্য নির্দিষ্ট একটি কারণে নয়, একাধিক কারণ মিলেই এই রোগ হতে পারে যা সঠিকভাবে, সময়মতো চিকিৎসা না করলে গুরুতর জটিলতার দিকে যেতে পারে। পায়ের আলসার কীভাবে হয়? কীভাবেই বা টের পাবেন? পায়ের আলসার ছড়িয়ে পড়ার আগে কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
পায়ের আলসারের কারণ:
১. ডায়াবেটিস
প্যাথোফিজিওলজি: ডায়াবেটিসের ফলে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হতে পারে। এর ফলে পায়ের সংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। হাইপারগ্লাইসেমিয়া রক্তনালীর ক্ষতি করে, রক্ত প্রবাহকে ব্যাহত করে এবং আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৫-২৫% ডায়াবেটিক রোগীর জীবনের কোনও না কোনও সময়ে পায়ের আলসার হয়।
২. খারাপ মানের জুতো:
জুতো পায়ের ঠিক কোন অংশে চাপ দিচ্ছে, কোন অংশে ঘর্ষণ হচ্ছে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এমন জুতো পরার ফলে ত্বক ছিঁড়ে যায় এবং আলসার হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে, সঠিক জুতো আলসারের ঝুঁকি ৫০% কমাতে পারে।
৩. ট্রমা:
ছোটখাটো আঘাত, যেমন কাটা বা ঘষা লাগা, দ্রুত আলসারে পরিণত হতে পারে। বিশেষ করে সেই মানুষদের যাদের কোনও আঘাআত সারতে, কাটা শুকোতে সময় লাগে। জার্নাল অফ উন্ড কেয়ারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের আলসারের ২৩% সরাসরি আঘাতের সঙ্গে যুক্ত।
আরও পড়ুন- চেঁচিয়ে কথা বলা অভ্যাস? হু হু করে ভারতীয়দের দেহে বাড়ছে এই ক্যান্সার…
৪. সংক্রমণ:
ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাল সংক্রমণ আলসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে, আলসার সারানোও সেক্ষেত্রে জটিল হয়ে যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল চিকিত্সা সংক্রামিত আলসারের ঝুঁকি ৬০% পর্যন্ত কমাতে পারে।
৫. রক্ত চলাচলের সমস্যা:
পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজের মতো অবস্থার হলে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়। এর ফলে স্বাভাবিক নিরাময় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। যে মানুষদের দেহে রক্ত সঞ্চালন দুর্বল, সেই রোগীদের পায়ের আলসার হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক রক্ত চলাচলের মানুষদের তুলনায় দ্বিগুণ।
কীভাবে সতর্ক হবেন?
১. নিয়মিত পা পরীক্ষা:
কোনও আঘাতের লক্ষণ বা ত্বক কোথাও কেটে বা ফেটে গেছে কিনা, তা নিয়মিত খেয়াল রাখুন। পায়ের সমস্ত অংশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হলে আয়না ব্যবহার করুন বা কাউকে দিয়ে দেখান।
২. সঠিক জুতো পরুন:
এমন জুতোই পরুন যাতে পায়ে আরাম হয়, কোথাও আঘাত না লাগে, ব্যথা না হয়। পায়ের পাতার জন্য যে প্রশস্ত জায়গা থাকে। শ্বাস নেওয়া যায় এমন উপকরণ দিয়ে তৈরি জুতো পরুন। পায়ের গঠন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জুতো চাইলে পডিয়াট্রিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৩. আর্দ্রতা:
ত্বককে শুষ্কতা এবং ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার লাগান। ত্বকের হাইড্রেশন বাড়াতে ইউরিয়া আছে এমন ক্রিম ব্যবহার করুন।
৪. আঘাত থেকে বাঁচুন:
যেখানে আঘাতের ঝুঁকি বেশি সেরকম স্থানে উপযুক্ত মোজা এবং জুতো পরুন। ঘর্ষণ এবং চাপ কমাতে প্যাডেড মোজা পরুন।
৫. স্বাস্থ্যকর অভ্যাস:
ধূমপান ছাড়ুন। ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ে হেলাফেলা করবেন না। পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য খান যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং দ্রুত ক্ষত সারায়।
আরও পড়ুন- ফিরছে কুষ্ঠরোগ! ভয়াবহ সংক্রমণ কীভাবে জেগে উঠল ফের?
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
১. ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন:
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন যাতে স্নায়ুর ক্ষতি না হয় এবং আলসার হওয়ার ঝুঁকিও কমে।
২. হাইড্রেটেড থাকুন:
পর্যাপ্ত জল ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেই ভালো রাখে এবং শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াগুলিকে উন্নত করে।
৩. ধূমপান কমান:
ধূমপান বন্ধ করা এই জন্যই জরুরি, কারণ তামাক রক্তসঞ্চালন এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।