চোখ খুলতেই সোনার পাহাড়! মায়াবী এই গ্রামে পা রাখলেই উধাও দুশ্চিন্তা

Jhandi: সকালে বরফের উপর সূর্যের আলো চোখের সামনে তুলে ধরবে এক অপার্থিব ঐশ্বর্য। যাঁরা পাখি দেখতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এ জায়গা স্বর্গরাজ্য।

সকাল বেলা চোখ কচলে উঠতে না উঠতে জানলার কাচে হেলান দিয়ে যদি এসে দাঁড়ায় আস্ত একটা পাহাড়। কেমন হয় বলুন তো! যেখানে শহরের ভিড়, অফিসের দশটা-পাঁচটার চোখরাঙানি নেই। এখানে রাজা একজনই। তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘা। আপন মর্জির মালিক। ইচ্ছা হলে সাক্ষাৎ দেবেন, উজার করে দেবেন নিজের সমস্ত রং-রূপ। তখন সকলের সামনে ভেসে উঠবেন শায়িত বুদ্ধদেব। সেই মোহনীয় দৃশ্যের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়, ছোট হয়ে আসে মানুষ। নতজানু হতে ইচ্ছা হয় ওই মৌনমহানের কাছে।

আরও পড়ুন: তিব্বতে নয়, এ দেশেও রয়েছে অন্য মানস! গেলেই আয়ু দ্বিগুণ?

এমন দৃশ্যে যদি ঘুম ভাঙাতে চান, তাহলে হাতে কদিনের ছুটি আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরেই আসুন ঝান্ডি থেকে। ছোট্ট এক শৈলগ্রাম ঝান্ডি। শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেনে উঠে এক ঘুম দিতে না দিতেই এসে দাঁড়াবে এনজেপি। এনজেপি ছাড়াতে না ছাড়াতেই পথ যেন সবুজ মায়ার মোড়া। সেই রাস্তা ধরেই আপনাকে ট্রেন নামিয়ে দেবে নিউ মাল জংশনে। কালিম্পং জেলার গোরুবাথান ব্লকে যেতে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি স্টেশন। সেখান থেকে গাড়িতে উঠে পড়ুন ঝান্ডির উদ্দেশ্যে। আপনার সঙ্গেই হয়তো গাড়িতে যাচ্ছে আস্ত একটা সব্জি বাজার, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, আস্ত একটা গ্যাস সিলিন্ডার। অবাক হবেন না মোটেই। কারণ এই শৈলগ্রাম ঝান্ডি থেকে গোরুবাথান বেশ অনেকখানি পথ। পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথ বেশ দুর্গমও। ফলে যখনই স্টেশন থেকে পর্যটক তুলে নিয়ে গ্রামে পৌঁছয় গাড়ি, ভর্তি করে নিয়ে যায় সব্জি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

ঝান্ডি জায়গাটা ডুয়ার্স অঞ্চলে হলেও এখান থেকে স্পষ্ট ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। চারদিকে পাইনের জঙ্গল, ফাঁক গলে পড়ছে রোদ্দুর। নাম না জানা সব জংলি ফুলের ঝাঁক মাথা নাড়িয়ে স্বাগত জানাবে আপনাকে। ডাক শুনিয়ে যাবে পাখির ঝাঁক। চড়াই উৎরাই পথ ধরে পৌঁছে যাবে ঝান্ডি ইকোহাটে। গ্রামের বাসিন্দারা মিলে তৈরি করেছেন সমবায় প্রথায় একটি পর্যটন কুটির। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছোটো ছোটো কটেজ সব, কাচের জানলা। সেই জানলা দিয়েই ধরা দেবে সোনার পাহাড়। আশপাশটা জঙ্গলে মোড়া। ওই গ্রামের সদস্যরাই আপনার জন্য় সাজিয়ে আনবে খাবার, হাতে তুলে দেবে পানীয় জল। রাত বাড়লে আগুন উস্কে দেবে বন ফায়ারের। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, সব চেয়ে ভালো সময় ঝান্ডিতে যাওয়ার জন্য। কারণ এ সময়টা অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। বর্ষাকালে তার অন্যরূপ, তবে অন্যান্য় সব জায়গার মতোই জোঁকের উৎপাত এখানেও কম নেই।

তবে হলফ করে বলা যায়, সেই সমস্ত উপদ্রবের মধ্যে দিয়ে শেষ কথা বলবে এখানকার প্রকৃতি। সকালে বরফের উপর সূর্যের আলো চোখের সামনে তুলে ধরবে এক অপার্থিব ঐশ্বর্য। যাঁরা পাখি দেখতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এ জায়গা স্বর্গরাজ্য। আশপাশ ঘুরে দেখার পাশাপাশি সাইটসিনে বেরিয়ে পড়তে পারেন লাভা, লোলেগাঁও বা রিষভ থেকে। কোলাখাম হয়ে ঘুরে আসুন ছাঙ্গে ফলস। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে অনেক উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আশ্চর্য এক ঝর্না। তবে ছাঙ্গে পর্যন্ত পৌঁছতে বেশ কিছুটা পথ ট্রেক করে নামতে হবে আপনাকে।

আরও পড়ুন:দুদিনের ছুটিতে জল-জঙ্গল-পাহাড় একসঙ্গে! নতুন বছরে ঘুরে আসুন এই জায়গা থেকে

বেশ কয়েকটা দিন ঝান্ডিতে কাটিয়ে ফেরবার পথে দেখে আসুন ঝালং, বিন্দু। চলে যান সামসিং এবং সুনতালেখোলা থেকে। কাছেই রয়েছে লালিগুরাস নামে দুর্দান্ত একটি ভিউপয়েন্ট। চট করে ঘুরে নিন সেটাও। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম পাহাড়ি স্বাদ পেতে চলে আসুন কালিম্পংয়ের এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে। যেখানে এসে ভুলে যেতে পারেন যাবতীয় উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা। জোর করে ভুলতে হবে না, পাহাড় আপন ম্যাজিকে আপনার থেকে ছিনিয়ে নেবে সেসব। পাহাড়ের কাছে গিয়ে একবার দেখুন, নিজেকে কেমন তুচ্ছ, ছোট মনে হয় এই এত বড় প্রকৃতির কাছে। সত্যিই কি আমরা তা নই! রোজের এই দিনগত পাপক্ষয়ের খোলসে পড়ে যে সত্তা হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাঁকে খুঁজে পেতে কটা দিন কাটিয়ে যেতেই পারেন এই ছোট্ট এই পাহাড়ি গ্রামে।

More Articles