সমুদ্রে মাঝে বিলাসবহুল বিমানবন্দর! বিপুল ব্যায় সত্ত্বেও কেন শেষের দিন গুনছে জাপানের কানসাই?

Sinking Airport in Japan: আগামী কয়েক বছরে ক্রমশ যে জলের নিচে হারিয়ে যেতে পারে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে বানিয়ে তোলা এই কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেই আশঙ্কা কিন্তু খুব একটা অমূলক নয়।

পৃথিবীর প্রত্যন্ততম বিমানবন্দর বললে খুব একটা ভুল হবে না। কারণ গোটা বিমানবন্দরটাই সমুদ্রে ভাসমান। জাপানের সেই আশ্চর্য বিমানবন্দর দিয়ে অন্তত দু-আড়াই কোটি মানুষ যাতায়াত করেন প্রতিদিন। অথচ প্রতি বছর অন্তত কয়েক ফুট করে সমুদ্রের নিচে ডুবে যাচ্ছে বিমানবন্দরটি। আগামী কয়েক বছরে ক্রমশ যে জলের নিচে হারিয়ে যেতে পারে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে বানিয়ে তোলা এই কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেই আশঙ্কা কিন্তু খুব একটা অমূলক নয়।

তার পরেও প্রতিদিন বিমান এসে দাঁড়ায় জাপানের ওসাকা উপসাগরের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নতুন নতুন দেশ, নতুন নতুন রাজ্যের উদ্দেশে উড়ে যায় উড়োজাহাজ। জাপানের বৃহত্তর ওসাকা এলাকার হোনশু উপকূলের কাছেই তৈরি হয়েছিল বিমানবন্দরটি। কাঙ্কুজিমা নামে একটি দ্বীপকে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে তার উপরে বানানো হয়েছিল বিমানবন্দরটি। প্রায় দশ লক্ষ কর্মীর পরিশ্রমে তৈরি হয়েছিল কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। শুধু কি রানওয়ে? জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানপত্তর থেকে শুরু করে দুর্দান্ত সব রেস্তরাঁ, কী নেই সেই বিমানবন্দরে?

আরও পড়ুন: বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে! আদানির জল থইথই বিমানবন্দরে কী পাচ্ছেন যাত্রীরা?

প্রতিটি বিমানবন্দর বিল্ডিংয়ের জন্য দ্বীপটি দুটি এলাকায় বিভিক্ত করা হয়েছিল। একটি টার্মিনাল এক এবং অপরটি টার্মিনাল দুই। এক নম্বর টার্মিনালটি ডিজাইন করেছিলেন ইতালীয় স্থপতি রেনজো পিয়ানো। আন্তর্জাতিক ও ডোমেস্টিক উড়ান- দু'ই ধরনের বিমান ওঠানামারই জায়গা রয়েছে এক নম্বর টার্মিনালে। পৃথিবীর দীর্ঘতম এয়ারপোর্ট টার্মিনালটি কিন্তু রয়েছে এই কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তবে দ্বিতীয় টার্মিনালটি একেবারেই ডোমেস্টিক ফ্লাইটের জন্য।

Japan Built A $20 Million Airport In The Ocean, But It Is Sinking

১৯৪৪ নাগাদ উদ্বোধন হয়েছিল এই এই কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তার পর থেকে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিমানবন্দরটি। এখনও প্রতিদিন প্রায় কয়েক কোটি যাত্রী নিয়মিত ব্যবহার করেন বিমানবন্দরটিকে। বলাই বাহুল্য বিমানবন্দর হিসেবে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে সেটি। তবে তার আড়ালেই যে নয়া আশঙ্কা, নয়া ভয় প্রতিদিন একটু একটু করে গ্রাস করছে কানসাই বিমানবন্দরকে, তা অস্বীকার করার জো নেই।

Japan Built A $20 Million Airport In The Ocean, But It Is Sinking

ইঞ্জিনিয়াররা সেই আশঙ্কা করেছিলেন প্রথম থেকেই। যতই বিমানবন্দর তৈরির করার জন্য কৃত্রিম ভাবে দ্বীপ তৈরি করা হোক না কেন, প্রতিদিন একটু একটু করে সমুদ্রের গহীনে ডুবে যাচ্ছে কানসাই বিমানবন্দর। তৈরি হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩৪ ফুট সমুদ্রের নিচে ডুবে গিয়েছে বিমানবন্দর। এমন পূর্বাভাস আগেই ছিল। তবে ২৫ ফুট পর্যন্ত ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে সেই আশঙ্কাকেও ভয় দেখিয়ে আরও বেশি জলের নিচে তলিয়ে গিয়েছে বিমানবন্দরটি।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫৬ সালের মধ্যে পুরোপুরি মিলিয়ে যেতে চলেছে আস্ত বিমানবন্দরটিই। বিশেষজ্ঞেরা জানান, কৃত্রিম দ্বীপটির ওজন ও বিমানবন্দরভবনের ওজন সমুদ্রতলের পলিকে ক্রমশ সংকুচিক করছে। যার ফলে ক্রমশ জলের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দরটি। টার্মিনালগুলিকে রক্ষা করার জন্য সামুদ্রিক দেওয়াল (সি-ওয়াল) বাড়ানোর জন্য খরচ করা হয়েছিল আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বরং ক্রমশ এক পা এক পা করে ধ্বংসের দিকে পা রাখছে বিমানবন্দরটি।

আরও পড়ুন: ১৮ বছর ধরে বাস বিমানবন্দরেই! বাস্তবের ‘টার্মিনাল’ ম্যানের মৃত্যু অবাক করছে বিশ্বকে

স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটি নিয়ে বিতর্কে পড়েছেন কানসাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এক সময় ওসাকাকে গোটা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল বিমানবন্দরটি। ওসাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিড় নিয়ন্ত্রণেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল বিমানবন্দরটি। তবে আর একশো বছরে সে সবই ইতিহাস। এই কানসাই বিমানবন্দর থাকবে শুধু স্মৃতিতে, আর তার ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকবে অতল সমুদ্রের নিচে। আপাতত তার জন্যই দিন গুনছে জাপান।

More Articles