অম্বিকেশ কার্টুন মামলা খারিজ, ১১ বছর ধরে খেসারতের যে পথ পেরিয়ে এলেন যাদবপুরের অধ্যাপক
Ambikesh Mahapatra Cartoon Case : প্রায় ১১ বছর ধরে চলা ‘কার্টুন মামলা’ থেকে অব্যাহতি পেলেন তিনি। মজার ছলে বলাই যায়, মামলাটি একেবারে ‘ভ্যানিশ’ই হয়ে গেল!
‘দুষ্টু লোক? ভ্যানিশ!’ মজার ছলে একটি মিম বা কার্টুন শেয়ার করেছিলেন তিনি। তার পরিণতি? নির্যাতন, মার, হাজতবাস, আদালতে দৌড় করানো, পুলিসের হয়রানি। অকুস্থল, এই ভারত। আরও ভালো করে বললে, এই পশ্চিমবঙ্গ। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ১১টি বছর। মাথায় পাকা চুলের সংখ্যা আরও বেশ খানিকটা বেড়েছে। শেষমেশ নিষ্কৃতি পেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ অম্বিকেশ মহাপাত্র। প্রায় ১১ বছর ধরে চলা ‘কার্টুন মামলা’ থেকে অব্যাহতি পেলেন তিনি। মজার ছলে বলাই যায়, মামলাটি একেবারে ‘ভ্যানিশ’ই হয়ে গেল!
সমস্ত কিছুর সূত্রপাত ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে। বামমনস্ক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র নিজের ফেসবুকে একটি কার্টুন বা মিম শেয়ার করেছিলেন। সেই সময় তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে রেলমন্ত্রী করা হয় মুকুল রায়কে। কার্টুনটির বিষয় ছিল এটি। নেহাত মজার ছলেই সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’-কে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেখানেও মুকুল, এখানেও মুকুল। সঙ্গে জুড়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দীনেশ ত্রিবেদী। ‘দুষ্টু লোক? ভ্যানিশ!’ এই বিখ্যাত সংলাপটিকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত নিরীহ একটি মিম। স্রেফ মজা করার জন্যই এটি শেয়ার করেছিলেন ‘মাস্টারমশাই’ অম্বিকেশ।
Prof Ambikesh Mahapatra of Jadavpur University was arrested and jailed for forwarding a cartoon lampooning West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee to about 65 people via email. pic.twitter.com/czM5FMDQqq
— Bar & Bench (@barandbench) November 22, 2020
তারপরই ঘটল আসল ঘটনা। স্রেফ এই কার্টুন বা মিম শেয়ার করার ‘অপরাধে’ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রোষানলে পড়তে হল অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে অবশ্য জামিন পেলেও নির্যাতন চলছিল সমানে। শাসকদল আশ্রিত ‘দাদা’দের হুমকি, পুলিশের জুলুমবাজির শিকার হন অম্বিকেশ মহাপাত্র। জামিন পেলেও মামলা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। রেহাই মিলছিল না অধ্যাপকের। এর মধ্যেই সিপিএমের হয়ে ভোটেও দাঁড়ান তিনি। কিন্তু কার্টুন মামলার ঝড় তাঁর মাথা থেকে সরেনি।
আরও পড়ুন : বিরোধিতা মানেই মামলা, গ্রেপ্তার! রোদ্দুর রায় প্রথম নন, তৃণমূল আমলে বারবার ঘটেছে এমন
আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তথ্যপ্রযুক্তির যে ধারায় অম্বিকেশ মহাপাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছিল, সেটি অসাংবিধানিক। স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টই সেটা ঘোষণা করে দিয়েছে। তারপর তো তাঁকে আটকে রাখার কোনও প্রশ্নই থাকে না। ২০২১ সালে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আলিপুর আদালতে আবেদন করেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। শেষমেশ সেই আবেদনই গ্রাহ্য করা হয়েছে।
১১ বছর হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। তার আগেই মুক্তি পেয়ে গেলেন যাদবপুরের এই অধ্যাপক। শাসকদলের হয়রানি থেকে মুক্তি পেলেন। ১১ বছর ধরে নিজের জীবন দিয়ে যে খেসারত দিলেন, তা আজ একটা গন্তব্য পেল। শাসক মাত্রেই বাক স্বাধীনতাকে ভয় পায়, যেনতেন প্রকারেণ তাকে দাবিয়ে রাখতে চায়, এই ঘটনা তার অন্যতম উদাহরণ। যুগ বদলায়, নদী দিয়ে গড়িয়ে যায় জল। কিন্তু শাসক? ক্ষমতা? নিজেদের চরিত্র বদলায় না। সে রাজ্যই হোক, কি কেন্দ্র।