অসুখী সময়ে তাঁকেই মনে পড়ে, কেন আজও ব্যতিক্রম মানে জ্যোতি বসু
অত্যন্ত পোড়খাওয়া বিরোধী রাজনীতিক হিসেবেও জ্যোতিবাবু যতখানি সফল, প্রশাসনের দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পিত হলেও, ঠিক একই রকম সাফল্যের পরিচয় তিনি দিতে সমর্থ্য হয়েছেন।
রাজনীতিতে জ্যোতি বসু ছিলেন এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। সাধারণ ভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ঘিরে একটি চলতি বিশেষণ সাম্প্রতিককালে খুব ব্যবহার করা হয় ,'বর্ণময় চরিত্রের মানুষ' । সেই বিশেষণটি কিন্তু কখনো কোনো অবস্থাতেই জ্যোতিবাবু সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। জ্যোতিবাবুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে লড়াই ছিল লড়াইয়ের বিভিন্ন ওঠানামা ছিল ।ছয়ের দশকের শেষ দিকে সামান্য সময়ের জন্য প্রশাসনিক দায়িত্বের কিছুটা ভূমিকা তিনি পালন করেছিলেন। সেই সময়ের ভূমিকা থেকেই বোঝা গিয়েছিল ,অত্যন্ত পোড়খাওয়া বিরোধী রাজনীতিক হিসেবেও জ্যোতিবাবু যতখানি সফল, প্রশাসনের দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পিত হলেও, ঠিক একই রকম সাফল্যের পরিচয় তিনি দিতে সমর্থ্য হবেন।
তারপর '৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত আইনসভার বাইরে থেকে ,মাঠে ময়দানে বিরোধী নেতা হিসেবে, আমরা জ্যোতি বাবুকে পেয়েছি। সাতের দশকের প্রথম দিক আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস, জরুরি অবস্থা ,শ্রেণি সহযোগিতাবাদী 'কমিউনিস্ট' নামধারী সিপিআই-এর ভূমিকা, জ্যোতিবাবুর একটা সময়ের রাজনৈতিক সতীর্থদের আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা, আর তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজের আদর্শে স্থিত থেকে, মানুষের স্বার্থে কাজে নিজের জীবনকে বাজি রেখে জ্যোতিবাবু লড়াই আমরা দেখেছি।
মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে যাঁরা দেখেছেন, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মানুষ, যাঁরা বিরোধী নেতা হিসেবে জ্যোতিবাবুর সেই উজ্জ্বল ভূমিকা দেখেননি ,তাঁদের পক্ষে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করে, ভারতের এই আধা সামন্ততান্ত্রিক পরিকাঠামোর মধ্যে দাঁড়িয়ে ,মানুষের স্বার্থের পক্ষে জ্যোতিবাবুর লড়াইয়ের যে বিভিন্ন পর্যায়, সেগুলিকে বোঝা, উপলব্ধি করা খুব সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। কারণ নতুন প্রজন্ম, প্রশাসক জ্যোতিবাবুকে দেখেছে। যে জ্যোতিবাবুকে ঘিরে প্রচারমাধ্যমের একটা বড় অংশ নানা ধরনের অপপ্রচারের ফানুস এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছিল যেখান থেকে রাজনৈতিক জ্যোতিবাবুর দক্ষতার বিভিন্ন পর্যায়কে সব সময় সঠিক ভাবে বুঝে ওঠা নতুন প্রজন্মের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না।
তার পাশাপাশি আর একটা কথা অত্যন্ত জড়ের সঙ্গে বলতে হয় যে, জ্যোতিবাবুর রেকর্ড সৃষ্টিকারী সময়ের মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রটি এতটাই প্রসারিত ছিল, যেটা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নতুন প্রজন্মের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভবপর নয়।
আজ যখন জাতীয় স্তরেই হোক ,রাজ্যস্তরেই হোক ,প্রথাগতভাবে জরুরি অবস্থা জারি না করেই, অঘোষিত জরুরি অবস্থার ভেতর দিয়ে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ,সামাজিক প্রচার মাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে বসে যদি কেউ শাসকের সমালোচনা করে, তাহলে তাঁর ঘটিবাটি শুধু নয়, ধোপা- নাপিত পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম করছে শাসকেরা যৌথভাবে, সেখানে বিরোধী রাজনীতিকরা নিজের প্রেক্ষিত বজায় রেখে কিভাবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতিবাবুর সমালোচনা, বহুক্ষেত্রে রুচি বহির্ভূত, ব্যক্তিগত স্তরে সমালোচনা করতে পেরেছিল ,সেটা আজকের দিনের নতুন প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবেন না ।
সেই সময়ে কিন্তু জ্যোতিবাবুর প্রতি ওই ধরনের রুচি বহির্ভূত সমালোচনার জবাবে প্রশাসন কখনোই সমালোচকের বিরুদ্ধে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে লেলিয়ে দেয়নি। এইখানেই জ্যোতিবাবুর সঙ্গে তাঁর সমস্ত পূর্বসূরী এবং সমস্ত উত্তরসূরীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তমূলক পার্থক্য। জরুরি অবস্থা যখন বাংলা যুবসমাজের মেরুদন্ডটাকেই ভেঙে দিয়েছিল, সেই রকম একটা সময়ে রাজ্য প্রশাসনের হাল ধরেছিলেন জ্যোতিবাবু।
প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার অল্প দিন আগেই কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেসি মন্ত্রিসভা গঠিত হয় মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে। জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনে জয়প্রকাশ নারায়ণ যেভাবে আরএসএসকে সঙ্গে নিয়ে গোটা আন্দোলনটি পরিচালনা করেছিলেন, সেই বিষয়টি কিন্তু সি পি আই(এম) কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, জ্যোতিবাবু তো পারেনই নি। তাই পশ্চিমবঙ্গে জরুরি অবস্থা বিরোধী যে সমস্ত আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তার কোন আন্দোলনে, ই কোনো পর্যায় কিন্তু হরিপদ ভারতীর মতো প্রত্যক্ষভাবে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত লোকজনদের নিয়ে জ্যোতি বাবু বা সি পি আই(এম) আন্দোলন করেনি।
জনতা পার্টির ভেতরে আরএসএসের যে শক্তি ছিল, তারা কিন্তু কেন্দ্রে মোরারজি দেশাই সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বামফ্রন্ট সরকার এবং জ্যোতিবাবুকে বেকায়দায় ফেলবার নানা ধরনের চেষ্টা করে। সাধারণ ভাবে অনেকেরই ধারণা, প্রথম প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালের বেশ অনেকটা পর্যায় কেন্দ্রে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন বন্ধু সরকার থাকার দরুন বামফ্রন্ট সরকার তাঁদের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে একটা মসৃণ পথ দিয়ে হেঁটেছিল।
প্রধানমন্ত্রী দেশাই অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি হলেও জরুরি অবস্থা ইত্যাদি সময়কালের অভিজ্ঞতা নিরিখে ,নিজের সরকারকে টিকিয়ে রাখবার প্রশ্নে তীব্র কমিউনিস্ট বিদ্বেষী হয়েও জ্যোতি বসু বা তাঁর সরকারের প্রতি তিনি খুব একটা বৈরী মনোভাব নিয়ে কখনো চলে নি। কিন্তু তাঁর সরকারের ভেতরে বা সরকারের সমর্থক দের মধ্যে আরএসএস এবং সাবেক জনসংঘের যে প্রভাব ছিল, সেই শক্তি প্রথম থেকেই কমিউনিস্ট জ্যোতি বসুকে বেকায়দায় ফেলবার জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করে গেছে। একাংশ মনে করে, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই মরিচঝাঁপিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। পুলিশকে প্ররোচিত করা এবং নানা ভাবে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী দেশাইকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবার কাজটি আরএসএস জোরদার ভাবে করেছে সেই সময়ে।
এই কাজে জনতা পার্টির ভেতরে যাঁরা সাবেক কংগ্রেসি ( আদি কংগ্রেস) ছিলেন নীতিগতভাবে তাঁরা মানুষের স্বার্থের প্রশ্নে মরিচঝাঁপি ঘিরে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী দেশাইকে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বা জ্যোতিবাবুর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করবার চেষ্টা সেভাবে না করলেও বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে আরএসএস-এর যে অংশ জনতা দলের মধ্যে ঢুকে, সেই সময়ের কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হয়েছিল,তারা বামফ্রন্ট সরকারকে হেনস্থা করবার এবং ক্ষমতাকৃত করবার চেষ্টার ত্রুটি করেনি।
এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আরএসএস নেতা তথা সাবেক জনসংঘের বিশিষ্ট ব্যক্তি,ত্ব সেই সময়ে জনতা দলের বিধায়ক হরিপদ ভারতী। হরিপদ ভারতীর এই কাজকর্ম কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বুকে আরএসএসকে খানিকটা ব্রাত্য রেখেই বামেদের সঙ্গে জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন আদৌ পছন্দ করেননি
১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বামফ্রন্টের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের মতবিরোধ ঘটেছিল জ্যোতিবাবু প্রমোদ দাশগুপ্তদের। তাই বলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশ্নে হরিপদ ভারতী যে ভাবে জ্যোতি বসুকে হেনস্তা করতে চেয়েছিলেন নিজের দলের প্রধানমন্ত্রী র মাধ্যমে, সেই কাজে কিন্তু প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের এতটুকু সমর্থন ছিল না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন এই যে, মরিচঝাঁপি ঘিরে আরএসএস প্রধানমন্ত্রী মোরারজির উপরে যতই চাপ সৃষ্টি করুক না কেন, দেশাই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে, চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতিবাবুর অবস্থানকে পূর্ণমাত্রায় সমর্থন জানিয়েছিলেন। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সফরকালে দেশাইয়ের কলকাতা সফরের সফরকালে, রাজভবনে এক নৈশভোজে রাজ্য জনতা দলের ভেতরে আরএসএস-এর যে অংশ ছিল, তারা নানা ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে প্রলোচিত করবার চেষ্টা করেছিল জ্যোতিবাবুর সামনেই। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোনো অবস্থাতেই আরএসএসের সেই প্রলোচনায় কোন অবস্থাতেই পা দেননি।
আরএসএস দেশাই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র করেছিল দ্বৈত সদস্য পদের ইস্যুতে ।ইন্দিরা গান্ধী আড়াল থেকে এই ষড়যন্ত্রে মদত ও দিয়েছিলেন।এই সময়ের সঙ্কটকে ভারতীয় রাজনীতিতে ' জুলাই সংকট ' বলা হয়। সেই' জুলাই সংকট' থেকে দেশের প্রথম অ কংগ্রেসি মন্ত্রিসভা উত্তোরিত হতে পারত জ্যোতিবাবু যদি সেই সময় দেশে থাকতেন-- এইকথা তীব্র জ্যোতিবাবুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধী হয়েও প্রফুল্ল চন্দ্র সেন বার বার স্বীকার করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই জুলাই সংকট যখন খুব তীব্র হয়ে ওঠে জ্যোতিবাবু সেই সময় ইংল্যান্ডে ছিলেন। ১৯৭৯ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের মত ভালো ছিল না ।ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশাই এই সংকট থেকে নিজের মন্ত্রিসভাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে জ্যোতিবাবুর সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ঠিক সময় মত যোগাযোগ করতে পারেননি।
অনেকেরই এটা খুব গভীর বিশ্বাসের জায়গা যে, দেশাই সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য আরএসএস দ্বৈত সদস্যপদ ঘিরে যে ইচ্ছাকৃত সংকট তৈরি করেছিল, যে সংকট তৈরির পেছনে ইন্দিরা গান্ধীর একটা প্ররোচনা ছিল ,সেই সময়কালে জ্যোতিবাবু যদি দেশে থাকতেন ,তিনি নিজের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ,বাস্তববোধ, যোগাযোগ-- সমস্ত কিছুর ভেতর দিয়ে ওই জুলাই সংকট থেকে দেশাই মন্ত্রিসভা কে বাঁচিয়ে, সেই সরকারকে টিকিয়ে দিতে পারতেন ।
এই জুলাই সংকট ঘিরে জ্যোতি বাবুর ভূমিকা নিয়ে পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রীর পর থেকে অবসর গ্রহণের পরেও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মোরারজি দেশাই ওই সংকটকালে জ্যোতিবাবুর দেশে না থাকার জনিত দুঃখের কথা যথেষ্ট জোরের সঙ্গে বলেছিলেন। এই জুলাই সংকটের কথা এখানে এত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো এই কারণে যে ,প্রশাসক জ্যোতিবাবু, রাজনৈতিক জ্যোতিবাবু, ধর্মনিরপেক্ষ জ্যোতি বাবু ,গণতান্ত্রিক জ্যোতিবাবু- এই সমস্ত পর্যায়ে গুলি বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে, আমরা বহুবার আলোচনা করেছি ,নানান প্রেক্ষিতে আলোচনা করেছি, বিভিন্ন আলোচক জ্যোতিবাবুর এইসব নানারঙেরর বৈশিষ্ট্যকে সমাজের কাছে , বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু নয়ের দশকে জ্যোতি বাবুর নাম দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমস্ত অ বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি একযোগে তুলে ধরার আগে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সামান্য সময় পরে, দেশের প্রথম অ কংগ্রেসি সরকারকে টিকিয়ে রাখবার প্রশ্নে , সাম্প্রদায়িক আরএসএসের হাত থেকে, সাবেক জনসংঘের হাত থেকে, সেই সরকারকে রক্ষা করবার প্রশ্নে, তখনো জ্যোতিবাবুর কতখানি রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক মহল অনুভব করেছিল, সেটা জানা আমাদের পক্ষে বিশেষ করে জরুরি।
প্রশাসনিক জ্যোতিবাবু সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তার ব্যাপ্তি গড়ে তোলবার ক্ষেত্রে প্রথম থেকে কিভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিলেন আজকের দিনের রাজনীতির প্রেক্ষিতে ইতিহাসের প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সি পি আই(এমে) র বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম জ্যোতিবাবু সম্পর্কে মূল্যায়ন করে অত্যন্ত যথার্থভাবেই বলেছেন ; ভারতের মুষ্টিমেয় রাজনৈতিকদের মধ্যে অন্যতম ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হলেন জ্যোতিবাবু, যিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিন থেকে ,জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত, নিজের রাজনৈতিক বোধ থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরেন নি। মানুষের স্বার্থের বাইরে নিজের রাজনৈতিক একটি সিদ্ধান্ত পৃথকভাবে তিনি নেননি।
জ্যোতিবাবু তাই বলে পুঁথিসর্বস্ব কমিউনিস্ট ছিলেন না। মানুষের স্বার্থে ,আদর্শ, চিন্তাধারা- সমস্ত কিছুকে সময়োপযোগী ভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে, কেবলমাত্র বাংলার রাজনীতিতেই নয় বা ভারতীয় রাজনীতিতেই নয় ।সামগ্রিকভাবে রাজনীতি ,ইতিহাসে জ্যোতি বসু এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। আর এই কারণেই আজকের বুর্জোয়া রাজনীতিবিদদেরা , যারা আজ এই দল, কাল এই দল করছেন, তাদের তথাকথিত বর্ণময়তার সঙ্গে জ্যোতি বাবুকে কখনো মেলানো যায় না।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)